পহেলগাঁও কাণ্ডের রেশ!
পাকিস্তান-ভারত সম্পর্ক ফের উত্তপ্ত। পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার জেরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক এমনিতেই প্রায় স্তব্ধ হয়ে পড়েছিল। সেই উত্তেজনারই নতুন মাত্রা যোগ করল ইসলামাবাদের সিদ্ধান্ত—ভারতের পতাকা লাগানো কোনও জাহাজ আর পাকিস্তানের বন্দরে ঢুকতে পারবে না।
শনিবার রাতেই পাকিস্তানের সমুদ্র বিষয়ক মন্ত্রকের বন্দর ও জাহাজ চলাচল বিভাগ এক বিবৃতিতে জানিয়ে দেয়, ভারতের সঙ্গে সামুদ্রিক যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ করছে তারা। এর কয়েক ঘণ্টা আগেই ভারত সরকার ঘোষণা করেছিল, সরাসরি বা ঘুরপথে, পাকিস্তান থেকে কোনও পণ্য আর ভারতে আমদানি করা যাবে না।
এই ‘পাল্টা পদক্ষেপ’ যে ভারতের প্রতিক্রিয়ায় এসেছে, তা স্পষ্ট পাকিস্তানের বিবৃতি থেকেই। সেখানে বলা হয়েছে, ‘‘পড়শি দেশের সঙ্গে সাম্প্রতিক সমুদ্র পরিস্থিতি ও জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় পাকিস্তান এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ভারতের পতাকাধারী কোনও জাহাজ পাকিস্তানে ঢুকতে পারবে না এবং পাকিস্তানের জাহাজও ভারতের বন্দর ব্যবহার করবে না।’’
তবে কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম করা যেতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছে ইসলামাবাদ। বলেছে, বিশেষ কোনও ঘটনার ক্ষেত্রে পৃথকভাবে বিষয়টি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এই বিবৃতি এমন সময় এল, যখন মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেই নয়াদিল্লি জানিয়ে দেয়—পাকিস্তানের সঙ্গে সব রকম বাণিজ্যিক লেনদেন বন্ধ থাকবে। এমনকি, কোনও পার্সেল বা চিঠিও পাকিস্তান থেকে ভারতে প্রবেশ করতে পারবে না। বাণিজ্য মন্ত্রকের তরফে স্পষ্ট বলা হয়, পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে।
মূলত জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ভয়াবহ জঙ্গি হামলার জেরেই শুরু হয়েছে এই কূটনৈতিক টানাপড়েন। ওই ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ২৬ জন নিরীহ পর্যটকের। কেন্দ্রের দাবি, হামলার মূল হোতা পাকিস্তান-ঘনিষ্ঠ জঙ্গিগোষ্ঠী। এরপরই নয়াদিল্লি একাধিক কড়া পদক্ষেপ নেয়—বাণিজ্য বন্ধ থেকে শুরু করে সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত করা পর্যন্ত।
অন্যদিকে, পাকিস্তানও চুপ করে বসে নেই। তারা এর জবাবে ভারত থেকে আমদানি-রফতানি পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে আগেই। এবার ভারতের জলপথেও লাগাম টানল তারা।
এই অবস্থায় ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক আরও এক ধাপ তলানিতে পৌঁছল বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। একদিকে আমেরিকা-সহ আন্তর্জাতিক মহল সংযমের আহ্বান জানালেও, বাস্তবে পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে।
বাণিজ্যিক পরিসংখ্যান বলছে, ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ছিল এমনিতেই সীমিত। তবু সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলির প্রতীকী গুরুত্ব অনেক। কারণ, এতে বোঝা যাচ্ছে—উভয় দেশই আপস নয়, বরং শক্তি প্রদর্শনের পথে হাঁটতে চাইছে।
এই উত্তেজনার মধ্যে প্রশ্ন উঠছে—দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের এমন পারস্পরিক সংঘাত ভবিষ্যতে কোন দিকে মোড় নেবে? সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও শান্তিই বা কোথায় দাঁড়াবে? আপাতত উত্তর মিলছে না—শুধু শোনা যাচ্ছে, জাহাজের হর্ণ নয়, কূটনৈতিক সংঘাতের দামামা।
কাশ্মীরে টানা ৮ দিন সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন, পাঁচ জায়গায় গুলি পাক সেনার! পাল্টা জবাব দিল ভারতীয় সেনাও

