মদের রাজনীতি!
রাজনীতিতে মদের ভূমিকা চিরকালই বিতর্কিত। এটি যেমন রাজস্ব আনে, তেমনই রাজনৈতিক ভাগ্যও গড়ে দিতে পারে। ভারতীয় রাজনীতিতে মদের কারণে উত্থান-পতনের সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত হতে পারে বিহার, দিল্লি এবং তেলঙ্গনার সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো।
নীতীশের মদবিরোধী অবস্থান
২০১৫ সালের বিহারের নির্বাচনে নীতীশ কুমার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যদি তিনি ক্ষমতায় আসেন তবে রাজ্যে মদ নিষিদ্ধ করবেন। এই ঘোষণার ফলে বিশেষত মহিলাদের একটি বড় অংশ তাঁর সমর্থনে এগিয়ে আসে। কথা মতো নীতীশ মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর বিহারে মদ নিষিদ্ধ করেন। এখনও বিহার ‘ড্রাই স্টেট’। সম্প্রতি তিনি বলেছেন, ‘‘যদি কেউ মনে করেন বিহারে মদ না থাকায় এটি খারাপ রাজ্য, তবে তাঁদের বলব, দয়া করে এখানে আসবেন না।’’
দিল্লিতে উল্টো চিত্র
দিল্লিতে মদ নিয়ে কেজরীবাল সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। দুর্নীতি করে মদের লাইসেন্স দেওয়ার অভিযোগে তদন্ত শুরু হয়। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) বারবার জানায়, এই দুর্নীতির শিকড় অনেক গভীরে। কেজরীবাল ও তাঁর ডেপুটি মণীশ সিসোদিয়া গ্রেফতার হলে আম আদমি পার্টি এটিকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ভোটের ফলাফল প্রমাণ করে যে, দিল্লিবাসী তাঁদের যুক্তি মেনে নেয়নি। মদের দুর্নীতি তাঁদের সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিল।
তেলঙ্গনায়ও একই পরিণতি
কে চন্দ্রশেখর রাও (কেসিআর) যখন তেলঙ্গনার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তখন তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে মদের লাইসেন্স সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ভোটের আগে ইডি কেসিআরের মেয়ে কে কবিতা রাওকে বারবার তলব করতে থাকে। তিনি হাজিরা এড়াতে থাকেন, যা বিরোধীদের সন্দেহ আরও বাড়িয়ে তোলে। ভোটের আগে তাঁর ঘনিষ্ঠ এক ব্যবসায়ী গ্রেফতার হন, পরে ২০২৪ সালের মার্চে নিজেও গ্রেফতার হন। এর তিন মাস আগেই কেসিআর নির্বাচনে পরাজিত হন এবং তেলঙ্গনার ক্ষমতা কংগ্রেসের হাতে চলে যায়।
মদের মাধ্যমে রাজস্ব, নাকি পতন?
মদ থেকে বিপুল রাজস্ব আসে, তাই অনেক রাজ্য এটি নিষিদ্ধ করতে চায় না। বাংলায় বাম আমলে মদের লাইসেন্স দেওয়ার বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল বিরোধীরা। তৃণমূল সরকারও মদের বিক্রি থেকে রাজস্ব আদায়ে মনোযোগী। কিন্তু এর ফলে যুবসমাজের ক্ষতির অভিযোগও উঠছে।
নীতীশ কুমারের মদবিরোধী অবস্থান একসময় তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী করেছিল, কিন্তু কেজরীবাল ও কেসিআর সরকারের দুর্নীতি তাঁদের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিল। এক দশকে তিনটি রাজ্যে মদ রাজনৈতিক ভাগ্য বদলে দিয়েছে। তবে এর ভবিষ্যৎ কী, তা সময়ই বলবে।
নিজেরাই শূন্য, কেজরীবাল ও সিসৌদিয়ার পতন, আতিশীর কান ঘেঁষে জয়!