ফের অনিশ্চয়তার মেঘ রাজ্যের ডিএ মামলায়!
আড়াই বছর কেটে গিয়েছে। অন্তত ১৭ বার পিছিয়েছে শুনানি। কখনও আদালতের ব্যস্ততা, কখনও রাজ্য সরকারের আইনজীবীদের অনুরোধে— বারবার পিছিয়ে গিয়েছে বহু প্রতীক্ষিত রাজ্যের মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) সংক্রান্ত মামলার শুনানি। এইবার নতুন মোড়— ফের বদলে গেল এজলাস, অর্থাৎ মামলাটি চলে গেল সুপ্রিম কোর্টের নতুন বেঞ্চে। ফলে ১৪ মে (বুধবার) নির্ধারিত শুনানি নিয়েও তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
সুপ্রিম কোর্টের সর্বশেষ তালিকায় দেখা গিয়েছে, বিচারপতি সঞ্জয় করোল এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রর বেঞ্চে মামলাটি উঠছে। কিন্তু সমস্যা হল, ডিএ মামলা রাখা হয়েছে তালিকার প্রায় শেষ দিকে— ৪০ নম্বরে। এমনটা হলে, শুনানি ফের পিছিয়ে যেতে পারে, এমনই আশঙ্কা করছেন মামলাকারীরা। যদিও রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের আইনজীবীদের অনেকে আশাবাদী যে, নির্ধারিত দিনেই হবে শুনানি।
২০২২ সালের ২০ মে কলকাতা হাই কোর্ট রাজ্য সরকারকে কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়ার নির্দেশ দেয়। সেই রায়ে জয়ী হয়েছিল রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের কনফেডারেশন, ইউনিটি ফোরাম এবং সরকারি কর্মচারী পরিষদ। হাই কোর্ট বলেছিল, কেন্দ্রের মতোই রাজ্য সরকারি কর্মীদের ৩১ শতাংশ হারে ডিএ দিতে হবে। কিন্তু সেই রায় মানতে রাজি হয়নি রাজ্য সরকার। হাই কোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ২০২২ সালের ৩ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টে যায় তারা। এরপর ২৮ নভেম্বর মামলার প্রথম শুনানি হয়।
মামলার সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি ঘটে গত সপ্তাহে। ৮ মে মামলাটি ছিল সুপ্রিম কোর্টের ৫ নম্বর কোর্টে বিচারপতি বিক্রম নাথ, সঞ্জয় করোল এবং সন্দীপ মেহতার বেঞ্চে। তালিকায় ছিল একেবারে উপরের দিকে। কিন্তু রাজ্যের পক্ষের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি আদালতে জানান, তিনি অন্য একটি মামলার জন্য ব্যস্ত, ফলে শুনানির জন্য এক সপ্তাহ সময় চান। আদালত সেই আর্জি মেনে নিলে ১৪ মে-তে শুনানি পিছিয়ে দেওয়া হয়।
তবে তার আগেই, দ্বিতীয়বারের মতো এই মামলার এজলাস বদলে যায়। ৫ নম্বর কোর্ট থেকে এটি যায় ১৫ নম্বর কোর্টে। নতুন বেঞ্চে যদিও বিচারপতি করোলই রয়েছেন, যিনি আগের বেঞ্চেও ছিলেন। এ নিয়েই আইনজীবী বিক্রম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শুধু বেঞ্চ বদলেছে, বিচারপতি করোল আগেও ছিলেন, এখনও আছেন। তাই শুনানি হবে বলেই আশা করছি।’’
আইনজীবী ফিরদৌস শামিমের কথাতেও আশাবাদের সুর, ‘‘যেহেতু আগেই শুনানির জন্য বহু বার সময় নেওয়া হয়েছে এবং সর্বশেষ পিছিয়ে যাওয়ার বিরোধিতাও আমরা করেছি, তাই এ বার আদালত নিশ্চয়ই দেরি করবে না।’’
মামলার দীর্ঘসূত্রতা এবং বারবার পিছিয়ে যাওয়া নিয়ে ইতিমধ্যেই ক্ষোভ বাড়ছে সরকারি কর্মীদের একাংশের মধ্যে। তাঁরা আশা করছেন, এবার অন্তত সুপ্রিম কোর্টে শুনানি শুরু হবে, মিলবে চূড়ান্ত রায়— যা তাঁদের অধিকার আদায়ের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

