রামনবমীর আগে ওয়াকফ ইস্যুতে উত্তাল কলকাতা!
রামনবমীর ঠিক ৪৮ ঘণ্টা আগে কলকাতার পার্ক সার্কাসে ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মুসলিম জনতা রাস্তায় নেমে এলেন। কেন্দ্রীয় সরকারের এই বিলের প্রতিবাদে শুক্রবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পার্ক সার্কাস চত্বরে গর্জে উঠল একাধিক মুসলিম সংগঠন।
একদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপির বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ, অন্যদিকে তৃণমূল সরকারের ভূমিকায় প্রশংসা—এই দ্বৈত আবহেই এদিনের প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
ওয়াকফ বিল নিয়ে কেন বিক্ষোভ?
কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে মুসলিম সমাজের একটি বড় অংশ ক্ষুব্ধ। তাঁদের দাবি, এই বিলের মাধ্যমে মুসলিম ধর্মীয় সম্পত্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে চাইছে বিজেপি। ফলে এই বিল পাসের পর থেকে সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় ও সামাজিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হতে পারে।
তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন,
👉 “এই জমায়েত রামনবমীর দিকে তাকিয়ে হয়নি, বরং সংসদে সংখ্যার জোরে বিজেপি যে ভাবে বিল পাশ করিয়েছে, তার বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত জনমতের বহিঃপ্রকাশ।”
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই সমাবেশের মূল উদ্দেশ্য রামনবমীর আগে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে রাখা। কেউ কেউ বলছেন, এটি ছিল বিজেপির মেরুকরণের রাজনীতির মোকাবিলায় তৃণমূলের কৌশলী চাল।
তৃণমূলের ছায়া, কিন্তু নেই সরাসরি সমর্থন!
শুক্রবার পার্ক সার্কাসে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজনে তৃণমূলের কোনও আনুষ্ঠানিক উপস্থিতি ছিল না। কিন্তু সেখানে দেখা গিয়েছে তপসিয়া, কসবা, তিলজলা, বেকবাগানসহ বেশ কয়েকটি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকার স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের।
এক প্রবীণ তৃণমূল নেতা বলেন,
👉 “দলের সরাসরি কোনও নির্দেশে এই জমায়েত হয়নি, তবে রামনবমীর আগে এ ধরনের সমাবেশ সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা কমানোর বদলে বাড়িয়ে তুলতে পারে।”
রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন, তৃণমূল প্রকাশ্যে না এলেও, তারা এই প্রতিবাদকে নীরব সমর্থন জানিয়েছে।
২০২৬ বিধানসভা ভোটের আগে সংখ্যালঘু ভোটব্যাংকের বার্তা?
✅ তপসিয়ার বাসিন্দা জে আহমেদ বলেন:
➡️ “বিজেপি ওয়াকফ নিয়ে যা করেছে, তার জন্য ২০২৬-এ তার ফল পাবে।”
✅ পার্ক সার্কাসের বাসিন্দা মহম্মদ হামিদ হোসেনের মন্তব্য:
➡️ “কংগ্রেস ও তৃণমূলের মতো ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলোর ভূমিকা ইতিবাচক, কিন্তু নীতীশ কুমার ও চন্দ্রবাবুর দল মুসলিমদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।”
প্রসঙ্গত, নীতীশ কুমার এবং চন্দ্রবাবু নাইডুর দল বর্তমানে বিজেপির শরিক। তাই তাঁদের সমর্থনে সংসদে ওয়াকফ বিল পাশ হওয়ায় সংখ্যালঘুদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।
রামনবমীর আগে কলকাতার মুসলিম জমায়েত— তৃণমূলের পরিকল্পিত চাল?
গত কয়েক মাসে বিজেপি যখন বাংলাদেশে হিন্দু নিপীড়ন এবং ইস্কন সন্ন্যাসীর গ্রেফতারের বিরুদ্ধে একাধিক মিছিল করছিল, তখন তৃণমূল রানি রাসমণি রোডে সংখ্যালঘু সমাবেশ করেছিল। রাজনৈতিক মহলের মতে, এটি ছিল বিজেপির ‘হিন্দুত্ব’ রাজনীতির মোকাবিলায় তৃণমূলের ‘সংখ্যালঘু সংহতির’ বার্তা।
রামনবমীর আগে পার্ক সার্কাসের এই প্রতিবাদকে অনেকে তারই ধারাবাহিকতা বলে মনে করছেন।
রবিবার রামনবমীর দিন কি হতে পারে? প্রশাসনের সতর্কতা
গত বছর হাওড়ায় রামনবমীর দিনে বড়সড় অশান্তি হয়েছিল। এবার সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি আটকাতে তৃণমূল সরকার এবং পুলিশ প্রশাসন সর্বোচ্চ সতর্কতা নিচ্ছে।
✅ তৃণমূল নেতা কৈলাস মিশ্র বলেন:
➡️ “রবিবার আমরা রাস্তায় থাকব, মন্দিরে পুজো হবে, কিন্তু কোনও ধরনের অশান্তি বরদাস্ত করা হবে না।”
✅ তৃণমূল বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম বলেন:
➡️ “আমরা সকলে শান্তিপূর্ণ মিছিলে থাকব, মুসলিম ভাইয়েরা জলসত্র দেবেন। কিন্তু বিজেপি গন্ডগোল পাকানোর চেষ্টা করতে পারে, তাই প্রশাসন সম্পূর্ণ প্রস্তুত।”
তৃণমূলের সাংগঠনিক স্তরে সিদ্ধান্ত হয়েছে, কিছু কিছু স্পর্শকাতর এলাকায় দলীয় নেতা-কর্মীরা নজরদারিতে থাকবেন, তবে তাঁদের হাতে কোনও রাজনৈতিক পতাকা থাকবে না।
উত্তেজনার আশঙ্কা, তবে কৌশলী প্রস্তুতিও তৃণমূলের
📌 রামনবমীর দিন হাওড়া, ব্যারাকপুর, রিষড়া, চন্দননগরসহ কিছু এলাকায় তৃণমূলের সতর্ক নজরদারি থাকবে।
📌 বিজেপির সম্ভাব্য রাজনৈতিক চাল ঠেকাতে তৃণমূল আগে থেকেই সংখ্যালঘুদের একত্রিত করার চেষ্টা করছে।
📌 প্রশাসন অশান্তি রুখতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে।
এই প্রতিবাদ ও রাজনৈতিক প্রস্তুতি আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরু ভোটব্যাংকের লড়াইকে আরও তীব্র করে তুলল— এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা!
ট্রাম্পের ‘পাল্টা শুল্ক’ ঘোষণার অপেক্ষায় বিশ্ব, ভারতের চিন্তা বাড়ছে!