পায়েল সরকারের খোলামেলা স্বীকারোক্তি!
অভিনয়ে ২০ বছর কাটিয়ে ফেলেছেন তিনি। কেরিয়ার নিয়ে সোজাসাপ্টা মতামত যেমন আছে, তেমনই ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও স্পষ্টবাদী। সিনেমা, ইন্ডাস্ট্রির অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, ব্যক্তিগত জীবন—সব নিয়েই আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে খোলামেলা কথা বললেন অভিনেত্রী পায়েল সরকার।
“বাবু সোনা” ছবিতে কেন রাজি হলেন?
পায়েল বলেন, “অনেক দিন পর এমন একটা ‘মশালা’ কমেডি ছবি এসেছে, যেখানে বিনোদনের মাত্রা অনেক বেশি।” সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে কমেডি ছবির সংখ্যা কমে গিয়েছে। কিন্তু পায়েল মনে করেন, “ছবি তৈরি হলে আমরা দর্শকের কাছে পৌঁছে দিতে পারি মাত্র, বাণিজ্যিক ছবির পুনরুজ্জীবন দরকার।”
ইন্ডাস্ট্রিতে ২০ বছরের অভিজ্ঞতা—কতটা কঠিন ছিল পথ চলা?
২০০৭ সালে “আই লভ ইউ” ছবির মাধ্যমে পায়েল প্রথমবার নায়িকা হন। তারপর থেকে তিনি নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে চলেছেন। তবে ইন্ডাস্ট্রির পরিবর্তন নিয়ে তিনি বলেন,
“একসময় বাংলা ছবির নায়িকারা পরপর অনেক ছবিতে কাজ করতেন, এখন তা হয় না। যদিও আমি কখনও কাজ থেকে বিরতি নিইনি।”
তিনি আরও বলেন, “নারী অভিনেতাদের চ্যালেঞ্জ সবসময়ই বেশি। আর ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকতে হলে নিজেকে প্রমাণ করতেই হয়।”
কাস্টিং কাউচ নিয়ে খোলামেলা স্বীকারোক্তি
বহু অভিনেত্রী ইন্ডাস্ট্রিতে কাস্টিং কাউচের সম্মুখীন হয়েছেন, এই প্রসঙ্গে পায়েলের জবাব,
“আমার নিয়ন্ত্রণে সবকিছু নেই। তবে আমি সবসময় চাইতাম, পরিচালক বা প্রযোজক আমার কাজ দেখেই আমাকে বেছে নিন। ৯০% ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। তবে হ্যাঁ, কাস্টিং কাউচের মুখোমুখি আমিও হয়েছি।”
তিনি জানান, “তখনই আমি পরিস্থিতি সামলে নিয়েছিলাম। হয়তো সেই ব্যক্তি আমাকে পরে আর কাজ দেননি, কিন্তু এতে আমার কোনো সমস্যা হয়নি।”
“বড় প্রযোজনা সংস্থার নিয়ন্ত্রণ মানিনি”
অনেক অভিনেত্রী বড় প্রযোজনা সংস্থার ছত্রছায়ায় কাজ করতে স্বচ্ছন্দবোধ করেন, তবে পায়েল আলাদা পথ বেছে নিয়েছেন।
“একটা নির্দিষ্ট বৃত্তের মধ্যে নিজেকে আটকে রাখলে আমি ব্যাঙ্কে চাকরি করতাম! আমি বরং আমার কাজ দিয়ে পরিচিত হতে চেয়েছি।”
তিনি মনে করেন, “ছবি বড় বা ছোট হয় না, সফল হয় দর্শকের ভালোবাসায়।”
মুম্বইয়ে কাজের পরিকল্পনা আছে?
