Tuesday, February 25, 2025

একমাত্র রোজগেরে মেয়েকে হারিয়ে দিশেহারা মা, ৫০ লক্ষ টাকা ঋণের বোঝা মাথায় চট্টোপাধ্যায় পরিবার

Share

একমাত্র রোজগেরে মেয়েকে হারিয়ে দিশেহারা মা!

স্বামীকে আগেই হারিয়েছেন, মেয়ে ছিল একমাত্র ভরসা। এখন সে-ও নেই। ক্যানসারে আক্রান্ত স্বামীর চিকিৎসার জন্য নেওয়া ৫০ লক্ষ টাকার ঋণ শোধ করবেন কীভাবে? পানাগড় দুর্ঘটনার পর যেন সব শেষ হয়ে গেল তনুশ্রী চট্টোপাধ্যায়ের।


বিপর্যস্ত পরিবার, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ

হুগলির চন্দননগরের বাসিন্দা তনুশ্রী চট্টোপাধ্যায় এখনও বিশ্বাসই করতে পারছেন না, তাঁর একমাত্র মেয়ে সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায় আর নেই। রবিবার রাতে পানাগড়ে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৭ বছরের ইভেন্ট ম্যানেজার ও নৃত্যশিল্পী সুতন্দ্রা।

তার আগে থেকেই অর্থনৈতিক সঙ্কটে জর্জরিত ছিল চট্টোপাধ্যায় পরিবার। কয়েক বছর আগে তনুশ্রীর স্বামী সুকান্ত চট্টোপাধ্যায় ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তিনি ছিলেন রেলের ঠিকাদার। চিকিৎসার জন্য বাড়ি ও দোকান বন্ধক রেখে ব্যাংক থেকে ৫০ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। কিন্তু রোগের কাছে হার মানতে হয়। স্বামীর মৃত্যুর পর সমস্ত দায়ভার এসে পড়ে সুতন্দ্রার ওপর।

একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হিসাবে মা ও পরিবারের হাল ধরেছিলেন তিনি। কিন্তু মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে সেই আশাটুকুও শেষ হয়ে গেল।


ব্যাঙ্কের ঋণের বোঝা, মাথার ছাদ হারানোর আশঙ্কা

মায়ের সঙ্গে সবসময় একটাই চিন্তা ছিল সুতন্দ্রার— কীভাবে এত বড় ঋণ শোধ করা যাবে? ইভেন্টের কাজ করে সামান্য কিছু রোজগার করলেও তা ছিল ঋণের তুলনায় নগণ্য।

📌 তনুশ্রী চট্টোপাধ্যায় বলেন,
“প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা দেনা রয়েছে আমাদের। সুতন্দ্রা দিনরাত পরিশ্রম করছিল, যাতে এই ঋণ শোধ করা যায়। কিন্তু এখন? আমার মেয়েটাই চলে গেল!”

📌 প্রতিবেশী রুমেলা লাহা জানান,
“সুতন্দ্রা সবসময় বলত, কীভাবে লোন শোধ করে বাড়িটা বাঁচাবে। দোকানটা বিক্রি করার কথাও ভাবছিল। কিন্তু এখন আমাদেরও ভয় করছে, ব্যাঙ্ক হয়তো আমাদের মাথার ছাদটাও কেড়ে নেবে!”

📌 পরিবারের আরও এক সদস্য বলেন,
“ব্যাঙ্ক থেকে সোমবারই নোটিস এসেছে। এখন কী হবে? বৃদ্ধা ঠাকুরমা, অসহায় মা— এই পরিবার বাঁচবে কীভাবে?”


নাচ ছিল প্রাণ, কিন্তু জীবনযুদ্ধ ছিল কঠিন

ছোট থেকেই নাচের প্রতি দারুণ টান ছিল সুতন্দ্রার। কত জায়গায় অনুষ্ঠান করেছে, কত পুরস্কার জিতেছে! কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর সেই শখ আর ভালোবাসা হারিয়ে গিয়েছিল জীবনের কঠিন বাস্তবতার সামনে।

প্রতিবেশীরা জানান, তিনি চুপচাপ, চিন্তাগ্রস্ত থাকতেন সবসময়। নিজে কষ্ট করে উপার্জন করলেও সংসারের কাউকে বুঝতে দিতেন না।

“ও নিজে কতটা স্ট্রাগল করত, সেটা বুঝতে দিত না। সবসময় হাসিখুশি থাকত। ভাবতাম, ছোট মেয়ে, এত চিন্তা করে কী হবে! কিন্তু আজ দেখছি, কত বড় লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিল,” বলেন এক আত্মীয়া।


পরিবারের শেষ আশা— তনুশ্রীর চাকরির আবেদন

মঙ্গলবার সকালে চন্দননগরের মেয়র রাম চক্রবর্তী শোকাহত পরিবারকে দেখতে যান। সেই সময় সুতন্দ্রার বৃদ্ধা ঠাকুরমা কল্পনা চট্টোপাধ্যায় কাঁদতে কাঁদতে মেয়রের কাছে একটাই অনুরোধ করেন— তনুশ্রীর যেন একটা চাকরির ব্যবস্থা করা হয়।

📌 তিনি বলেন,
“বাড়িতে দু’জন বৃদ্ধা। আমাদের দেখাশোনার কেউ নেই। ওষুধ, চিকিৎসার খরচ কিভাবে চলবে?”

এখন একটাই প্রশ্ন, প্রশাসন কি এই অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়াবে? নাকি জীবনযুদ্ধে একা লড়াই করতে হবে তনুশ্রী চট্টোপাধ্যায়কে?

শুরুতেই ছন্দহীন শামি, এক ওভারে ১১ বল! বুমরাহের রেকর্ড ভাঙলেন বাংলার পেসার

Read more

Local News