ইডির মামলায় রাজসাক্ষী!
পশ্চিমবঙ্গের নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় বড় মোড়! এবার রাজসাক্ষী হতে চান প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামাই কল্যাণময় ভট্টাচার্য। সম্প্রতি, ইডির বিশেষ আদালতে রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করেছেন তিনি, যা ইতিমধ্যেই মঞ্জুর হয়েছে। ইডি সূত্রের খবর, কল্যাণময় তার বিরুদ্ধে থাকা চার্জশিটের যাবতীয় অভিযোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার আবেদন করেছেন এবং গোপন জবানবন্দি দেওয়ার ব্যাপারেও সম্মতি জানিয়েছেন।
কী ফাঁস করতে চলেছেন কল্যাণময়?
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইতিমধ্যেই পঞ্চম অতিরিক্ত চার্জশিট আদালতে জমা দিয়েছে। চার্জশিটে উল্লেখ রয়েছে, কীভাবে এবং কোন সংস্থার মাধ্যমে বিপুল আর্থিক লেনদেন হয়েছিল। ইডি দাবি করেছে, কল্যাণময় ছিলেন এই দুর্নীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, পার্থ চট্টোপাধ্যায় নগদ অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তির হাতে তুলে দিতেন, যা পরে তার স্ত্রীর নামে তৈরি ‘বাবলি চ্যাটার্জি মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’-এ দান হিসেবে দেখানো হতো।
তদন্তে উঠে এসেছে, এই ট্রাস্ট মূলত দুর্নীতির মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থকে বৈধ করার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। ইডির দাবি, পার্থের জামাই কল্যাণময় জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন যে, এই ‘ডোনেশন’ আসলে নগদ টাকাকে বৈধ করার কৌশল ছিল।
ট্রাস্টের নামে জমি কেনার রহস্য
প্রাথমিকভাবে, বাবলি চ্যাটার্জি মেমোরিয়াল ট্রাস্ট গঠিত হয়েছিল পাটুলিতে একটি পশুচিকিৎসালয় তৈরির উদ্দেশ্যে। কল্যাণময় ছিলেন এই ট্রাস্টের অন্যতম ট্রাস্টি। তদন্তকারীদের তিনি জানিয়েছেন, একবার এই ট্রাস্টের জন্য ১ কোটি ১৭ লক্ষ ৭৫ হাজার ৯১০ টাকা ‘ডোনেশন’ পাওয়া গিয়েছিল। একাধিক ব্যক্তি চেকের মাধ্যমে সেই টাকা দিয়েছিলেন, কিন্তু আসল ঘটনা অন্য ছিল। ইডির দাবি, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছ থেকে নগদ টাকা নেওয়ার পরই তারা চেকের মাধ্যমে এই ‘ডোনেশন’ দেন। এই অর্থ দিয়ে ২০১৯ সালে ১৫ কাঠা জমি কেনা হয়েছিল।
কালো টাকা কীভাবে সাদা হত?
প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠদের বাড়ি থেকে ইডি বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ উদ্ধার করেছিল। সেই অর্থ কীভাবে ‘সাদা’ করা হয়েছিল, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিতে রাজসাক্ষী হিসেবে কল্যাণময়ের বয়ান ব্যবহার করতে চাইছে ইডি। তদন্তকারী সংস্থা মনে করছে, কল্যাণময়ের জবানবন্দি এই মামলায় এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় আনতে পারে।
এই মামলায় কল্যাণময়ের রাজসাক্ষী হওয়ার সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। তার স্বীকারোক্তি কি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিপদ আরও বাড়াবে? এই মামলার ভবিষ্যৎ কোনদিকে মোড় নেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়!

