রতন টাটার উইলে মোহিনীমোহন দত্ত?
ভারতের অন্যতম খ্যাতনামা শিল্পপতি রতন টাটার মৃত্যুর পর থেকেই তাঁর বিপুল সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়। অকৃতদার ও নিঃসন্তান রতন টাটা ২০২৪ সালের ৯ অক্টোবর ৮৭ বছর বয়সে পরলোক গমন করেন। মৃত্যুর পর প্রকাশ্যে আসে তাঁর উইল, যেখানে দেখা যায় তিনি পোষ্য প্রাণী থেকে শুরু করে ঘনিষ্ঠ সহকর্মীদের জন্যও উত্তরাধিকার রেখে গিয়েছেন। তবে সম্প্রতি তাঁর উইলে এমন একটি নাম উঠে এসেছে, যা সবাইকে চমকে দিয়েছে। তিনি হলেন মোহিনীমোহন দত্ত, যিনি রতন টাটার সম্পত্তি থেকে ৫০০ কোটি টাকা পেতে পারেন।
মোহিনীমোহন দত্ত: কে এই ব্যক্তি?
মোহিনীমোহন দত্তের পরিচয় সম্পর্কে অনেকেই অজ্ঞ ছিলেন, কিন্তু উইল প্রকাশের পর তাঁর নাম সামনে আসায় কৌতূহল চরমে পৌঁছেছে। তিনি জামশেদপুরের একজন ব্যবসায়ী এবং টাটা গোষ্ঠীর প্রাক্তন কর্মী। শুধু তাই নয়, রতন টাটার অত্যন্ত আস্থাভাজন ব্যক্তিদের একজন বলে জানা গেছে।
‘দ্য ইকোনমিক টাইমস’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, রতন টাটা তাঁর উইলে মোহিনীমোহনের নামে ৫০০ কোটি টাকা রেখে গিয়েছেন। এই ঘোষণার পর থেকেই বিস্ময় ছড়িয়ে পড়েছে টাটা পরিবার ও শিল্পপতিদের ঘনিষ্ঠ মহলে।
কেন এত বড় অঙ্কের সম্পত্তি পেলেন মোহিনীমোহন?
অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, যেখানে রতন টাটার সৎভাই জিমি টাটা পেয়েছেন মাত্র ৫০ কোটি টাকার সম্পত্তি, সেখানে মোহিনীমোহনের নামে এত বিশাল অঙ্ক কেন? জানা যাচ্ছে, মোহিনীমোহন এবং রতন টাটার সম্পর্ক দীর্ঘ ছয় দশকের। তাঁদের পরিচয় হয়েছিল জামশেদপুরে, যেখানে রতন টাটা তখন মাত্র ২৪ বছরের যুবক ছিলেন। সেই সময় থেকেই তাঁদের মধ্যে এক আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
মোহিনীমোহন দত্ত একসময় ‘স্ট্যালিয়ন ট্র্যাভেল এজেন্সি’ নামে একটি সংস্থা পরিচালনা করতেন, যা পরবর্তীকালে টাটা ক্যাপিটালের অংশ হয়ে যায়। টাটা গোষ্ঠীর সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিনের সম্পর্ক থাকলেও, পরিবারের ঘনিষ্ঠ অনেকেই তাঁকে খুব ভালো করে চেনেন না। ফলে উইলে তাঁর নাম থাকার বিষয়টি নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে।
উইল নিয়ে কি আইনি জটিলতা তৈরি হতে পারে?
রতন টাটার উইল এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়নি। এটি বোম্বে হাই কোর্টে প্রোবেট (আইনি অনুমোদন) প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এর মধ্যেই মোহিনীমোহনের সম্পত্তির পরিমাণ নিয়ে কিছু মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। তিনি মনে করেন, তাঁর প্রাপ্য আরও বেশি হওয়া উচিত, যা প্রায় ৬৫০ কোটি টাকায় পৌঁছাতে পারে। এই দাবির ফলে উইল নিয়ে আরও জটিলতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
মোহিনীমোহন কি রতন টাটার দত্তকপুত্র?
টাটা গোষ্ঠীর কিছু প্রবীণ সদস্য জানিয়েছেন, মোহিনীমোহন নিজেকে রতন টাটার দত্তকপুত্র বলতেন। তবে কোনও নথিপত্রে এমন কিছু পাওয়া যায়নি, যা থেকে বোঝা যায় যে, রতন টাটা তাঁকে আইনত দত্তক নিয়েছিলেন। তবুও, তাঁদের মধ্যে যে সম্পর্ক গভীর ছিল, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
পরিবারের প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
টাটা পরিবারের অনেক সদস্য এবং ঘনিষ্ঠরা এই বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্ত। অনেকে মনে করছেন, রতন টাটার উইলে মোহিনীমোহনের নাম থাকার পেছনে তাঁর প্রতি শিল্পপতির গভীর বিশ্বাস ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কই প্রধান কারণ। তবে, উইল কার্যকর হওয়ার পরই বোঝা যাবে, সম্পত্তির চূড়ান্ত বণ্টন কীভাবে হবে এবং এতে নতুন কোনও বিতর্ক তৈরি হয় কি না।
বর্তমানে সাধারণ মানুষ এবং কর্পোরেট মহলে এই বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। মোহিনীমোহনের পরিচয়, তাঁর রতন টাটার সঙ্গে সম্পর্ক এবং উইলের বৈধতা নিয়ে নানা জল্পনা অব্যাহত। সময়ই বলবে, এই রহস্যের পরিণতি কী হবে।
আরজি কর-কাণ্ড: দ্রুত শুনানির আর্জি খারিজ, নির্ধারিত তারিখেই মামলা শুনবে সুপ্রিম কোর্ট