‘ব্রহ্মস’ নয়, কেন?
মাত্র ২৫ মিনিট। তাতেই পাকিস্তানের নয়টি জঙ্গিঘাঁটি ধূলিসাৎ। পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার ১৫ দিনের মাথায় ভারত চালায় পাল্টা ‘অপারেশন সিঁদুর’। মধ্যরাতে রাফাল যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়া হয় দুটি মারাত্মক অস্ত্র— স্ক্যাল্প এবং হ্যামার। অনেকের মনেই প্রশ্ন: এত উন্নত অস্ত্রভাণ্ডারে থাকা সত্ত্বেও কেন বেছে নেওয়া হল এই দুই অস্ত্র? ‘ব্রহ্মস’-এর মতো ভারী অস্ত্র নয় কেন?
রাতের অন্ধকারে যখন প্রায় গোটা উপমহাদেশ ঘুমিয়ে, তখন পাকিস্তানের আকাশে গর্জে ওঠে ভারতের রাফাল স্কোয়াড্রন। একের পর এক নিশানা নিখুঁতভাবে ভেদ করে তারা। এই হামলা ছিল কেবল বিমানবাহিনীর একক নয়, সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর সহায়তায় এটি ছিল এক যৌথ অভিযান। মূল লক্ষ্য ছিল একটাই— সাধারণ মানুষের ক্ষতি না করে জঙ্গিঘাঁটিগুলিকে নির্মূল করা।
তাই বেছে নেওয়া হয় স্ক্যাল্প ও হ্যামারকে— অত্যাধুনিক, দূরপাল্লার, নিখুঁতভাবে লক্ষ্যভেদী অস্ত্র।
স্ক্যাল্প, যার আরেক নাম স্টর্ম শ্যাডো, এমন একটি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, যার পাল্লা প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার। এর সবচেয়ে বড় শক্তি— নিখুঁতভাবে টার্গেট চিহ্নিত করে আঘাত হানতে পারা। এর গোপন চালনাপদ্ধতি এবং নিচু দিয়ে উড়তে পারার ক্ষমতার ফলে শত্রুপক্ষের রেডারে ধরা পড়া প্রায় অসম্ভব। এমনকি ইলেকট্রনিক জ্যামিং-ও একে আটকাতে পারে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ক্ষেপণাস্ত্র রাতে বা খারাপ আবহাওয়াতেও কার্যকর। স্ক্যাল্পে থাকে ইনফ্রারেড সিকার, যা নিজেই লক্ষ্য চিহ্নিত করে নিশ্চিত করে নেয় তা ধ্বংস করা দরকার কি না। তাই collateral damage বা আশপাশের ক্ষতি প্রায় হয় না বললেই চলে।
অন্যদিকে, হ্যামার— সম্পূর্ণ নামে Highly Agile Modular Munition Extended Range— হল এক ধরনের গ্লাইড বোমা। এটি ফ্রান্সে তৈরি এবং ৭০ কিলোমিটার দূরত্বে নিখুঁতভাবে আঘাত হানতে পারে। শক্ত কংক্রিটের বাঙ্কার হোক বা বহুতল ভবন, হ্যামার সবই ভেদ করে শেষ করে দেয় লক্ষ্য। এর সাফল্যের মূল চাবিকাঠি: GPS, লেজার টার্গেটিং এবং ইনফ্রারেড নির্দেশনার সমন্বয়।
এটি খুব নিচু উচ্চতা থেকে রাফালের মাধ্যমে ছোড়া যায়, এবং স্থির বা চলমান লক্ষ্য উভয়ের বিরুদ্ধেই কার্যকর।
২০১৯ সালের বালাকোট হামলায় ভারত ব্যবহার করেছিল মিরাজ ২০০০ বিমান। তবে এবার শুধু রাফাল আর এই দুই অস্ত্র— স্ক্যাল্প ও হ্যামার— দিয়েই ভারত বুঝিয়ে দিল, প্রযুক্তির দিক থেকে তারা আর পিছিয়ে নেই।
এতকিছুর পরেও সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়— এত বড় অভিযানেও ভারতের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, এই আক্রমণ সাধারণ নাগরিক নয়, জঙ্গিদের উদ্দেশেই। তাই অস্ত্রের নির্বাচনে ছিল লক্ষ্যভেদে নিখুঁততা, মানবিকতা এবং কৌশলগত প্রজ্ঞা।
এই দুই অস্ত্রের ‘ক্লিন হিট’ আজ শুধু সামরিক শক্তির প্রদর্শন নয়, এক নতুন কৌশলগত দৃষ্টান্ত।
আপনি কি মনে করেন, ভবিষ্যতের ভারতীয় সামরিক অভিযানে এমন নিখুঁত অস্ত্র ব্যবহারের ঝোঁক আরও বাড়বে?
অপারেশন সিঁদুর: ভারতীয় প্রতিআক্রমণে মাসুদ আজ়হারের বোন-সহ পরিবারের ১০ জন নিহত

