যাদবপুর বিতর্কে ব্রাত্য!
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে ঘিরে বিতর্কের পারদ যখন চরমে, তখনই দেখা গেল এক আশ্চর্য দৃশ্য— তৃণমূল কংগ্রেসের সরকারি সোশ্যাল মিডিয়া পেজ ২৪ ঘণ্টা ধরে সম্পূর্ণ নীরব! দল যেখানেই আন্দোলন করুক না কেন, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে কোনও প্রতিক্রিয়া ছিল না। কেন? এটাই এখন দলের অন্দরেই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
🔵 সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্রাত্যের প্রতি এত শীতলতা কেন?
শনিবার দুপুরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর গাড়ি ঘিরে উত্তেজনা, ধাক্কাধাক্কি ও মারধরের অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনার পরপরই তৃণমূল নেতারা পথে নামেন, বিক্ষোভ দেখান, কিন্তু দলের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ ও এক্স (সাবেক টুইটার) সম্পূর্ণ নীরব ছিল।
📌 কী ঘটেছিল?
✅ শনিবার রাতে তৃণমূলের আইটি সেলের তরফে একটিও পোস্ট আসেনি।
✅ রবিবার দুপুর পর্যন্ত দলের কোনও অফিশিয়াল প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
✅ অবশেষে রবিবার বিকেল ৫টার পর প্রথমবার ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয় দলের পেজে, তাও খুবই সংক্ষিপ্ত এবং ‘নিরপেক্ষ’ ভাষায়।
দলেরই অনেক নেতা মনে করছেন, এই পোস্ট যেন ‘করতে হয় বলে করা’ গোছের। দলের সোশ্যাল মিডিয়ার এমন আচরণে বিস্মিত তৃণমূলের একাংশও। কেউ কেউ ব্যঙ্গ করে বলছেন, “এ যেন চাঁদ সওদাগরের বাঁ হাতে মনসাপুজো!”
🔴 সিপিএমের প্রশ্নের পরই কি নড়ল তৃণমূল?
তৃণমূলের এই নীরবতা প্রথম নজরে আনেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী। রবিবার সকালে তিনি প্রকাশ্যে প্রশ্ন করেন—
📢 “ব্রাত্য বসুর ঘটনার পরও তৃণমূলের অফিশিয়াল পেজে কোনও পোস্ট নেই কেন?”
বিরোধীদের এই খোঁচা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তৃণমূলের পেজ থেকে প্রথম পোস্টটি করা হয়। অথচ, সন্দেশখালির মতো আরও বড় বড় ইস্যুতেও তৃণমূল খুব দ্রুত ডিজিটাল ময়দানে পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেয়। তাহলে ব্রাত্যের ক্ষেত্রে এই ব্যতিক্রম কেন?
🔵 মিছিলে নেতারা, কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি নেই!
📌 শনিবার রাতেই তৃণমূলের একাধিক নেতা, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, সাংসদ সায়নী ঘোষসহ যাদবপুর ও টালিগঞ্জের নেতারা মিছিল করেন।
📌 কিন্তু দলের অফিশিয়াল সোশ্যাল মিডিয়া পেজে সেই মিছিলের কোনও ছবিও দেখা যায়নি!
📌 দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও যখন এই মিছিলকে সমর্থন করেছেন, তখন সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন চুপচাপ কেন?
তৃণমূলের একাংশের মতে, এটি শুধুই ধোঁয়াশা নয়, বরং ইচ্ছাকৃতভাবেই ব্রাত্যের বিষয়টি নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় ডিজিটাল টিম দূরত্ব বজায় রেখেছে।
🔴 দেবাংশুর ব্যাখ্যা কতটা যুক্তিযুক্ত?
তৃণমূলের আইটি সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত দেবাংশু ভট্টাচার্য জানিয়েছেন—
📢 “দলের অফিশিয়াল পেজ থেকে এসব বিষয়ে পোস্ট করা হয় না, কারণ এতে সিপিএম বা মাওবাদীদের অযথা গুরুত্ব দেওয়া হবে।”
কিন্তু দলের মধ্যেই অনেকের প্রশ্ন—
✅ তাহলে সন্দেশখালির ঘটনায় কেন দল আগেভাগেই প্রতিক্রিয়া দিয়েছিল?
✅ এখানে কোনও মন্ত্রী আক্রান্ত হয়েছেন, তা হলে এত ‘ধীর প্রতিক্রিয়া’ কেন?
✅ যদি ধোঁয়াশাই থাকে, তবে মুখ্যমন্ত্রী যখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তখন সমস্যা কোথায়?
বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতাই মনে করছেন, দলের ‘উপরের মহল’ থেকেই ব্রাত্যের বিষয়ে সাবধানী থাকতে বলা হয়েছে।
🔵 তাহলে ‘দূরত্ব’ রয়েছেই?
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার পর থেকে ব্রাত্য বসুকে কেন্দ্র করে দলীয় নেতৃত্বের ভেতরেই যে কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তা এই সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতিক্রিয়াতেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
📌 কিছুদিন আগেই নেতাজি ইন্ডোরের সভায় মনে করা হয়েছিল, দলীয় নেতৃত্বের মধ্যেকার দূরত্ব ঘুচে গেছে।
📌 কিন্তু যাদবপুর কাণ্ডের পর দলের সোশ্যাল মিডিয়ার এই আচরণ দেখে অনেকেই মনে করছেন, ব্রাত্যের প্রতি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মনোভাব ‘শীতল’ রয়েছে।
📌 এটাই কি ব্রাত্য বসুর প্রতি দলের বর্তমান অবস্থান?— এমন প্রশ্ন ঘুরছে দলের অন্দরেই।
🔴 তাহলে ব্রাত্য বসুর ভবিষ্যৎ কী?
📢 তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব কি ব্রাত্য বসুর প্রতি পুরোপুরি আস্থা রাখছে?
📢 নাকি ভবিষ্যতে তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে নতুন কোনও সমীকরণ তৈরি হতে পারে?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর এখনো স্পষ্ট নয়, তবে একটা বিষয় স্পষ্ট— যাদবপুর কাণ্ডের পর ব্রাত্য বসু যতটা আক্রমণাত্মক ভূমিকা পালন করছেন, ততটা জোর দলের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে দেখা যাচ্ছে না।
এই নীরবতা রাজনীতির অন্দরেই নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে।
‘প্যাক-ফ্যাক’ থেকে ‘আমার আইপ্যাক’— কেন বদলে গেল মমতার অবস্থান?

