Monday, December 1, 2025

তেল দিয়ে রাজত্বের স্বপ্ন! আমেরিকার তাঁবেদারি করে কী হারাল সৌদি আরব?

Share

তেল দিয়ে রাজত্বের স্বপ্ন!

কখনও ইসলামের তীর্থভূমি হওয়ার সুবাদে, কখনও বিশাল তেলসম্পদকে হাতিয়ার করে আরব দুনিয়ার নেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল সৌদি আরব। এক সময় তেল রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ করে পশ্চিমা দুনিয়াকেও চাপে ফেলার ক্ষমতা ছিল রিয়াধের হাতে। কিন্তু সময়ের চাকা ঘুরেছে! আমেরিকার প্রতি অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতা এবং রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্তের কারণে সৌদি আরব ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে। আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে তাদের গুরুত্বও কমছে


সৌদি আরবের উত্থান ও পতনের গল্প

🔥 নেতা হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা থেকে শুরু

১৯৭০-এর দশকে সৌদি আরব যখন বিশাল তেল ভান্ডারের মালিক, তখনই শুরু হয় তাদের ক্ষমতা বৃদ্ধির খেলা। তারা মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্ব নিতে তেলকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে

👉 ইসলামিক বিশ্বের প্রভাবশালী দেশ হওয়া— কারণ, মক্কা ও মদিনার মতো ইসলামের দুই পবিত্র স্থান রয়েছে তাদের দেশে।
👉 তেল রপ্তানি বন্ধের হুমকি দিয়ে পশ্চিমা বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ— বিশেষত ১৯৭৩ সালের ইয়ম কিপুর যুদ্ধে ইজরায়েলকে সমর্থন করায় আমেরিকা ও ইউরোপের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিল রিয়াধ।
👉 ওপেক (OPEC)-এর মাধ্যমে তেলের দামে নিয়ন্ত্রণ আনা— যাতে বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলিও সৌদি আরবের ওপর নির্ভরশীল থাকে।

এই নীতির ফলে সৌদি আরব অল্প সময়ের মধ্যেই বিশ্ব রাজনীতিতে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করে


⏳ ধীরে ধীরে সৌদি আরবের পতন

যেখানে এক সময় সৌদি আরব ছিল আরব দুনিয়ার একচ্ছত্র নেতা, সেখানে বর্তমানে তারা নিজেরাই সমস্যায় জর্জরিত

🔴 ইরানের সঙ্গে বিবাদ— সৌদি আরব এবং শিয়া অধ্যুষিত ইরান চিরকালই প্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরানের সামরিক ও কূটনৈতিক শক্তি অনেক বেড়ে গেছে
🔴 কাতারের সঙ্গে শত্রুতা— ২০১৭ সালে সৌদি আরব কাতারের বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপ করেছিল, কিন্তু উল্টো কাতার আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে এবং সৌদির প্রতি অবিশ্বাস বেড়েছে।
🔴 প্যালেস্টাইনিদের ক্ষোভ— আগে সৌদি আরব প্যালেস্টাইনের স্বার্থ রক্ষায় সরব ছিল, কিন্তু সম্প্রতি তারা ইজরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামত করছে, যা মুসলিম বিশ্বে তাদের জনপ্রিয়তা কমিয়েছে।
🔴 আমেরিকা নির্ভরতা— সৌদি যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমন (MBS) আমেরিকার ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। কিন্তু আমেরিকা ধীরে ধীরে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের আগ্রহ কমাচ্ছে। ফলে সৌদি আরব একাকী হয়ে পড়ছে
🔴 তেলের ওপর নির্ভরশীলতা বিপদের কারণ— বিশ্ব ধীরে ধীরে পরিবেশবান্ধব জ্বালানির দিকে এগোচ্ছে, ফলে সৌদির তেলের চাহিদা কমছে এবং ভবিষ্যতে এই খাত থেকে তাদের আয়ের সম্ভাবনা কম।


🔍 কীভাবে সৌদি আরব নিজের ফাঁদে আটকে গেল?

১️⃣ নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পারছে না— আমেরিকার সমর্থন পেতে গিয়ে সৌদি আরব নিজের নীতি নির্ধারণের ক্ষমতা হারিয়েছে
২️⃣ পশ্চিমা দুনিয়ার কাছে গুরুত্ব হারাচ্ছে— আমেরিকা, ইউরোপ এখন তেলের ওপর নির্ভরশীলতা কমাচ্ছে, ফলে সৌদির প্রভাব কমছে।
3️⃣ রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্ত— ইয়েমেন যুদ্ধ, কাতারের ওপর অবরোধ, প্যালেস্টাইন প্রসঙ্গে দ্বিধাদ্বন্দ্ব—সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে সৌদি আরবের গ্রহণযোগ্যতা কমছে
4️⃣ ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত— “Vision 2030” প্রকল্পের মাধ্যমে সৌদি আরব তেলের বিকল্প খুঁজতে চাইছে, কিন্তু পর্যাপ্ত অর্থ ও পরিকল্পনার অভাবে প্রকল্পটি ধুঁকছে।


🚨 সৌদি আরব কি মধ্যপ্রাচ্যের ‘অতীতের শক্তি’ হয়ে যাবে?

কয়েক দশক আগে সৌদি আরব তেল আর ইসলামের শক্তি দিয়ে বিশ্বনেতৃত্বের দিকে এগোচ্ছিল। কিন্তু কূটনৈতিক ভুল, আমেরিকার প্রতি অন্ধভক্তি এবং আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের উত্থান তাদের শক্তি কমিয়ে দিচ্ছে

যদি তারা নিজের স্বার্থে স্বাধীন নীতি নির্ধারণ না করে, তবে হয়তো একদিন সৌদি আরব শুধুই ‘একটা তেলের দেশ’ হয়ে থাকবে, বিশ্বনেতৃত্বের স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে

গবেষণার আড়ালে সামরিক পরিকল্পনা? সমুদ্রের গভীরে চিনের রহস্যময় কেন্দ্র ঘিরে উদ্বেগ

Read more

Local News