গাজায় শান্তির পথে নতুন শর্ত!
গাজায় চলমান সংঘাত থামানোর জন্য যুদ্ধবিরতির আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে ইজরায়েল। হামাসের ওপর আরও কঠোর শর্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে—শুধু পণবন্দিদের মুক্তি নয়, এবার অস্ত্রও সমর্পণ করতে হবে! তবে হামাস এখনো সেই শর্ত মেনে নিতে রাজি নয়, যা সংঘাতের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির নয়া মোড়
গত কয়েক মাস ধরে গাজায় সংঘর্ষ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। আন্তর্জাতিক মহলের মধ্যস্থতায় এর আগে এক দফা যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। এবার নতুন যুদ্ধবিরতির জন্য কাতার, মিশর এবং আমেরিকা আবারও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই আবহে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সাফ জানিয়ে দিয়েছেন—শুধু বন্দিমুক্তি যথেষ্ট নয়, হামাসকে অস্ত্র ত্যাগ করতেই হবে।
ইজরায়েলের এই নতুন শর্ত হামাসের জন্য বড় ধাক্কা। তারা আগেই প্রতি সপ্তাহে পাঁচজন বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার শর্তে রাজি হয়েছিল। কিন্তু অস্ত্র সমর্পণের প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করেছে হামাস। কারণ, অস্ত্র ফেলে দিলে গাজায় তাদের নিয়ন্ত্রণ দুর্বল হয়ে পড়বে এবং ইজরায়েলের সামনে তাদের প্রতিরোধের পথ কার্যত বন্ধ হয়ে যাবে।
গাজায় রক্তাক্ত প্রেক্ষাপট
ইজরায়েলের নতুন শর্ত ঘোষণার মধ্যেই গাজায় চলতে থাকা সহিংসতা আরও ভয়াবহ আকার নিয়েছে। রবিবার ইজরায়েলি বিমান হানায় অন্তত ২০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে শিশুও ছিল। দক্ষিণ গাজা শহর খান ইউনূসে এক তাঁবুর মধ্যে আশ্রয় নেওয়া ৯ জন ইজরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন।
গত ১৫ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতির প্রথম দফার চুক্তি কার্যকর হয়েছিল, যা ১ মার্চ শেষ হয়। এরপর থেকে নতুন চুক্তির বিষয়ে কোনও অগ্রগতি হয়নি। ফলে ১৮ মার্চ থেকে ইজরায়েল ফের হামলা শুরু করে, যা নতুন করে রক্তপাতের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে।
নেতানিয়াহুর কড়া অবস্থান
নতুন সংঘর্ষবিরতির আলোচনা এগিয়ে নেওয়ার জন্য ইজরায়েল নিজের শর্তের ব্যাপারে অনড়। নেতানিয়াহু স্পষ্ট করে দিয়েছেন, যদি হামাস অস্ত্র না ফেলে, তাহলে কোনওভাবেই তাদের নেতাদের গাজা ছাড়ার অনুমতি দেওয়া হবে না। অন্যদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাব অনুযায়ী, যারা গাজা থেকে বেরিয়ে যেতে চায়, তাদের যেন সেই সুযোগ দেওয়া হয়—এই বিষয়টিও ইজরায়েল গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে।
তবে হামাস এই মুহূর্তে অস্ত্রসমর্পণের বিষয়ে নমনীয় হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে না। তারা ইজরায়েলের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে আগ্রহী হলেও নিজেদের সামরিক শক্তি হারানোর পক্ষে নয়। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পরিস্থিতিতে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও তা দীর্ঘস্থায়ী নাও হতে পারে।
গাজায় শান্তি আদৌ আসবে?
ইজরায়েলের কঠোর শর্ত ও হামাসের অনমনীয় মনোভাবের কারণে গাজায় আসলেই শান্তি ফিরবে কি না, তা নিয়ে সংশয় থেকে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মহল যুদ্ধ থামানোর চেষ্টা চালিয়ে গেলেও দুই পক্ষের জেদ এবং আস্থাহীনতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হামাস যদি অস্ত্র সমর্পণে রাজি না হয়, তাহলে ইজরায়েল সামরিক অভিযান জোরদার করবে। অন্যদিকে, হামাসের প্রতিরোধ চলতেই থাকবে। ফলে গাজায় সহিংসতার চক্র আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে।
শেষ কথা
যুদ্ধবিরতির আলোচনায় নতুন মোড় এনে ইজরায়েল কৌশলগতভাবে হামাসের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। তবে এই চাপ আদৌ ফলপ্রসূ হবে কি না, তা সময়ই বলবে। আপাতত গাজাবাসীদের জন্য শান্তির প্রত্যাশা এখনও অধরা।
বিজেপি-এডিএমকে জোট নিয়ে নতুন জল্পনা: শর্তই কি আলোচনার মূল বিষয়?

