প্রভাবশালীদের সুপারিশেই চাকরি?
পশ্চিমবঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় নতুন মোড়। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সুপারিশ তালিকায় নাম থাকা ১৩৪ জন চাকরিপ্রাপ্ত ব্যক্তি এখন সিবিআইয়ের নজরে। এই চাকরি কি প্রকৃত যোগ্যতার ভিত্তিতে, নাকি রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের সুপারিশে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে তদন্তকারী সংস্থা। সিবিআই তাঁদের একাংশকে ইতিমধ্যেই তলব করেছে, এবং বেশ কয়েকজন নিজাম প্যালেসে হাজিরা দিয়েছেন।
সুপারিশ তালিকা ও নিয়োগ দুর্নীতি: কী বলছে তদন্ত?
২০২৪ সালের জুন মাসে বিকাশ ভবনে অভিযান চালিয়ে সিবিআই ৩২৪ জন চাকরিপ্রার্থীর একটি সুপারিশ তালিকা উদ্ধার করে। তালিকায় শুধু চাকরিপ্রার্থীদের নাম ও রোল নম্বরই নয়, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের নামও ছিল, যাঁরা তাঁদের চাকরির জন্য সুপারিশ করেছিলেন। এই নামগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিলেন:
- দিব্যেন্দু অধিকারী (বিজেপি নেতা ও প্রাক্তন সাংসদ)
- ভারতী ঘোষ (প্রাক্তন আইপিএস, বিজেপি নেত্রী)
- মমতাবালা ঠাকুর (তৃণমূল সাংসদ)
- শওকত মোল্লা (তৃণমূল বিধায়ক)
- নির্মল ঘোষ, শ্যামল সাঁতরা, গুলশন মল্লিকসহ আরও অনেকে
তদন্তকারী সংস্থা জানতে চায়, এই তালিকায় থাকা ৩২৪ জনের মধ্যে কতজনের চাকরি হয়েছে? পর্ষদ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৩৪ জন চাকরিপ্রার্থী সরকারি চাকরি পেয়েছেন। ফলে, এখন প্রশ্ন উঠছে—তাঁরা কি প্রকৃত যোগ্য ছিলেন, নাকি সুপারিশের ভিত্তিতেই নিয়োগ পেয়েছেন?
সিবিআইয়ের জেরা ও চাকরিপ্রার্থীদের প্রতিক্রিয়া
সিবিআই ইতিমধ্যে এই ১৩৪ জনের মধ্যে কয়েকজনকে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ সরাসরি বলেছেন যে তাঁরা কোনো ‘প্রভাবশালী’কে চেনেন না। আবার কেউ কেউ বলেছেন, তাঁরা সুপারিশ তালিকায় নাম থাকার বিষয়টি জানতেন না।
এক চাকরিপ্রার্থী বলেন, “আমি আমার নিজের যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছি, কোনো সুপারিশের প্রয়োজন হয়নি।”
অন্য একজন বলেন, “সিবিআই আমায় ডেকেছিল। কিছু নথিপত্র চেয়েছিল, আমি সব দেখিয়েছি। তবে কীভাবে আমার নাম সুপারিশ তালিকায় এল, তা জানি না।”
তবে কিছু চাকরিপ্রার্থী, যাঁদের নাম রাজনৈতিক নেতাদের সুপারিশের পাশে ছিল, তাঁরা প্রথমে কিছু উত্তর দিলেও পরে ফোন কেটে দেন। যেমন, একজন চাকরিপ্রার্থীকে জিজ্ঞেস করা হয়, তিনি মমতাবালা ঠাকুরকে চেনেন কি না? তিনি ‘হ্যাঁ’ বলার পর ফোন কেটে দেন এবং আর কোনো উত্তর দেননি।
নেতাদের প্রতিক্রিয়া: কেউ অস্বীকার, কেউ নীরব
এই তালিকায় নাম থাকলেও বিজেপির দিব্যেন্দু অধিকারী এবং ভারতী ঘোষ দাবি করেছেন, তাঁরা কোনো চাকরিপ্রার্থীর জন্য সুপারিশ করেননি। দিব্যেন্দু বলেন, “আমার নাম জড়ানো রাজনৈতিক চক্রান্ত। আমি কখনও কাউকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার জন্য সুপারিশ করিনি।”
ভারতী ঘোষ বলেন, “আমি এসপি থাকার সময় অনেকের উপকার করেছি, কিন্তু সবই আইন মেনে। পরীক্ষায় বসেননি বা পাশ করেননি—এমন কাউকে চাকরির সুপারিশ করিনি।”
তৃণমূলের মমতাবালা ঠাকুর, শওকত মোল্লারাও তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং দাবি করেছেন যে এটি একটি “রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র”।
নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন
সিবিআইয়ের তদন্তে উঠে এসেছে, কিছু সুপারিশ করা ব্যক্তিরা ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে সরকারি চাকরিতে নিযুক্ত হয়েছেন। তাহলে কি নিয়োগ প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন ধরেই দুর্নীতির কবলে?
এদিকে, সিবিআই পর্ষদের কাছে জানতে চেয়েছিল, তালিকায় থাকা চাকরিপ্রার্থীরা কি নির্ধারিত নিয়ম মেনেই চাকরি পেয়েছেন, নাকি সুপারিশের কারণে তাঁদের নিয়োগ করা হয়েছে?
পর্ষদের জবাব এতদিনে আসেনি। বরং, তাঁরা শুধু ১৩৪ জনের নাম ও রোল নম্বরের তালিকা দিয়েছে। ফলে, সিবিআই এখন এই নিয়োগের যথার্থতা যাচাই করছে এবং নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে আরও গভীরে তদন্ত চালাচ্ছে।
শেষ কথা
সিবিআইয়ের তদন্তে ক্রমশই নিয়োগ দুর্নীতির জাল বিস্তৃত হচ্ছে। সুপারিশ করা ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ কেউ চাকরি পেয়েছেন, আবার অনেকে অস্বীকার করছেন যে তাঁরা কোনো রাজনৈতিক নেতার সুপারিশে চাকরি পেয়েছেন। তবে চাকরিপ্রার্থীদের জেরা ও পর্ষদের কাছ থেকে আরও তথ্য সংগ্রহের পরই চূড়ান্ত সত্য প্রকাশ্যে আসবে।
এই মামলায় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের জড়িত থাকার অভিযোগ আরও দৃঢ় হলে, সিবিআই কি তাঁদেরও তলব করবে? সেটাই এখন দেখার বিষয়।
মাটির নীচ থেকে গর্জনের শব্দ! ভূমিকম্পের নতুন অভিজ্ঞতায় আতঙ্কিত দিল্লিবাসী— কেন হল এমন?