বাপু, সংবিধানটাকে রক্ষা কোরো!
লন্ডনের পার্লামেন্ট স্কোয়ার। মহাত্মা গান্ধীর মূর্তির সামনে এসে দাঁড়ালেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একটু থমকালেন, তারপর বললেন, “একটু প্রণাম করে যাই।” হঠাৎ খেয়াল করলেন, ফুল তো সঙ্গে আনেননি! তবে মুখ্যমন্ত্রী বলে কথা — সমাধান তো পেতেই হয়। নিরাপত্তারক্ষী কুসুমকুমার দ্বিবেদী পাশে দাঁড়িয়েই ছোট্ট বাগান থেকে কয়েকটি ফুল তুলে দিলেন। মূর্তির সামনে চটি খুলে সেই ফুল নিবেদন করে মমতা অস্ফুটে বললেন, “বাপু, সংবিধানটাকে রক্ষা কোরো!”
ডোনার সঙ্গে লন্ডন হেঁটে
মঙ্গলবার বিকেলে শিল্প সম্মেলন সেরে বুধবার একটু ফুরসত। লন্ডনের রাস্তায় হাঁটতে বেরোলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গী সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের স্ত্রী ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়। মঙ্গলবার হোটেলে দেখা করতে এসেছিলেন ডোনা। মমতার তরফে উপহার হিসেবে পেয়েছেন একটি গরম সোয়েটার। তার পরেই ডোনাকে বুধবারের হাঁটার জন্য আমন্ত্রণ জানালেন মমতা।
নৃত্যশিল্পী ডোনার পায়ের জোর তো রয়েছেই, তাছাড়া লন্ডনের অলিগলি তাঁর চেনা। তবে দিদির সঙ্গে এমন হেঁটে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা এবারই প্রথম। একে সেন্ট্রাল লন্ডন, তার উপর মমতার সঙ্গ — জমে গেল হাঁটা পর্ব!
আমাদেরও আছে!
হাঁটতে হাঁটতে বিগ বেনের সামনে এসে দাঁড়ালেন মমতা। চোখে পড়ল সেই বিশাল ঘড়ির কাঁটা। তৎক্ষণাৎ বললেন, “আমাদেরও আছে, ইকো পার্কেও তো বিগ বেন আছে!” এমনই তাঁর স্বভাব — যেকোনো বড় কিছুর মাঝে নিজের বাংলার তুলনা টানতে ভুল করেন না।
ঘড়ির কাঁটা আর চার মিনিট
বুধবারের শিল্প সম্মেলন। সেন্ট জেমস কোর্ট হোটেলে দুপুর দুটোয় শুরু হওয়ার কথা। মমতা যথারীতি দশ মিনিট আগেই পৌঁছলেন। কিন্তু মঞ্চে ওঠার তাড়া নেই। অতিথিদের সঙ্গে হাসিমুখে কথোপকথনে মগ্ন। সময় নিয়ে খুব যত্নশীল তিনি। ঘোষণার শব্দ কানে আসতেই হেসে বললেন, “এখনও চার মিনিট বাকি কিন্তু!”
ছবি? এসো, সবাই এসো!
বিগ বেন, সেন্ট জেমস পার্ক, ক্যাভালরি মিউজ়িয়াম, বাকিংহাম প্যালেস — যেখানেই যান, ভারতীয়দের উচ্ছ্বাস। ছবি তোলার আবদার তো থাকবেই। পরিচিত আটপৌরে শাড়ি আর হাওয়াই চটি পরা মমতাকে চেনা যেন সহজ। তবে একা ছবি নয়, গ্রুপ ফটোতেই স্বচ্ছন্দ তিনি।
বাঙালি প্রবাসীরা লন্ডনের রাস্তায় হঠাৎ মুখোমুখি হলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর। কেউ বেড়াতে এসেছেন, কেউ থাকেন বস্টনে। মমতা তাঁদের সবার সঙ্গে ছবি তুললেন, তবে কারও সঙ্গে একা নন। এমনই তাঁর নীতি — কোনো অপ্রাসঙ্গিক বিতর্কের জায়গা রাখেন না।
অক্সফোর্ডের পথে
আগামী দিন অক্সফোর্ডে মমতার বক্তৃতা। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় থাকবেন তাঁর সঙ্গী। একদিকে শিল্প সম্মেলন, অন্যদিকে অক্সফোর্ডের বক্তৃতা — এই সফর কার্যত মমতার বহুমুখী কূটনৈতিক পদক্ষেপের প্রতিচ্ছবি।
লন্ডনের রাস্তায় হাঁটার সেই সহজ সরল মুহূর্তগুলো যেন আরও একবার প্রমাণ করে দিলেন — তিনি মাটির কাছের মানুষ। নিজের সহজাত ভঙ্গিতে তিনি জয় করে নিলেন লন্ডনের বাঙালি হৃদয়।

