Friday, April 18, 2025

চাকরি বাতিলের ধাক্কায় শিক্ষক সঙ্কট, রাজ্যের স্কুলগুলিতে অনিশ্চয়তা

Share

চাকরি বাতিলের ধাক্কায় শিক্ষক সঙ্কট!

সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায়ে রাজ্যের হাজার হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকার চাকরি বাতিল হয়ে যাওয়ায় গভীর সঙ্কটের মুখে পড়েছে স্কুল শিক্ষা ব্যবস্থা। বিশেষত উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে, যেখানে আগামী সোমবার থেকে তৃতীয় সেমিস্টারের ক্লাস শুরু হওয়ার কথা, সেই প্রক্রিয়া এখন গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে। শিক্ষক ঘাটতির কারণে কীভাবে পাঠদান চলবে, তা নিয়ে চিন্তিত রাজ্যের বহু স্কুল।

২৬ হাজার চাকরি বাতিল, রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থায় বড় ধাক্কা

২০১৬ সালের এসএসসি প্যানেলে থাকা প্রায় ২৬ হাজার (সঠিক সংখ্যা ২৫,৭৫৩) শিক্ষক ও শিক্ষিকার চাকরি বাতিল করেছে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চ। এই রায়ের ফলে রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষক সংকট আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। উচ্চ মাধ্যমিকের পাশাপাশি মাধ্যমিক স্তরের পাঠদানেও এর বড় প্রভাব পড়তে চলেছে।

শুধু বড় শহর নয়, গ্রামীণ ও মফস্বল এলাকার স্কুলগুলিও এই সংকটের মুখে পড়েছে। শিক্ষক কমে যাওয়ায় অনেক স্কুলে ক্লাস করানো সম্ভব হবে না বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।

স্কুলগুলিতে নেমে এসেছে অনিশ্চয়তা

রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের কথায় উঠে আসছে এই সমস্যা কতটা গভীর।

দমদমের শ্রী অরবিন্দ বিদ্যামন্দির-এর প্রধান শিক্ষক অসীমকুমার নন্দ জানিয়েছেন, তাঁদের স্কুলে তিনজন শিক্ষকের চাকরি বাতিল হয়েছে। তাঁরা রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং বাণিজ্য বিভাগে পড়াতেন। তিনি বলেন,
“আমরা চরম অসুবিধার মধ্যে পড়েছি। তবে আর্থিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও নিজেদের খরচে দ্রুত তিনজন শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করছি, যাতে পঠনপাঠন ব্যাহত না হয়।”

নারায়ণদাস বাঙুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় বড়ুয়া বলেন,
“যদি কোনও বিষয়ের শিক্ষকই না থাকেন, তাহলে একাদশ শ্রেণিতে সেই বিষয়ের জন্য ছাত্রছাত্রী ভর্তি নেবে কীভাবে? কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিকে তো ওই সব বিষয় পড়ানো বাধ্যতামূলক। এত শিক্ষক ছাঁটাই হয়ে যাওয়ায় আমরা বড় সমস্যায় পড়েছি।”

এদিকে দেগঙ্গার চৌরাসিয়া হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক শাহারিয়ার ইসলাম জানান, তাঁদের স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের পাঁচজন শিক্ষক চাকরি হারিয়েছেন। তিনি বলেন,
“পাশের স্কুল থেকেও শিক্ষক আনার সুযোগ নেই। কীভাবে ক্লাস শুরু করব, বুঝতে পারছি না।”

উচ্চ মাধ্যমিকের তৃতীয় সেমিস্টার নিয়ে অনিশ্চয়তা

উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ৪৬টি বিষয় পাঠ্যক্রমে রয়েছে, যার মধ্যে শুধুমাত্র ৩৪টি বিষয় সংসদের অনুমোদিত। বাকি বিষয়গুলোর পাঠদানের জন্য মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের ওপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু এবার এত বড় সংখ্যায় শিক্ষক ছাঁটাই হয়ে যাওয়ায় উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পাঠদানও চরম সংকটে পড়বে।

শিক্ষা সংসদের তরফে বলা হয়েছে, এই সংকটের সমাধান করতে তারা রাজ্য সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় সহায়তার জন্য আবেদন জানাবে।

শিক্ষকরা এখন কী করবেন?

চাকরি বাতিলের পরও রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলে শুক্রবার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দেখা গেছে।

যাদবপুর বিদ্যাপীঠ ও পার্ক ইনস্টিটিউশনের মতো কিছু স্কুলে ছাঁটাই হওয়া শিক্ষকেরা উপস্থিত ছিলেন এবং কেউ কেউ ক্লাসও নিয়েছেন। যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতিম বৈদ্য বলেন,
“আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনও স্পষ্ট নির্দেশ পাইনি। তাই শিক্ষকদের ক্লাস নিতে বারণও করিনি।”

এছাড়া, কিছু স্কুলে সামিটিভ পরীক্ষা চলায় শিক্ষকরা পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অভাবে রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা কতটা সংকটে পড়বে, তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

চ্যালেঞ্জের মুখে রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা

এত বিপুল সংখ্যক শিক্ষক ছাঁটাই হয়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে ছাত্রছাত্রীদেরএকদিকে শিক্ষক সংকট, অন্যদিকে সঠিক নির্দেশনার অভাবে পাঠদান কার্যত থমকে যেতে পারে।

এখন প্রশ্ন উঠছে, রাজ্য সরকার কীভাবে এই সংকট সামাল দেবে? নতুন শিক্ষক নিয়োগ হবে, নাকি কোনও অন্তর্বর্তীকালীন সমাধান আসবে? শিক্ষাবিদ ও অভিভাবকরাও উদ্বিগ্ন।

শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ যেন অন্ধকারে তলিয়ে না যায়, তা নিশ্চিত করতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন। আপাতত, রাজ্যের স্কুলগুলির সামনে অপেক্ষা করছে এক অনিশ্চিত অধ্যায়! 🚸📚

ট্রাম্পের ‘পাল্টা শুল্ক’ ঘোষণার অপেক্ষায় বিশ্ব, ভারতের চিন্তা বাড়ছে!

Read more

Local News