কোন দিকে মোড় নিচ্ছে কেআইআইটি-কাণ্ড?
ভুবনেশ্বরের কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনোলজি (কেআইআইটি)-তে নেপালি ছাত্রীর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় উত্তাল গোটা বিশ্ববিদ্যালয়। বিক্ষোভ, পুলিশি হস্তক্ষেপ, ছাত্রদের উপর হামলা— সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হচ্ছে। বিষয়টি এখন ভারত-নেপাল সম্পর্কেরও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে পরিণত হয়েছে।
🔴 কী ঘটেছিল?
ঘটনার সূত্রপাত ১৬ ফেব্রুয়ারি। ওড়িশার কেআইআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেল থেকে নেপালের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী প্রকৃতি লামসালের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে দাবি করা হয়, এটি আত্মহত্যার ঘটনা। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রকৃতির সহপাঠীরা প্রতিবাদে সরব হন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, প্রকৃতির সঙ্গে অদ্বিক শ্রীবাস্তব নামে এক সহপাঠীর সম্পর্ক ছিল, যিনি তাঁকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করতেন বলে অভিযোগ। দাবি করা হয়, এই মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন প্রকৃতি।
⚡ বিক্ষোভ, হামলা ও ছাত্র উচ্ছেদ!
প্রকৃতির মৃত্যুর পরপরই নেপালি ছাত্রছাত্রীরা প্রতিবাদে ফেটে পড়েন। অভিযোগ ওঠে,
✅ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্রীর অভিযোগ আমল নেয়নি।
✅ প্রকৃতির উপর মানসিক নির্যাতন চললেও কলেজ প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।
✅ তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল।
এমন পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাসের পরিবেশ আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তারক্ষীদের বিরুদ্ধে নেপালি ছাত্রদের মারধরের অভিযোগ ওঠে। বিক্ষোভরত ছাত্রদের হস্টেল খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর শতাধিক নেপালি ছাত্রছাত্রী ভারত ছেড়ে দেশে ফিরে যেতে বাধ্য হন!
🔍 পুলিশি তদন্ত ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভূমিকা
প্রকৃতির মৃত্যুতে অদ্বিক শ্রীবাস্তবকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে আটক করে পুলিশ। কিন্তু এর আগেই একাধিকবার প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন প্রকৃতি, যা নিয়ে পুলিশের তদন্ত শুরু হয়েছে।
✅ কেন কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি?
✅ কেন ছাত্রদের জোর করে হস্টেল ছাড়তে বাধ্য করা হল?
✅ বিক্ষোভ দমনে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করা হল কেন?
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তারক্ষী ও কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও পুলিশ প্রথমে কাউকে গ্রেফতার করেনি। পরে পাঁচজনকে আটক করা হলেও তারা পরদিনই জামিনে মুক্ত হয়ে যায়।
🌍 আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: ভারত-নেপাল সম্পর্কে নতুন মোড়?
এই ঘটনার পর নেপালের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ভারতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে চিঠি পাঠিয়ে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
✅ নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি ওলি শর্মা নির্দেশ দিয়েছেন, নয়াদিল্লির নেপাল দূতাবাস থেকে দুই কর্মকর্তাকে ওড়িশায় পাঠিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে।
✅ নেপাল সরকারের হুঁশিয়ারি – এই ধরনের ঘটনা চলতে থাকলে তারা নেপালি ছাত্রদের ওড়িশায় উচ্চশিক্ষার অনুমতি দেওয়া বন্ধ করবে!
✅ নেপাল থেকে আসা ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারত সরকারের উপর চাপ বাড়ছে।
🇮🇳 ভারতের প্রতিক্রিয়া
ভারতের তরফে ওড়িশার উচ্চশিক্ষামন্ত্রী সূর্যবংশী সুরজ আশ্বাস দিয়েছেন, নেপালি ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
✅ প্রশাসন জানিয়েছে, নেপালি ছাত্রদের ক্যাম্পাসে ফিরতে দেওয়া হবে এবং তাঁদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে।
✅ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও জানিয়েছে, ভবিষ্যতে এমন ঘটনা যাতে না ঘটে, তা নিশ্চিত করা হবে।
❓ তাহলে এখন কী হবে?
✔️ নেপাল সরকারের হস্তক্ষেপের ফলে ভারত সরকার ও ওড়িশা প্রশাসনের উপর চাপ তৈরি হয়েছে।
✔️ অদ্বিক শ্রীবাস্তবের বিরুদ্ধে মামলা চালু থাকলেও, প্রকৃতির অভিযোগ কেন উপেক্ষিত হয়েছিল, তা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।
✔️ নেপালি ছাত্রদের নিরাপত্তার বিষয়টি আন্তর্জাতিক আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছে।
এই ঘটনার পর থেকে ভারত-নেপাল সম্পর্ক কোন দিকে যায়, এখন সেটাই দেখার। তবে প্রকৃতির মৃত্যু শুধু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বিদেশি ছাত্রদের নিরাপত্তা ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রশাসনিক গাফিলতির একটি বড় উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এখন প্রশ্ন একটাই – এ ঘটনায় কি প্রকৃত ন্যায়বিচার মিলবে, নাকি রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক টানাপোড়েনে চাপা পড়ে যাবে প্রকৃতির মৃত্যু?
শুরুতেই ছন্দহীন শামি, এক ওভারে ১১ বল! বুমরাহের রেকর্ড ভাঙলেন বাংলার পেসার