Friday, March 21, 2025

সৌন্দর্যের সংজ্ঞা কি বদলাচ্ছে? আমিরের প্রেমিকার ‘সাদামাটা’ সাজে মুগ্ধ দেশ

Share

সৌন্দর্যের সংজ্ঞা কি বদলাচ্ছে?

বলিউড তারকা আমির খানের নতুন প্রেমিকা গৌরী স্প্র্যাট এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। কিন্তু শুধু তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নয়, তাঁর সাজসজ্জা নিয়েও চলছে বিস্তর আলোচনা। সাধারণত বলিউড তারকাদের প্রেমিকা মানেই চকমকে গ্ল্যামার, ঝলমলে পোশাক, নিখুঁত মেকআপ—কিন্তু গৌরী যেন এই ধারণাকেই উল্টে দিয়েছেন। কোনও অতিরিক্ত সাজসজ্জা নেই, নেই কৃত্রিম চাকচিক্যের ছোঁয়া। নীল কুর্তা, কালো লেগিংস, খোলা চুল আর চোখে কালো চশমা—এই সাধারণ সাজেই তিনি মন জয় করে নিয়েছেন বহু মানুষের।

সৌন্দর্যের প্রতি বদলাচ্ছে কি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি?

এমন সাজ বলিউডে খুব একটা দেখা যায় না। বরং অতীতে দেখা গেছে, আমিরের দুই প্রাক্তন স্ত্রী রিনা দত্ত এবং কিরণ রাও-এর সাদামাটা সাজ নিয়েও কটাক্ষ করা হয়েছিল। কিন্তু সময় বদলেছে। এখন গৌরীর এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং অনাড়ম্বর সাজই প্রশংসা কুড়োচ্ছে।

প্রশ্ন উঠছে—তবে কি সৌন্দর্যের সংজ্ঞা পাল্টাচ্ছে? চকমকে সাজগোজ না থাকলেও কি কাউকে আকর্ষণীয় মনে করা যায়?

সাজ-সৌন্দর্যের নতুন ব্যাখ্যা—টলিপাড়ার মতামত

এই প্রসঙ্গে মত দিয়েছেন টলিউডের তারকারাও। অভিনেত্রী শোলাঙ্কি রায় এবং ইশা সাহা মনে করেন, সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি এত সহজে বদলায় না। শোলাঙ্কির মতে,

“আজ যদি গৌরীর অনাড়ম্বর সাজ প্রশংসিত হয়, কালই আবার কোনও নায়িকা মেকআপ ছাড়া থাকলে তাঁকে নিয়ে সমালোচনা হবে। এখনও অধিকাংশ মানুষ স্ত্রী হিসেবে ফর্সা মেয়েকেই চান। কালো মেয়ের চরিত্রে ফর্সা অভিনেত্রীকে মেকআপ দিয়ে কালো বানানো হয়। তাহলে বদল কোথায়?”

ইশা সাহাও একমত। তাঁর মতে,

“সৌন্দর্যের সংজ্ঞা পাল্টাচ্ছে কিনা, তা বোঝার আগে আমাদের ভাবতে হবে—আমরা কি সত্যিই সকলকে তাঁদের নিজস্ব সৌন্দর্যে গ্রহণ করতে শিখেছি? আজ যদি মেকআপ ছাড়া কাউকে সুন্দর বলি, কাল কি তাঁকে অন্যভাবে বিচার করব না?”

সৌন্দর্য মানে শুধু রূপ নয়, আত্মবিশ্বাসও

অভিনেতা অর্জুন চক্রবর্তী মনে করেন, সৌন্দর্য একেকজনের কাছে একেকরকম। তিনি বলেন,

“যিনি যেভাবে স্বচ্ছন্দ, সেটাই তাঁর জন্য সৌন্দর্য। কিন্তু আমাদের সমাজ সৌন্দর্যের সংজ্ঞা চাপিয়ে দিতে ভালোবাসে। এটিই পরিবর্তন হওয়া দরকার।”

৮০-৯০ দশকের বাংলা সিনেমায় সৌন্দর্যের সংজ্ঞা বদলেছিলেন দেবশ্রী রায়। ছাপা শাড়ি, বিনুনি আর হালকা মেকআপ—এই সাধারণ সাজেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন অনন্য। কিন্তু আজকের দিনে, যখন নায়িকারা প্লাস্টিক সার্জারি, বোটক্স, লিপ ফিলার করে নিজেকে বদলাতে বাধ্য হচ্ছেন, তখন প্রশ্ন ওঠে—সৌন্দর্যের সংজ্ঞা কি সত্যিই বদলাচ্ছে? নাকি সমাজ এখনও নারীদের চেহারার নিরিখেই বিচার করছে?

সত্যিকারের পরিবর্তন কবে?

গৌরী স্প্র্যাটের মতো কেউ যখন সাধারণ সাজে সবার ভালোবাসা পান, তখন মনে হয় হয়তো দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাচ্ছে। কিন্তু পরক্ষণেই আমরা দেখি মেকআপ ছাড়া কাউকে ‘ম্লান’ বা ‘অস্বাভাবিক’ বলে সমালোচনা করা হচ্ছে।

তাই পরিবর্তন সত্যিই ঘটবে তখনই, যখন আমরা বুঝবো সৌন্দর্য শুধু চেহারার নয়, এটি আত্মবিশ্বাস এবং স্বাচ্ছন্দ্যের বিষয়ও। কেউ যদি নিজেকে মেকআপ ছাড়া সুন্দর মনে করেন, সেটাই সুন্দর। আবার কেউ যদি সাজতে ভালোবাসেন, তাতেও ভুল কিছু নেই।

শেষ কথা

গৌরীর মতো নারীরা সৌন্দর্যের নতুন সংজ্ঞা তৈরি করছেন। কিন্তু সমাজ কি সত্যিই সেই পরিবর্তনকে গ্রহণ করছে? নাকি এটি কেবল সাময়িক উচ্ছ্বাস?

সত্যিকারের পরিবর্তন তখনই আসবে, যখন সৌন্দর্যের মাপকাঠি হবে আত্মবিশ্বাস, ব্যক্তিত্ব এবং মনের শক্তি—শুধু চেহারা নয়।

সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে মার্কিন গোয়েন্দাপ্রধানের উদ্বেগ, ইউনূস প্রশাসনের কড়া প্রতিক্রিয়া

Read more

Local News