আবর্জনার পাহাড়ে বিস্ফোরণের আশঙ্কা!
হাওড়ার বেলগাছিয়ায় আবর্জনার স্তূপে বিস্ফোরণ ঘটার পরই নড়েচড়ে বসেছে কলকাতা পুরসভা। কারণ, কলকাতার ডাম্পিং গ্রাউন্ডেও ভয়ংকর বিপদ লুকিয়ে রয়েছে। এখানে জমে থাকা বিপুল পরিমাণ বর্জ্যের নীচে ভূগর্ভস্থ মিথেন গ্যাস তৈরি হচ্ছে, যা যে কোনো মুহূর্তে বড়সড় বিস্ফোরণের কারণ হতে পারে!
সম্প্রতি, কলকাতা পুরসভার কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ এ বিষয়ে এক বিশদ রিপোর্ট জমা দিয়েছে। রিপোর্টে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, গরমকালে আবর্জনার পাহাড় থেকে ধোঁয়া বেরোনো, আগুন ধরে যাওয়া এবং ধস নামার ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে।
⚠️ ধাপা কি পরবর্তী বিস্ফোরণের কেন্দ্র?
কলকাতার আবর্জনা ফেলার প্রধান কেন্দ্র ধাপা ডাম্পিং গ্রাউন্ড, যা ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের একদম কাছে। এখানে ৬০ একর জমির ওপর আবর্জনার স্তূপ রয়েছে, যার মধ্যে ৪০ একর জমিতে প্রতিদিন প্রায় ৪,০০০ মেট্রিক টন বর্জ্য ফেলা হয়! শুধু কলকাতা নয়, বিধাননগর, নবদিগন্ত-কলকাতা ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকা ও পানিহাটি পুরসভার আবর্জনাও এখানে ফেলা হচ্ছে, যা আরও ১,০০০ মেট্রিক টন যোগ করছে প্রতিদিন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এত বিশাল পরিমাণ বর্জ্য ভূগর্ভে বিপজ্জনক মাত্রায় মিথেন গ্যাস তৈরি করছে, যা অত্যন্ত দাহ্য। গ্যাসের পরিমাণ বেশি হলে স্বতঃস্ফূর্ত বিস্ফোরণের আশঙ্কা তৈরি হয়। গত কয়েক মাস ধরে কলকাতার ডাম্পিং গ্রাউন্ডের বিভিন্ন অংশ থেকে ধোঁয়া বেরোনোর ঘটনা দেখা গেছে, যা প্রমাণ করে যে মিথেন গ্যাসের ঘনত্ব বাড়ছে।
🔴 পুরসভার টনক নড়ল, তবু কি যথেষ্ট?
কলকাতা পুরসভা জানিয়েছে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য আধুনিক কম্প্যাক্টর প্রযুক্তি ও পৃথকীকরণ ব্যবস্থা ব্যবহার করা হলেও আবর্জনার পরিমাণ লাগামছাড়া হয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি এখনই কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে ভবিষ্যতে হাওড়ার মতোই ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটতে পারে।
🚨 বিপর্যয় ঠেকাতে কী করা দরকার?
কলকাতা পুরসভার রিপোর্টে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করা হয়েছে:
✅ আবর্জনার পরিমাণ কমানো:
অন্য পুরসভাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে নিজস্ব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা, যাতে কলকাতার উপর চাপ কমে।
✅ বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার:
প্রায় ২০ একর জমি ইতিমধ্যেই আবর্জনামুক্ত করা হয়েছে। আরও জমি পুনর্ব্যবহারের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
✅ মিথেন গ্যাসের নিষ্কাশন:
ভূগর্ভে জমে থাকা মিথেন গ্যাসের চাপ কমাতে বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা প্রয়োজন, যাতে বিস্ফোরণের আশঙ্কা কমে।
✅ জলীয় স্প্রে ও পর্যবেক্ষণ:
গরমকালে ডাম্পিং গ্রাউন্ডে নিয়মিত জলীয় স্প্রে করা এবং গ্যাসের মাত্রা পর্যবেক্ষণ করা দরকার, যাতে আগুন লাগা বা বিস্ফোরণের সম্ভাবনা কমে।
⏳ সময় কম, সতর্ক হতে হবে এখনই!
পরিবেশবিদদের মতে, হাওড়ার ঘটনার পর প্রশাসন নড়েচড়ে বসলেও, শুধু রিপোর্ট তৈরি করলেই হবে না—বাস্তবসম্মত পদক্ষেপও নিতে হবে! সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে, শুধু বিস্ফোরণ নয়, ভূমিধসের মতো বিপর্যয়ও কলকাতার বেশ কিছু এলাকায় ঘটতে পারে। তাই এখনই প্রশাসনকে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে, নইলে বিপদ আসন্ন!