টলিউডের অনেক তারকাই এখন বলিউডে পা রাখছেন, কিন্তু পায়েল চান শুধুমাত্র ভালো চরিত্রেই অভিনয় করতে।
“আমি এমন কিছু করতে চাই, যাতে দর্শকের চোখে পড়বে। শুধুমাত্র বলিউডে কাজ করছি বলে খবর হল, সেটা চাই না।”
তবে কিছু প্রস্তাব রয়েছে এবং আলোচনা চলছে বলেও জানান তিনি।
“আমেরিকা গেলেই লোকে ভাবে, আমি পাত্র খুঁজতে গিয়েছি!”
সম্প্রতি পায়েল “আবার অরণ্যের দিনরাত্রি” ছবির জন্য আমেরিকায় পুরস্কার নিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তার ছবি দেখে অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, তিনি পাত্র খুঁজতে গিয়েছেন!
“আমার কাজের চেয়ে ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে মানুষের বেশি আগ্রহ! বাঙালির আধুনিক মানসিকতা কোথায় হারিয়ে গেল?”
বিয়ে ও জীবনসঙ্গী নিয়ে চিন্তাভাবনা
তিনি বলেন, “কেরিয়ার গড়তে হলে তাড়াতাড়ি বিয়ে করা যাবে না, এটা কমলেশ্বরদা (পরিচালক) আমায় বলেছিলেন। তবে একজন প্রকৃত পুরুষ জীবনসঙ্গীকে সবসময় সমর্থন করবেন, পিছিয়ে পড়তে বলবেন না।”
“এমন মানুষ পাওয়া কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়।”
যখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি কি এমন কাউকে খুঁজে পেয়েছেন, তখন পায়েল রহস্যময় হাসি দিয়ে বলেন, “দেখা যাক! ঠিক সময়ে জানতে পারবেন।”
পারফেক্ট কাপল রাজ-শুভশ্রী, ওঁদের সম্পর্কের ব্যাখ্যা পায়েলের?
রাজ চক্রবর্তী ও শুভশ্রী গাঙ্গুলির সম্পর্ককে ইন্ডাস্ট্রির ‘পারফেক্ট কাপল’ বলা হয়। পায়েলের মত,
“সম্পর্কে কে কীভাবে দায়িত্ব ভাগ করে নেবে, সেটা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ব্যাপার। বাইরের লোকের মন্তব্য করার দরকার নেই।”
রাজনীতি থেকে সরে এলেন কেন?
একসময় তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন, কিন্তু এখন আর রাজনীতিতে নেই।
“রাজনীতির ময়দানে নেমে কাজ করতে গেলে দলের সমর্থন দরকার। আমি সেটা পাইনি। আর অভিনয় ছেড়ে রাজনীতি করা সম্ভব নয়।”
তবে তিনি বলেন,
“রাজনীতির প্রবেশ নিয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই, কিন্তু পরিবর্তন যেন শিল্পের ক্ষতি না করে।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে পায়েলের ভাবনা
তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
“দিদির সঙ্গে আমার সম্পর্ক সবসময় ভালো ছিল, এখনও আছে। একজন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি প্রচুর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। আমি তাঁকে শ্রদ্ধা করি।”
“এখন আর কিছু আমাকে বিচলিত করে না”
ট্রোলিং বা সমালোচনা নিয়ে তিনি বলেন,
“আমি এসব মন্তব্য পড়িই না! আর পড়লেও হাসি পায়। সামাজিক মাধ্যমের ট্রোলিং আমার জীবনে কোনো প্রভাব ফেলে না।”
তিনি আরও জানান, এখন তিনি অনেক শান্ত।
“আগে অনেক কিছুতেই উত্তেজিত হতাম, এখন আর কিছুই আমাকে খুব বেশি প্রভাবিত করে না।”
শেষ কথা
অভিনয়ে বরাবর নিজের শর্তে চলেছেন পায়েল। ব্যক্তিগত জীবন, ক্যারিয়ার, ইন্ডাস্ট্রির রাজনীতি—সব নিয়েই খোলাখুলি কথা বলেছেন। তবে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা?
মাটির নীচ থেকে গর্জনের শব্দ! ভূমিকম্পের নতুন অভিজ্ঞতায় আতঙ্কিত দিল্লিবাসী— কেন হল এমন?