বামদুর্গে রামনবমী!
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘রেড করিডর’ বলেই পরিচিত সেই ক্যাম্পাসে এবার এক অন্য ছবি। বামপন্থার চেনা দেওয়ালচিত্রের পাশে ঝুলছে রামচন্দ্রের ছবি, আর তলায় লেখা ‘জয় শ্রীরাম’। এবিভিপির উদ্যোগে প্রথমবার যাদবপুরে উদ্যাপিত হল রামনবমী। আর এই ঘটনা ইতিমধ্যেই রাজনীতির উত্তাপ বাড়িয়েছে রাজ্যজুড়ে।
যাদবপুরের টেকনোলজি ভবনের ফটকে যেখানে সাধারণত দেখা যায় কার্ল মার্ক্স, লেনিন, মাওয়ের আদর্শের প্রতিচ্ছবি—সেই দেয়ালের পাশে এবারে জায়গা পেল রামনবমীর ফ্লেক্স। এবিভিপির দাবি, বহু দিনের পরিকল্পনা এবার সফল হল। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোনও অনুমতি ছিল না, তবুও রবিবার ক্লাস বন্ধ থাকার সুযোগে এবিভিপি কার্যত রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ নিয়েই এই কর্মসূচি সম্পন্ন করেছে।
এবিভিপির দক্ষিণবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক অনিরুদ্ধ সরকার বলেন, “গত বছর শোভাযাত্রা করতে গিয়ে বামেদের বাধার মুখে পড়েছিলাম। এবার প্রতিজ্ঞা ছিল, যা-ই হোক উদ্যাপন করবই। তাই করেছি। যদি ক্যাম্পাসে ইফতার পার্টি হয়, তবে রামনবমী কেন নয়?” তাঁর কথায়, এটি একটি আদর্শের লড়াই।
অন্যদিকে, এসএফআই নেত্রী কৌশিকী ভট্টাচার্যের মতে, “এটা ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উসকানি। যাদবপুরে সরস্বতী পুজো, দুর্গাপুজো হয়—তা নিয়ে কেউ আপত্তি করে না। কিন্তু রামনবমীর নামে ঘৃণা ছড়ানোর চেষ্টা হলে, ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া থাকবেই।”
এই প্রসঙ্গে রাজনৈতিক মহলের মতে, এবিভিপি যাদবপুরে যে রকমভাবে প্রভাব বিস্তার করছে, তাতে এটা শুধু ধর্মীয় নয়, স্পষ্ট রাজনৈতিক বার্তা। বিজেপির অনেকে এটিকে বলছেন “বাম দুর্গে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক”। এবিভিপি দাবি করেছে, শুধু ইঞ্জিনিয়ারিং নয়, সারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা তাদের পাশে।
রবিবার রামনবমী উদ্যাপন উপলক্ষে রাজ্যজুড়েই ছিল রাজনৈতিক তৎপরতা। কলকাতা থেকে খড়্গপুর, বীরভূম থেকে মালদহ—সব জায়গাতেই রামনবমীর মিছিল করেছে বিজেপি। নন্দীগ্রামে শুভেন্দু অধিকারী, নিউটাউনে স্কুটার চালিয়ে মিছিলে লকেট চট্টোপাধ্যায়, খড়্গপুরে দিলীপ ঘোষ—সবাই একসঙ্গে রাস্তায় নেমেছেন। পুলিশের সঙ্গে রুট নিয়ে বচসাও হয়েছে।
অন্যদিকে, তৃণমূলও রামনবমী পালন থেকে পিছিয়ে থাকেনি। সিউড়িতে শতাব্দী রায়, মালদহে কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী মিছিলে পা মিলিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, আবার শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তাও দিয়েছেন।
এই ধর্মীয় উৎসব ঘিরে উত্তেজনার আঁচ পেয়ে প্রশাসন ছিল পুরোপুরি সতর্ক। রাজ্যজুড়ে পুলিশের ছুটি বাতিল, নবান্ন খোলা রাখা—সবই ছিল অশান্তির সম্ভাবনা মাথায় রেখে। বামফ্রন্ট থেকে কংগ্রেস—সব দলই মানুষকে সম্প্রীতির পথে থাকার আবেদন জানিয়েছে।
রামনবমী উপলক্ষে ধর্ম আর রাজনীতির এই মিশ্রণ আরও একবার প্রমাণ করল, বাংলার রাজনীতি শুধু আদর্শে নয়, চিত্রনাট্যেও এখন চমকপ্রদ।
স্ট্রেস কমাতে ম্যাজিকের মতো কাজ করে মাসাজ, তবে সাবধানে নিতে হবে এই সিদ্ধান্ত

