সুদের হার কমল!
অবশেষে সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত নিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই)। শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, রেপো রেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমানোর ঘোষণা করেন আরবিআই-এর গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্র। এর ফলে, রেপো রেট ৬.৫ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৬.২৫ শতাংশে।
গত দু’বছর ধরে সুদের হার অপরিবর্তিত রেখেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক। ২০২০ সালের মে মাসে শেষবার সুদের হার হ্রাস করেছিল আরবিআই। অর্থাৎ, প্রায় পাঁচ বছর পর ফের সুদের হার কমানোর পথে হাঁটল শীর্ষ ব্যাঙ্ক। এই সিদ্ধান্তে ঋণগ্রহীতারা অনেকটাই স্বস্তি পাবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
রেপো রেট কী এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ?
রেপো রেট হল সেই সুদের হার, যেখানে সমস্ত রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বেসরকারি ব্যাঙ্ক রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেয়। এই হার কমলে স্বাভাবিকভাবেই ব্যাঙ্কগুলির উপর সুদের চাপ কমে, ফলে তারা গ্রাহকদের কম সুদে ঋণ দিতে পারে। সহজ কথায়, রেপো রেট কমলে গৃহঋণ, গাড়ি ঋণ কিংবা ব্যক্তিগত ঋণের উপর সুদের হারও কমে যায়, ফলে মাসিক কিস্তির (EMI) বোঝা কিছুটা হলেও হালকা হয়।
শুধু ব্যক্তিগত ঋণই নয়, ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও এই পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ। কম সুদে ঋণ পাওয়া গেলে নতুন বিনিয়োগে উৎসাহ বাড়বে, যা সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
কীভাবে সিদ্ধান্ত নিল আরবিআই?
চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে তিন দিনের জন্য বৈঠকে বসে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মুদ্রানীতি কমিটি (Monetary Policy Committee বা MPC)। শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, বৈঠকের শেষে সংবাদমাধ্যমের সামনে আসেন নতুন গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্র। গত বছরের ডিসেম্বরে শক্তিকান্ত দাসের অবসরের পর তিনিই দায়িত্ব নিয়েছেন।
সঞ্জয় মালহোত্র জানান, ‘‘সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে রেপো রেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমানো হবে। এর ফলে ঋণ আরও সস্তা হবে এবং আর্থিক কর্মকাণ্ডে গতি আসবে।’’
ব্যাঙ্ক এবং ঋণগ্রহীতাদের উপর প্রভাব
বিশেষজ্ঞদের মতে, রেপো রেট কমানোর ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলি তাদের তহবিল-ভিত্তিক ঋণের প্রান্তিক ব্যয় (MCLR – Marginal Cost of Funds Based Lending Rate) কমাতে পারে। যার ফলে নতুন ঋণগ্রহীতারা কম সুদে ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
২০২২ সালের মে মাস থেকে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আরবিআই পর্যায়ক্রমে ২৫০ বেসিস পয়েন্ট সুদের হার বৃদ্ধি করেছিল। ফলে সেই সময় ঋণগ্রহীতাদের উপর বোঝা বেড়ে গিয়েছিল। এবার সুদের হার কমানোয় কিছুটা হলেও স্বস্তি মিলবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
দেশের অর্থনীতির উপর প্রভাব
বিশেষজ্ঞদের মতে, সুদের হার কমার ফলে বাজারে নগদ অর্থের প্রবাহ বাড়বে, যা বিনিয়োগ ও ব্যবসার প্রসারে সাহায্য করবে। এতে নির্মাণ, গৃহঋণ, অটোমোবাইল শিল্প এবং অন্যান্য ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
তবে সুদের হার কমানো মানেই যে সবসময় সাধারণ মানুষের জন্য ভালো—তা নয়। যদি বাজারে অতিরিক্ত নগদ প্রবাহ হয়ে যায়, তাহলে মূল্যবৃদ্ধির (Inflation) আশঙ্কাও থেকে যায়। ফলে আরবিআইকেও সুক্ষ্মভাবে নজর রাখতে হবে, যাতে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায়।
আগামী দিনে কী হতে পারে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি ভবিষ্যতে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকে, তাহলে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আরও সুদের হার কমানোর পথে যেতে পারে। তবে, আগামী দিনে বিশ্ব অর্থনীতির পরিবর্তন এবং বাজারের পরিস্থিতির ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করবে।
এই মুহূর্তে রেপো রেট কমানোর ফলে ঋণগ্রহীতারা সাময়িক স্বস্তি পেলেও, দীর্ঘ মেয়াদে এর প্রভাব কেমন হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
শিবলিঙ্গে দুগ্ধস্নান, মহাকুম্ভে কি এবার পুণ্যের পথে ভিকি কৌশল?