ইথিওপিয়ার মহাকাশ অভিযান!
আধুনিক মহাকাশ গবেষণায় বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলোর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ব্রিটেন, চিন, ভারত ও জাপানের নাম উঠে আসে। কিন্তু আফ্রিকার মতো তুলনামূলক কম উন্নত মহাদেশের একটি দেশ যে মহাকাশ গবেষণায় এতোটা এগিয়ে যেতে পারে, তা অনেকের কাছেই অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। তবে বাস্তব চিত্রটি ভিন্ন। ইথিওপিয়া ইতিমধ্যেই মহাকাশ গবেষণায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে শুরু করেছে এবং একের পর এক কৃত্রিম উপগ্রহ মহাশূন্যে পাঠাচ্ছে।
তৃতীয় কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের প্রস্তুতি
ইথিওপিয়ার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘ইথিওপিয়ান স্পেস সায়েন্স অ্যান্ড জিয়োস্পেশ্যাল ইনস্টিটিউট’ (ইএসএসজিআই) সম্প্রতি ঘোষণা করেছে যে, আগামী বছর তারা তৃতীয় কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করতে চলেছে। এটি হবে উচ্চ রেজোলিউশনের পৃথিবী পর্যবেক্ষণ উপগ্রহ, যা আরও স্পষ্ট ও বিস্তারিত ছবি তুলতে সক্ষম। তবে এই প্রকল্পের পিছনে চিনের বড় ভূমিকা রয়েছে।
ইএসএসজিআইয়ের উপগ্রহ পর্যবেক্ষণ বিভাগের নির্বাহী পরিচালক তেসফায়ে ফুফার জানিয়েছেন, এই উৎক্ষেপণের জন্য সমস্ত প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তবে চিন থেকে কী পরিমাণ অর্থ সাহায্য আসছে, সে সম্পর্কে তিনি স্পষ্ট কিছু বলেননি। ফলে, চিনের উদ্দেশ্য নিয়ে অনেকের মধ্যেই সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
ইথিওপিয়ার মহাকাশ গবেষণায় চিনের ভূমিকা
২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো চিনের সাহায্যে ‘ইথিওপিয়ান রিমোট সেন্সিং স্যাটেলাইট-১’ (ইটিআরএসএস-১) মহাকাশে পাঠায় ইথিওপিয়া। মূলত কৃষি গবেষণা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশগত বিশ্লেষণের জন্য এটি ব্যবহার করা হয়। এরপর ২০২০ সালে দ্বিতীয় কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করা হয়, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল মহাজাগতিক পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ। এবার তৃতীয় উপগ্রহের মাধ্যমে আরও উন্নত পর্যবেক্ষণ সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
উপগ্রহের কার্যকারিতা ও সম্ভাবনা
নতুন উপগ্রহটিতে থাকবে থার্মাল ইমেজিং প্রযুক্তি, যা বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস দিতে সহায়তা করবে। বিশেষ করে, খরা, বন্যা এবং বনাঞ্চল ধ্বংসের মতো পরিবেশগত সমস্যাগুলো নিয়ে গবেষণা করতে এটি কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে।
গত কয়েক বছরে ইথিওপিয়ায় নগরায়ন দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারের পরিকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে প্রকৃতির উপর কী ধরনের প্রভাব পড়ছে, সে বিষয়েও এই উপগ্রহের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। পাশাপাশি, কৃষি এবং জনসংখ্যা সংক্রান্ত পর্যবেক্ষণেও এটি ব্যবহার করা হবে।
আফ্রিকার মহাকাশ গবেষণায় ইথিওপিয়ার অবস্থান
আফ্রিকার মধ্যে মহাকাশ গবেষণায় সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে মিশর, যা ১৯৯৮ সালে প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করেছিল। দক্ষিণ আফ্রিকা, নাইজেরিয়া এবং আলজেরিয়াও এই ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। তবে তুলনামূলকভাবে নবাগত হলেও ইথিওপিয়া দ্রুত মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান তৈরি করছে।
উপসংহার
ইথিওপিয়ার এই মহাকাশ অভিযান শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত উন্নয়নের প্রতিফলন নয়, বরং এটি দেশের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনারও প্রতিচ্ছবি। যদিও এই প্রকল্পের পিছনে চিনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়, তবে একথা নিশ্চিত যে, ইথিওপিয়া মহাকাশ গবেষণায় নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে সক্ষম হয়েছে। এই প্রচেষ্টা ভবিষ্যতে আফ্রিকার অন্যান্য দেশগুলোর জন্যও অনুপ্রেরণা হয়ে উঠতে পারে।
সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে মার্কিন গোয়েন্দাপ্রধানের উদ্বেগ, ইউনূস প্রশাসনের কড়া প্রতিক্রিয়া

