বিজেপির প্রথম মহিলা সভাপতি হতে চলেছেন সুধা যাদব?
ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে নারীদের ভূমিকা বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ হলেও, বিজেপি এখনও পর্যন্ত কখনও কোনও মহিলাকে দলের সর্বোচ্চ পদে বসায়নি। তবে এবার সেই ধারা বদলাতে পারে। আসন্ন বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে, বিজেপির অন্দরমহলে এক নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে— বিজেপির প্রথম মহিলা সভাপতি হতে চলেছেন সুধা যাদব?
সুধা যাদব একজন অপরিচিত কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, যিনি দীর্ঘদিন ধরে বিজেপির সাংগঠনিক কাজের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন। কার্গিল শহিদ অজয় সিং যাদবের স্ত্রী সুধার রাজনীতিতে প্রবেশ হয় এক ব্যক্তিগত শোককে শক্তিতে পরিণত করার মধ্য দিয়ে। নরেন্দ্র মোদীর প্রত্যক্ষ সমর্থনে, তিনি বিজেপির সংগঠনে ধাপে ধাপে উত্থান ঘটিয়েছেন, এবং বর্তমানে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক সংস্থা সংসদীয় বোর্ডের একমাত্র মহিলা সদস্য।
বিজেপিতে মহিলাদের নেতৃত্ব: নতুন মোড়?
বিজেপি দীর্ঘদিন ধরেই অনগ্রসর শ্রেণি, দলিত ও জনজাতিদের রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার কৌশল নিয়ে এগিয়ে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী নিজে ওবিসি সম্প্রদায়ের, আর তিনিই প্রথমবার একজন জনজাতি মহিলা, দ্রৌপদী মুর্মুকে রাষ্ট্রপতি পদে বসিয়েছেন। তাঁর আগেই, দলিত নেতা রামনাথ কোবিন্দকে রাষ্ট্রপতি করা হয়েছিল। কিন্তু এতদিন বিজেপি কখনও নিজের দলের সভাপতি হিসেবে কোনও মহিলাকে মনোনীত করেনি। এবার সেই ইতিহাস বদলানোর ইঙ্গিত মিলছে, এবং সম্ভাব্য মুখ হিসেবে উঠে আসছে সুধা যাদবের নাম।
সুধা যাদবের রাজনৈতিক উত্থান
সুধার জন্ম ও বেড়ে ওঠা হরিয়ানায়। তিনি আইআইটি রুরকি থেকে রসায়নে স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি সম্পন্ন করেছেন। তাঁর স্বামী কার্গিল যুদ্ধে শহিদ হওয়ার পর, তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেন এবং ১৯৯৯ সালে প্রথমবার মহেন্দ্রগড় লোকসভা আসন থেকে নির্বাচনে লড়েন। বিজেপির হয়ে প্রথমবারেই কংগ্রেসের হেভিওয়েট নেতা রাও ইন্দ্রজিৎ সিংকে ১.৩৯ লক্ষ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন।
তবে এরপরের দুই নির্বাচনে তিনি হেরে যান, কিন্তু মোদীর সমর্থনে ২০১৪ সালের পর তাঁর রাজনৈতিক উত্থান আবার শুরু হয়। তিনি ২০১৫ সালে বিজেপির ওবিসি মোর্চার কেন্দ্রীয় ইনচার্জ হন, এরপর ২০১৯ থেকে ২০২২ পর্যন্ত জাতীয় অনগ্রসর শ্রেণি কমিশনের সদস্য হিসেবে কাজ করেন। এই সময়েই তিনি বিজেপির সংসদীয় বোর্ডে স্থান পান, যা দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারণী কমিটি।
বিজেপির কৌশল: বিহার নির্বাচন ও সামাজিক সমীকরণ
বিশ্লেষকদের মতে, বিহার নির্বাচনের আগেই বিজেপি যদি প্রথম মহিলা সভাপতিকে দায়িত্ব দেয়, তাহলে তা দলের জন্য একটি বড় রাজনৈতিক বার্তা হতে পারে। বিহারে ওবিসি ও যাদব সম্প্রদায়ের ভোট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি সুধা বিজেপির সভাপতি হন, তাহলে তা লালু প্রসাদ যাদবের নেতৃত্বাধীন আরজেডির ভোটব্যাংকে বড় ধাক্কা দিতে পারে।
তবে এখানেই প্রশ্ন উঠছে— বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব কি সত্যিই এমন একটি সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত? দলীয় রাজনীতিতে এখনো পুরুষদের আধিপত্য অনেক বেশি, এবং এখনও পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে বিজেপির অন্দরমহলে জোর জল্পনা চলছে যে, যদি বড় কোনও রাজনৈতিক চমক না আসে, তাহলে সুধা যাদবই হতে পারেন বিজেপির প্রথম মহিলা সভাপতি।
তাহলে কি ইতিহাস গড়তে চলেছেন সুধা যাদব?
যদিও এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হয়নি, তবে সুধার উত্থান এবং মোদীর সমর্থন তাঁকে এই পদে পৌঁছে দিতে পারে। যদি সত্যিই তিনি বিজেপির সভাপতি হন, তাহলে এটি ভারতীয় রাজনীতিতে এক নতুন যুগের সূচনা হবে, যেখানে নারীরা শুধুমাত্র সাংবিধানিক পদেই নয়, বরং দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বেও জায়গা করে নেবেন। এখন দেখার, বিজেপি কি সত্যিই একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে?
ভারতের উপর পাল্টা শুল্ক চাপাচ্ছেন ট্রাম্প! ঘোষণা করলেন নির্দিষ্ট তারিখও