ভারত-চিন সম্পর্ক!
একটি পরিবারের মধ্যেও সবসময় সবকিছু নিখুঁত হয় না। কখনও কখনও মতপার্থক্য তৈরি হয়, কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে সম্পর্ক ভেঙে যেতে হবে। ঠিক তেমনই, ভারত এবং চিনের মধ্যেও মতানৈক্য রয়েছে, তবে তা বিবাদের পর্যায়ে না নিয়ে যাওয়াই সঠিক পথ। সম্প্রতি মার্কিন পডকাস্টার টমাস ফ্রিডম্যানকে দেওয়া এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
গত পাঁচ বছর ধরে ভারত-চিন সম্পর্ক শীতল। ২০২০ সালে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর থেকে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে শৈত্য নেমে আসে। তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। মোদী জানিয়েছেন, চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের পর সীমান্তে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরতে শুরু করেছে।
গালওয়ান সংঘর্ষের পর দুই দেশের সম্পর্ক
২০২০ সালের এপ্রিল থেকে পূর্ব লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) বরাবর চিনা সেনার অনুপ্রবেশের অভিযোগ ওঠে। পরিস্থিতি চরমে পৌঁছায় ১৫ জুন, যখন গালওয়ান উপত্যকায় চিনা সেনার আক্রমণে ২০ জন ভারতীয় জওয়ান শহিদ হন। পাল্টা আঘাতে চিনেরও বেশ কিছু সেনা নিহত হয় বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। এই ঘটনার পর থেকেই ভারত-চিন সম্পর্ক ক্রমশ শীতল হয়ে পড়ে।
কিন্তু ২০২৩ সালের অক্টোবরে রাশিয়ার কাজানে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের সময় মোদী এবং শি জিনপিং বৈঠক করেন। তখনই সীমান্ত থেকে সেনা সরানোর বিষয়ে দুই দেশ ঐকমত্যে পৌঁছায়। এই বৈঠক সম্পর্ক উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করেছে বলে মনে করেন মোদী।
ভারত-চিন সম্পর্কের ভবিষ্যৎ
সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করেন যে, ভারত চিনের সঙ্গে আবার গালওয়ান-পূর্ব সম্পর্ক স্থাপন করতে চায়। তবে, দীর্ঘ পাঁচ বছরের ব্যবধানের জন্য এই পুনর্মিলন প্রক্রিয়ায় কিছুটা সময় লাগবে। তাঁর মতে, দুই দেশ একে অপরের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারলে সম্পর্ক আগের মতো সুস্থ এবং স্বাভাবিক হয়ে উঠবে।
মোদী বলেন, “প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে মাঝেমধ্যে মতপার্থক্য তৈরি হয়। এটি খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু আমরা চাই, এই মতানৈক্য যেন বিবাদে পরিণত না হয়। আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান খোঁজা উচিত।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ভারত-চিনের মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতা থাকতেই পারে, তবে তা কখনোই সংঘাতের রূপ নেওয়া উচিত নয়। কারণ এই দুই দেশ বিশ্বের মোট জিডিপির প্রায় ৫০% ভাগ নিয়ন্ত্রণ করে। তাই, তাদের সম্পর্ক শুধু দুই দেশের জন্য নয়, গোটা বিশ্বের স্থিতিশীলতার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
কূটনীতির ওপর জোর
প্রধানমন্ত্রী মোদী বারবার আলোচনার গুরুত্বের কথা বলেছেন। তাঁর মতে, মতপার্থক্য থাকলেও আলোচনা চালিয়ে যাওয়া জরুরি। কারণ কেবল আলোচনার মাধ্যমেই একটি স্থিতিশীল ও সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব।
ভারত শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে সর্বদা অগ্রাধিকার দিয়েছে, এবং ভবিষ্যতেও সেটাই বজায় রাখতে চায়। মোদীর বক্তব্য, “আমরা চাই, ভারত-চিন সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হোক। এটি ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাক। তবে, এর জন্য বিশ্বাস এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার প্রয়োজন।”
ভারত ও চিনের মধ্যে বহু বছর ধরে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে। কিন্তু, সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা যেন সংঘাতের রূপ না নেয়, সেটিই ভারতের মূল লক্ষ্য। মতানৈক্য থাকতেই পারে, তবে তা কখনোই দ্বন্দ্বের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া উচিত নয়—এই বার্তাই দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
ন’মাস পর পৃথিবীতে ফিরছেন সুনীতা উইলিয়ামস! নাসা জানাল অবতরণের নির্দিষ্ট সময়

