Thursday, February 27, 2025

১০৪ কোটির বিনিয়োগ পরামর্শ! শেয়ার বাজারের ‘মহিলা নেকড়ে’ কীভাবে সেবির নজরে এলেন?

Share

শেয়ার বাজারের ‘মহিলা নেকড়ে’

শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ পরামর্শ দিয়ে রাতারাতি বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়েছিলেন অস্মিতা পটেল। কিন্তু তাঁর উত্থান খুব বেশিদিন স্থায়ী হলো না। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া (SEBI)-র নিয়ম লঙ্ঘন করায় ১০৪ কোটি টাকা আয় করা এই শেয়ার বিশারদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। কে এই অস্মিতা পটেল? কীভাবে তিনি শেয়ার বাজারের ‘She-Wolf of Stock Market’ হয়ে উঠলেন, আর কেনই বা সেবির কোপে পড়লেন? চলুন জেনে নিই।

শেয়ার বাজারে অস্মিতার উত্থান

প্রায় ১৭ বছর আগে শেয়ার বাজারে প্রবেশ করেন অস্মিতা পটেল। কোনো প্রথাগত শিক্ষা না থাকলেও, নিজে নিজেই শেয়ার বাজার সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেন। বাজার বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিনিয়োগ কৌশল তৈরি করে জনপ্রিয়তা পান।

নিজের সাফল্যকে ব্যবহার করে ২০২০ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘Asmita Patel Global School of Trading’। তাঁর দাবি ছিল, সাধারণ মানুষ যাতে সহজেই শেয়ার বাজার বুঝতে পারেন, সে জন্যই এই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি।

এছাড়া, তিনি নিজেকে ‘Option Queen’‘Stock Market She-Wolf’ বলে প্রচার করতেন। তাঁর ট্রেডিং মডেল এবং কোর্সগুলোর মাধ্যমে মানুষের আর্থিক স্বাধীনতা সম্ভব বলে তিনি দাবি করতেন।

কীভাবে সেবির নজরে এলেন?

SEBI-এর পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, অস্মিতা পটেল শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ পরামর্শ প্রদান করছিলেন অনিবন্ধিতভাবে। অর্থাৎ, তিনি কোনো বৈধ বিনিয়োগ উপদেষ্টা নন, তবুও তিনি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনাবেচার পরামর্শ দিয়ে ১০৪ কোটি টাকা আয় করেছেন।

👉 সেবির তদন্তে জানা যায়, তিনি ও তাঁর সংস্থা ৫৩.৬ কোটি টাকা অবৈধভাবে আয় করেছে, যা ইতিমধ্যেই বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

👉 অস্মিতার ইউটিউব চ্যানেলে ৫ লক্ষের বেশি সাবস্ক্রাইবার, ইনস্টাগ্রামে ৯০ হাজার ফলোয়ার, এবং ফেসবুকে ৭৩ হাজারেরও বেশি ফলোয়ার ছিল। এই বিশাল অনলাইন উপস্থিতির মাধ্যমে তিনি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতেন।

👉 টেলিগ্রাম চ্যানেল ও ওয়েবিনারের মাধ্যমে বিনিয়োগের পরামর্শ দিতেন, যা বিনিয়োগ উপদেষ্টা সংক্রান্ত আইনের লঙ্ঘন।

কী ব্যবস্থা নিল সেবি?

SEBI-এর তদন্তে উঠে আসে যে, অস্মিতা পটেলের সংস্থা বিনিয়োগ পরামর্শদাতা হিসেবে নিবন্ধিত না হয়েও বিনিয়োগকারীদের ট্রেডিং পরামর্শ দিচ্ছিল। এর ফলে SEBI তাঁর ও তাঁর সংস্থার বিরুদ্ধে নিম্নলিখিত ব্যবস্থা নেয়:

৫৩.৬ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়
শেয়ার বাজারে তাঁর অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা হয়
তাঁর সমস্ত ওয়েবসাইট ও ভিডিও সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়
১০৪.৬ কোটি টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার নোটিস পাঠানো হয়

SEBI-এর নিয়ম অনুযায়ী, শুধুমাত্র নিবন্ধিত বিনিয়োগ উপদেষ্টারা (RIA) শেয়ার কেনাবেচার পরামর্শ দিতে পারেন। কিন্তু অস্মিতা এই নিয়ম লঙ্ঘন করায়, তাঁকে এই শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছে।

বিনিয়োগকারীদের জন্য সতর্কতা!

বর্তমানে শেয়ার বাজারে অনেক সেল্ফ-প্রোক্লেইমড (Self-Proclaimed) বিনিয়োগ গুরু আছেন, যারা ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম বা টেলিগ্রামের মাধ্যমে বিনিয়োগের পরামর্শ দেন। কিন্তু তাদের বেশিরভাগই SEBI-র অনুমোদিত নয়। তাই বিনিয়োগ করার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন:

🔹 বিনিয়োগ পরামর্শদাতা SEBI-র রেজিস্ট্রার্ড কিনা
🔹 কোনো ব্যক্তির আর্থিক সাফল্যের গালগল্পে প্রভাবিত হবেন না
🔹 ইউটিউব বা টেলিগ্রামের পরামর্শ দেখে বিনিয়োগ করবেন না
🔹 সন্দেহজনক কার্যকলাপ দেখলে SEBI-তে অভিযোগ করুন

উপসংহার

অস্মিতা পটেলের ঘটনা আবারও প্রমাণ করল যে, শেয়ার বাজারে ধোঁকাবাজির সুযোগ সবসময় থাকে। সামাজিক মাধ্যমে আকর্ষণীয় প্রচারের ফাঁদে পা দিয়ে অনেকেই বড় আর্থিক ক্ষতির শিকার হন। তাই বিনিয়োগের আগে সতর্ক থাকুন এবং শুধুমাত্র আইনসম্মত উপায়ে বিনিয়োগের পরামর্শ গ্রহণ করুন

সুরের রাজ্যে চুরি! প্রীতমের স্টুডিয়ো থেকে উধাও ৪০ লক্ষ টাকা

Read more

Local News