Monday, December 1, 2025

লাদাখে ‘মাতৃত্ব পর্যটন’: খাঁটি আর্য রক্তের সন্ধানে আসছেন বিদেশি মহিলারা!

Share

লাদাখে ‘মাতৃত্ব পর্যটন’!

হিমালয়ের কোলে অবস্থিত লাদাখ শুধু তার অপার্থিব সৌন্দর্যের জন্যই বিখ্যাত নয়, বরং এখানে লুকিয়ে আছে এক রহস্যময় অধ্যায়— ‘আর্যগ্রাম’ নামে পরিচিত গ্রামগুলিতে বিশুদ্ধ আর্য রক্তের সন্ধান!

এমনই বিশ্বাস নিয়ে প্রতি বছর বিদেশি, বিশেষ করে জার্মান তরুণীরা ছুটে আসেন লাদাখের ব্রোকপা সম্প্রদায়ের পুরুষদের কাছে। তাঁদের লক্ষ্য একটাই— খাঁটি আর্য রক্তের সন্তান ধারণ করা!

কিন্তু সত্যিই কি এখানে আলেকজান্ডারের সেনাদের বংশধরেরা বাস করেন? কীসের এত আকর্ষণ? চলুন, জেনে নিই এই ‘মাতৃত্ব পর্যটন’ রহস্যের আসল গল্প।


🔷 ব্রোকপারা কারা?

লাদাখের কার্গিল থেকে প্রায় ১৩০ কিমি দূরে দাহ, বিমা, হানু, দারচিক, গারকোন নামে কয়েকটি গ্রাম আছে, যেগুলোকে বলা হয় ‘আর্যগ্রাম’। এখানকার ব্রোকপা সম্প্রদায় বিশ্বাস করেন, তাঁরা আলেকজান্ডারের সেনাদের বংশধর।

👉 শারীরিক গঠনে তাঁরা বেশ আলাদা—
✔ ফর্সা ত্বক
✔ নীলচে বা হালকা বাদামি চোখ
✔ সোনালি বা বাদামি চুল
✔ উন্নত চোয়াল

তাঁদের চেহারার এই ইউরোপীয় বৈশিষ্ট্যই বহু গবেষকের কৌতূহল বাড়িয়েছে।


🔷 খাঁটি আর্য রক্তের আকর্ষণ!

ব্রোকপারা নিজেদের বিশুদ্ধ আর্য বলে দাবি করেন এবং বহিরাগতদের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে যেতে চান না, যাতে তাঁদের রক্ত বিশুদ্ধ থাকে। তবে বিদেশি মহিলারা ঠিক এই কারণেই এখানে আসেন!

👉 প্রতি বছর জার্মানির মতো দেশ থেকে অনেক তরুণী আসেন লাদাখে, বিশেষ করে এই ব্রোকপা পুরুষদের ঔরসে সন্তানধারণ করতে।
👉 তাঁরা চান তাঁদের সন্তানও যেন আর্যদের মতো দেখতে হয়— ফর্সা ত্বক, নীল চোখ, সোনালি চুল এবং উন্নত শারীরিক গঠন।
👉 এর জন্য তাঁরা স্থানীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করেন এবং সন্তানধারণের পর ফিরে যান নিজেদের দেশে।

এই বিশেষ ‘মাতৃত্ব পর্যটন’ বা ‘প্রেগন্যান্সি ট্যুরিজম’ গত কয়েক বছর ধরে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।


🔷 কীভাবে এত দূর এল এই বিশ্বাস?

🔹 আলেকজান্ডারের ভারত অভিযান:
খ্রিস্টপূর্ব ৩২৬ অব্দে, আলেকজান্ডার সিন্ধু নদ অতিক্রম করে ভারত অভিযানে আসেন। কিন্তু দীর্ঘ যুদ্ধের ক্লান্তিতে তিনি ফিরে যান, রেখে যান কিছু সেনাকে।

🔹 এই সেনাদের বংশধরেরাই কি আজকের ব্রোকপা?
বিশেষজ্ঞরা এখনো নিশ্চিত নন। তবে ব্রোকপাদের শারীরিক বৈশিষ্ট্য ও লোককাহিনি থেকে এই বিশ্বাস জন্মেছে।


🔷 আসল সত্য কতটা?

ব্রোকপাদের এই দাবির পক্ষে কোনও ডিএনএ বা জিনগত গবেষণা নেই। তবে ২০০৭ সালে সঞ্জীব শিবানের তৈরি তথ্যচিত্র ‘আচতুং বেবি: ইন সার্চ অফ পিউরিটি’ দেখিয়েছিল, কীভাবে জার্মান তরুণীরা ব্রোকপাদের সঙ্গে সন্তান ধারণের জন্য সম্পর্ক তৈরি করছেন।

👉 এমনকি, অনেকে সন্তান ধারণের পর পুরুষদের অর্থ ও উপহারও দিচ্ছেন!

কিন্তু ব্রোকপারা এই বিষয়ে খোলাখুলি কিছু বলেন না। তাঁরা নিজেদের সংস্কৃতি ও জীবনযাপনকে লোকচক্ষুর আড়ালে রাখতে চান।


🔷 লাদাখের পর্যটনে নতুন মাত্রা?

ব্রোকপাদের গ্রাম একসময় বহিরাগতদের জন্য বন্ধ ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে তা পর্যটনের অংশ হয়ে উঠছে।
কিছু মানুষ গবেষণা করতে আসেন।
কিছু মানুষ শুধু কৌতূহলের কারণে আসেন।
আর কিছু বিদেশি মহিলার লক্ষ্য একটাই— ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ‘শুদ্ধ আর্য রক্ত’ সংরক্ষণ করা!

কিন্তু এই বিশ্বাস বাস্তব, না শুধুই কিংবদন্তি? তা নিয়ে বিতর্ক থেকেই যাচ্ছে।


🔚 শেষ কথা

ব্রোকপারা কি সত্যিই আলেকজান্ডারের সেনাদের বংশধর?
বিদেশি মহিলারা কেন এত আকৃষ্ট হন এই সম্প্রদায়ের প্রতি?

এই রহস্য হয়তো পুরোপুরি উন্মোচিত হয়নি, তবে ব্রোকপাদের জীবনযাত্রা এবং লাদাখের ‘মাতৃত্ব পর্যটন’ নিয়ে আগ্রহ ক্রমশ বাড়ছে।

‘প্যাক-ফ্যাক’ থেকে ‘আমার আইপ্যাক’— কেন বদলে গেল মমতার অবস্থান?

Read more

Local News