Saturday, February 22, 2025

হুগলির রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত? লকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে

Share

হুগলির রাজনীতি !

এক সময় তৃণমূলের দুর্ভেদ্য ঘেরাটোপ ভেঙে হুগলির মাটি দখল করেছিলেন লকেট চট্টোপাধ্যায়। ধনেখালিতে প্রবেশ করতেই তৃণমূলের হাতে ঘেরাও হওয়ার ঘটনা হোক কিংবা প্রশাসনিক প্রতিবন্ধকতা— সবকিছুর সঙ্গে লড়াই করেই এগিয়েছেন তিনি। কিন্তু এখন কি তিনি নিজেই হুগলির রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়াতে চাইছেন? বিজেপি সূত্রের খবর অনুযায়ী, বিধানসভা বা লোকসভার কোনো আসন থেকেই আর তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান না। তবে এর জন্য তৃণমূল নয়, বরং দলেরই একটি অংশকে দায়ী করছেন লকেটের ঘনিষ্ঠ মহল।

সম্প্রতি পূর্ব বর্ধমানের তালিতে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ বিজেপি নেতারা উপস্থিত থাকলেও লকেটের অনুপস্থিতি বিশেষভাবে নজর কাড়ে। রাজ্য বিজেপির পাঁচজন সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে তিনজনই মধ্যবঙ্গের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে সক্রিয়। তাঁদের মধ্যে ছিলেন জ্যোতির্ময় মাহাতো ও অগ্নিমিত্রা পাল। কিন্তু প্রত্যাশিত হয়েও লকেট সেখানে যাননি। এরপর থেকেই তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে দলের অন্দরেই গুঞ্জন শুরু হয়েছে।

এই প্রসঙ্গে আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে লকেট জানান, ‘‘আমি ভাইরাল জ্বরে ভুগছিলাম, তাই যেতে পারিনি।’’ তবে কি সত্যিই শুধুমাত্র অসুস্থতাই তাঁর অনুপস্থিতির কারণ? নাকি হুগলির রাজনীতির সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরির ইঙ্গিত এতে লুকিয়ে আছে?

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে হুগলির আসনে বিজেপির টিকিটে লড়েছিলেন লকেট। সবাইকে চমকে দিয়ে তিনি রত্না দে নাগকে পরাজিত করেছিলেন। তখন দলের অনেকেই মনে করেছিলেন, এই আসন জেতা কঠিন। কিন্তু লকেটের জয় সেই সমীকরণ পাল্টে দেয়। তবে এরপর থেকেই বিজেপির অন্দরে তাঁকে নিয়ে নানা রকম টানাপোড়েন শুরু হয়। দলের মধ্যেই অনেকে তাঁকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে দেখছিলেন বলে অভিযোগ। ফলে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে চুঁচুড়া থেকে লড়ে তিনি পরাজিত হন। এরপর ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনেও হুগলি তাঁকে আর বিজয়ীর হাসি উপহার দেয়নি।

বিজেপির একটি অংশ মনে করছে, লকেটের রাজনৈতিক উত্থান হুগলির অনেক নেতার জন্য হুমকিস্বরূপ হয়ে উঠেছিল। বাইরের জেলা থেকে এসে তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন— এটা মেনে নিতে পারেননি অনেকে। ফলে দলে ভিতর থেকেই তাঁকে কোণঠাসা করার চেষ্টা চলেছে। আর এই কারণেই এবার তিনি নিজেই হুগলির রাজনীতি থেকে দূরে সরে যেতে চাইছেন।

তবে এ বিষয়ে লকেটের নিজের বক্তব্য, ‘‘আমি শুধু হুগলিতেই রাজনীতি করব কেন? আমি তো রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক। সারা রাজ্যের জন্য কাজ করার সুযোগ রয়েছে আমার।’’ তাঁর এই মন্তব্যেই যেন স্পষ্ট, হুগলিকে কেন্দ্র করে আর নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ বেঁধে রাখতে চান না তিনি।

২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগেও লকেটের হুগলি ছাড়ার সম্ভাবনা নিয়ে চর্চা হয়েছিল। তখন শোনা গিয়েছিল, বাঁকুড়া বা বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনে লড়ার জন্য তিনি আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁকে হুগলিতেই প্রার্থী করা হয়। এবার কি তিনি সত্যিই দলকে জানিয়ে দিয়েছেন, হুগলি থেকে আর লড়তে চান না?

দলীয় সূত্রে খবর, লকেট চান এমন একটি আসন, যেখানে সংগঠন তাঁকে স্বাগত জানাবে, যেখানে তিনি দলের অভ্যন্তরীণ প্রতিরোধের মুখে পড়বেন না। তবে বিজেপি এখনো এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেনি। হুগলির বিজেপি নেতারাও বিষয়টি নিয়ে চুপ। কেউ বলছেন না, লকেট হুগলিতেই থাকছেন, আবার কেউ এটাও বলছেন না যে, তিনি অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।

এতদিন ধরে লকেট নিজেকে হুগলির প্রতিনিধি হিসেবেই তুলে ধরেছিলেন। কিন্তু এবার কি তিনি নিজেই বলছেন, ‘‘আমি তো বাইরের, আমাকে দলই এখানে পাঠিয়েছিল’’? এই মন্তব্যের মধ্যেই কি লুকিয়ে রয়েছে তাঁর ভবিষ্যতের ইঙ্গিত? হুগলির রাজনীতি থেকে সত্যিই কি এবার লকেট সরে যাচ্ছেন? রাজনীতির ময়দানে আপাতত সেটাই কোটি টাকার প্রশ্ন।

মাটির নীচ থেকে গর্জনের শব্দ! ভূমিকম্পের নতুন অভিজ্ঞতায় আতঙ্কিত দিল্লিবাসী— কেন হল এমন?

Read more

Local News