মূল্যবৃদ্ধি কমেছে, শিল্পোৎপাদন বেড়েছে!
দেশ এখন চলতি অর্থবর্ষের শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। মাত্র দু’সপ্তাহ পরই শুরু হবে ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষ। সরকার, কর্পোরেট দুনিয়া এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে আগামী বছরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। কারণ, চলতি অর্থবর্ষের দ্বিতীয়ার্ধ, অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ, শেয়ার বাজার, শিল্প এবং মিউচুয়াল ফান্ড বিনিয়োগকারীদের জন্য খুব একটা ভালো যায়নি। অথচ বছরের প্রথমার্ধে, বিশেষ করে সেপ্টেম্বরের শেষে, সূচক সর্বকালীন উচ্চতায় পৌঁছেছিল। কিন্তু তারপর থেকেই নানা কারণে বাজারে ধস নামে, এবং এখনো সেই পতন পুরোপুরি থামেনি।
বিনিয়োগকারীদের ধন্দ এবং আইপিও পিছিয়ে দেওয়া
বাজারের এই অস্থিরতার ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই কম দামে শেয়ার কেনার সুযোগ পেলেও বিনিয়োগ করতে সাহস পাচ্ছেন না। এমনকি বাজারের এই অনিশ্চয়তার কারণে নতুন শেয়ার ছাড়ার (IPO) পরিকল্পনা পিছিয়ে দিচ্ছে একাধিক সংস্থা।
তবে বাজারের বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেছে। শিল্পোৎপাদনের হার বেড়েছে, মূল্যবৃদ্ধিও কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে, যা বাজারের জন্য ইতিবাচক সংকেত। বিনিয়োগকারীরা যদি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করে এগোন, তাহলে আগামী অর্থবর্ষে বাজার আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
অর্থবর্ষের শেষ লগ্নে বিনিয়োগকারীদের কর বিষয়ক পরিকল্পনা
বিনিয়োগকারীদের জন্য বছরের এই সময়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, যারা পুরনো কর কাঠামোর আওতায় আছেন, তাদের কর সাশ্রয়কারী প্রকল্পে বিনিয়োগের জন্য এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। যাদের দাতব্য সংস্থায় অনুদান দেওয়ার পরিকল্পনা আছে, তারও সময় এখনই।
শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, প্রথম ১.২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদী মূলধনী লাভ করমুক্ত। তাই, কর সুবিধা পেতে চাইলে উপযুক্ত শেয়ার বিক্রি করে লাভ ঘরে তুলতে হবে।
নতুন কর কাঠামোতে সুবিধা এবং বিনিয়োগ পরিকল্পনা
কেন্দ্রীয় সরকার নতুন কর কাঠামোয় ব্যাপক ছাড় দেওয়ায় বেশিরভাগ করদাতা এই কাঠামোর আওতায় আসবেন। এখন ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত হওয়ায় অনেকেরই করের বোঝা কমেছে। এমনকি ১২-২৪ লক্ষ বা তার বেশি আয়ের ক্ষেত্রেও বছরে প্রায় ৮০,০০০ থেকে ১,১০,০০০ টাকা পর্যন্ত কর সাশ্রয় হতে পারে। ফলে, মাসে প্রায় ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি অর্থ হাতে থাকবে, যা বিনিয়োগের জন্য পরিকল্পনা করা যেতে পারে।
বিনিয়োগের নতুন দিক এবং স্থায়ী আমানতের আকর্ষণ
এর আগে কর বাঁচাতে অনেকেই শেয়ার বাজার বা মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করতেন। তবে বাজারের অস্থিরতার কারণে অনেকেই এখন ঝুঁকি কমাতে চাইছেন। নতুন কর কাঠামোতে আয় করমুক্ত হওয়ায় অনেক বিনিয়োগকারী স্থায়ী আমানত, ব্যাঙ্ক ও ডাকঘরের সঞ্চয় প্রকল্পের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হচ্ছেন।
ফেব্রুয়ারিতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদের হার কমানোর পর অনেক ব্যাঙ্ক ঋণের সুদ কমালেও, স্থায়ী আমানতের সুদ এখনো তেমন কমেনি। তবে আগামী ৭-৯ এপ্রিলের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নীতিতে আরও ২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তখন ব্যাঙ্কগুলিও আমানতের সুদ কমাতে পারে। তাই যারা দীর্ঘমেয়াদি আমানতে টাকা রাখার কথা ভাবছেন, তাদের জন্য এখনই উপযুক্ত সময়।
পরিবারের মাধ্যমে কর সাশ্রয় করার উপায়
যারা তাদের করযোগ্য আয় ১২ লক্ষ টাকার উপরে চলে যাওয়ার কারণে অতিরিক্ত কর দিতে চান না, তারা একটি কৌশল অবলম্বন করতে পারেন। প্রাপ্তবয়স্ক সন্তান বা বাবা-মায়ের নামে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দান হিসেবে দিলে, ওই আয় তাদের নামে গণ্য হবে। যদি তাদের ব্যক্তিগত আয় ১২ লক্ষ টাকার নিচে থাকে, তাহলে তারা করমুক্ত থাকবেন। এর ফলে মূল করদাতার করের বোঝা কমবে এবং পরিবারিকভাবে আর্থিক সুবিধা পাওয়া যাবে।
নতুন বছরে বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর আশা
যদিও শেয়ার বাজার এখনো চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে, বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন, মূল্যবৃদ্ধি কমে যাওয়া এবং শিল্পোৎপাদন বাড়ার ফলে ধীরে ধীরে বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত হবে। নতুন অর্থবর্ষের শুরুতে বাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য আশার আলো দেখাচ্ছে।
ন’মাস পর পৃথিবীতে ফিরছেন সুনীতা উইলিয়ামস! নাসা জানাল অবতরণের নির্দিষ্ট সময়

