পুলিশি হয়রানির অভিযোগ!
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া আন্দোলন যেন নতুন মাত্রা পেয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টের তরফে পুলিশের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হয়রানি করার অভিযোগ তোলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ডাক্তারদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হচ্ছে বলেও দাবি করেছেন তাঁরা। পুলিশের এই ভূমিকায় ক্ষুব্ধ জুনিয়র চিকিৎসকরা ফের আন্দোলনের পথে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
মঙ্গলবার এক প্রেস বিবৃতিতে সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘‘আমাদের ন্যায্য দাবির লড়াইয়ে সমাজের নানা স্তরের মানুষ পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। তাঁরা শুধু নৈতিক সমর্থনই দেননি, আর্থিক সাহায্যের প্রস্তাবও দিয়েছেন। আন্দোলন ক্রমশ বড় হতে থাকায় সম্মিলিতভাবে আমরা একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু সেই সময়ের মধ্যে বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তাররা নিজ নিজ উদ্যোগে আর্থিক সাহায্য সংগ্রহ করতে শুরু করেন।’’
সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, ওই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অনুদান এসেছে, এবং সমস্ত লেনদেনের হিসাব যথাযথভাবে রাখা হয়েছে। তাঁরা আরও জানিয়েছেন, ‘‘আমরা স্বচ্ছতার সঙ্গে সমস্ত হিসাব জনসমক্ষে আনব। ইতিমধ্যেই ইনকাম ট্যাক্স দফতরের কাছে হিসাব পেশ করার জন্য অডিটিংয়ের কাজ চলছে।’’
তবে এখানেই শেষ নয়, পুলিশের বাড়াবাড়ি নিয়ে এবার সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। বিবৃতিতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, ‘‘আমাদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে। গত সপ্তাহে বিধাননগর সাইবার ক্রাইম বিভাগ থেকে বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তারদের ডেকে পাঠানো হয়। তাঁরা যথাযথভাবে তদন্তে সহযোগিতা করেছেন— কেউ সশরীরে হাজির হয়েছেন, কেউ ভিডিয়ো কলে উত্তর দিয়েছেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, ঠিক কোন অভিযোগের ভিত্তিতে বা কার দায়ের করা অভিযোগের কারণে এই তদন্ত চালানো হচ্ছে, তার কোনো নির্দিষ্ট নথি আমাদের দেখানো হয়নি। শুধু বলা হয়েছে, একটি সাধারণ ডায়েরির ভিত্তিতে তদন্ত চলছে।’’
এখানেই শেষ নয়, পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের ধরন নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন আন্দোলনকারীরা। তাঁরা জানিয়েছেন, ‘‘প্রশ্নের ধরনই বলে দিচ্ছে, আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে। আন্দোলনের জন্য সংগৃহীত অর্থ স্টেজ নির্মাণ, কনভেনশনের ব্যবস্থা, অভয়া ক্লিনিকের ওষুধ কেনা, সুপ্রিম কোর্টে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য আইনজীবী নিয়োগ— এসব খাতে কেন খরচ হয়েছে, সেই নিয়ে একের পর এক প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। অথচ এই খরচের হিসাব আমরা যথাযথভাবে রেখেছি এবং প্রকাশ্যেই ব্যয় করা হয়েছে।’’
এর পাশাপাশি, ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টের ওয়েবসাইট আচমকা বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়টিকেও ভুলভাবে প্রচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা। বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘‘আমরা নিজেরাই ওয়েবসাইট বন্ধ করেছি বলে যে দাবি করা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।’’
এই ঘটনার পর আন্দোলন আরও তীব্র হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘আমরা অন্যায়ভাবে কোনো হয়রানি মানব না। যদি আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমন করার চেষ্টা করা হয়, তাহলে আমরা আরও বৃহত্তর প্রতিবাদ গড়ে তুলব।’’
এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের অবস্থান কী হবে, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। প্রশাসনের তরফ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া মেলেনি, তবে পুলিশের তদন্তের এই ‘অতিসক্রিয়তা’ নিয়ে ইতিমধ্যেই নানা মহলে সমালোচনা শুরু হয়েছে। আন্দোলনের ভবিষ্যৎ কোন পথে মোড় নেয়, তা এখন সময়ই বলবে।
মাটির নীচ থেকে গর্জনের শব্দ! ভূমিকম্পের নতুন অভিজ্ঞতায় আতঙ্কিত দিল্লিবাসী— কেন হল এমন?