দিল্লির ‘লেডি ডন’ পুলিশের জালে!
দীর্ঘদিন ধরেই ছিলেন পুলিশের নজরে, কিন্তু চতুর কৌশলে বারবার হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছিলেন। অবশেষে দিল্লির ‘লেডি ডন’ জোয়া খানকে হাতেনাতে ধরে ফেলল পুলিশ। উত্তর-পূর্ব দিল্লি থেকে ২৭০ গ্রাম হেরোইন-সহ গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁকে। এই বিপুল পরিমাণ মাদকের বাজারদর প্রায় এক কোটি টাকা!
গ্যাংস্টারের স্ত্রী থেকে ‘ডন’ হয়ে ওঠার গল্প
জোয়ার পরিচয় শুধু মাদক কারবারির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তিনি কুখ্যাত গ্যাংস্টার হাশিম বাবার তৃতীয় স্ত্রী। দিল্লির অপরাধ জগতে দীর্ঘদিন ধরেই দাপট দেখিয়ে চলেছে হাশিমের গ্যাং। খুন, চোরাচালান, তোলাবাজি— নানা অপরাধের দায়ে বর্তমানে জেলে রয়েছেন হাশিম।
কিন্তু তাঁর অনুপস্থিতিতেই মাদক সাম্রাজ্যের পুরো দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন জোয়া। এত দিন পুলিশের সন্দেহের তালিকায় ছিলেন তিনি, কিন্তু প্রত্যক্ষ প্রমাণের অভাবে ধরা যাচ্ছিল না। এবার দিল্লি পুলিশের স্পেশ্যাল সেলের গোয়েন্দারা কৌশলে জোয়াকে ফাঁদে ফেলে হাতেনাতে পাকড়াও করেন।
গ্ল্যামারের আড়ালে অপরাধের ছায়া
জোয়া কেবল মাদক কারবারের মাস্টারমাইন্ডই নন, বরং তাঁর বিলাসবহুল জীবনযাত্রাও চমকে দেওয়ার মতো। সমাজের উঁচু স্তরের মানুষদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল তাঁর। পার্টি, দামি পোশাক, গয়না— সবকিছুতেই তিনি ছিলেন ঝলমলে।
পুলিশের দাবি, নিজের অপরাধমূলক কাজকে আড়াল করতেই জোয়া এই কৌশল নিয়েছিলেন। তিনি নিয়মিত বিলাসবহুল অনুষ্ঠানে যেতেন, সমাজমাধ্যমে সক্রিয় ছিলেন এবং তাঁর বহু অনুগামীও ছিল। এইসব কৌশলের ফলে সাধারণ মানুষের চোখে তিনি একজন গ্ল্যামারাস ‘সোশ্যালাইট’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন, অপরাধ জগতের ডন হিসেবে নয়।
পরিবারজুড়ে অপরাধের ছায়া
জোয়ার পরিবারও অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ২০২৪ সালে তাঁর মা গ্রেফতার হয়েছিলেন যৌন পাচারের অভিযোগে। যদিও বর্তমানে জামিনে মুক্ত তিনি। এছাড়াও, জোয়ার বাবা দীর্ঘদিন ধরেই মাদক কারবারের সঙ্গে যুক্ত।
দিল্লির অপরাধ জগতে হাশিম বাবার গ্যাং অন্যতম শক্তিশালী। এছাড়াও সেখানে ছেনু গ্যাং ও নাসির পহেলওয়ান গ্যাং সক্রিয় রয়েছে। হাশিমকে জেলে পাঠানোর পর, অনেকেই মনে করেছিল তাঁর গ্যাং দুর্বল হয়ে পড়বে। কিন্তু জোয়া দায়িত্ব নেওয়ার পর গ্যাং আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে।
অবশেষে পুলিশের ফাঁদে ‘লেডি ডন’
বহুদিন ধরেই দিল্লি পুলিশের স্পেশ্যাল সেল জোয়াকে ধরার চেষ্টা চালাচ্ছিল। কিন্তু তাঁর চতুর কৌশলের কারণে বারবার ব্যর্থ হচ্ছিল পুলিশ। এবার কড়া নজরদারি ও তথ্যভিত্তিক তদন্তের মাধ্যমে তাঁকে উত্তর-পূর্ব দিল্লির এক আস্তানা থেকে মাদক-সহ গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, এই গ্রেফতারের পর দিল্লির মাদক চক্রের আরও কিছু গোপন দিক সামনে আসতে পারে। জোয়ার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং তাঁর মাদক সাম্রাজ্যের সঙ্গে জড়িত অন্যদেরও ধরার চেষ্টা চলছে।
দীর্ঘদিনের অপরাধের সাম্রাজ্য এবার ভেঙে পড়বে কিনা, তা সময়ই বলবে। কিন্তু আপাতত দিল্লির এই ‘লেডি ডন’-এর বিলাসবহুল জীবন থমকে গেছে পুলিশ হেফাজতের কঠোর বাস্তবতায়।
গবেষণার আড়ালে সামরিক পরিকল্পনা? সমুদ্রের গভীরে চিনের রহস্যময় কেন্দ্র ঘিরে উদ্বেগ