তৈরি হয়েছিল টাইম মেশিন?
কল্পবিজ্ঞানের গল্প কিংবা সিনেমায় টাইম মেশিনের কথা শুনলে হয়তো মনে হয়, এগুলো নিছকই কল্পনার ফসল। কিন্তু যদি বলা হয়, বাস্তবেই একবার সময়ভ্রমণের যন্ত্র তৈরি হয়েছিল? শুধু তৈরি নয়, সেই যন্ত্র দিয়ে অতীতের ঘটনাগুলো সরাসরি দেখারও দাবি করা হয়েছিল!
১৯৫০ সাল থেকে ভ্যাটিকানের এক যাজক, ফাদার পেলেগ্রিনো আর্নেটি, এমনই এক যন্ত্র তৈরির কাজ শুরু করেন। তার নাম ছিল “ক্রোনোভাইজ়র”—যেটি নাকি অতীতের দৃশ্য ও শব্দ ধরে রাখতে পারত! আর্নেটি শুধু ধর্মগুরু ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন বিজ্ঞানের গবেষকও। তাঁর সঙ্গে এই প্রকল্পে কাজ করেছিলেন নোবেলজয়ী পদার্থবিদ এনরিকো ফার্মি এবং রকেট প্রযুক্তির অন্যতম পথিকৃৎ, জার্মান বিজ্ঞানী ওয়ের্নহার ফন ব্রাউন-সহ আরও বারো জন বিজ্ঞানী। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তৈরি হয়েছিল এই রহস্যময় যন্ত্রটি।
কীভাবে কাজ করত এই যন্ত্র?
ফাদার আর্নেটির দাবি ছিল, “ক্রোনোভাইজ়র” অতীতের তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গ গ্রহণ করতে পারত। আমরা জানি, শব্দ ও দৃশ্যের তরঙ্গ মহাকাশে চিরকাল ভেসে বেড়ায়। তাঁর মতে, এই যন্ত্রের অ্যান্টেনাগুলি ওই তরঙ্গগুলো ধরে নিয়ে দৃশ্য-শ্রাব্য রূপে ফুটিয়ে তুলত। সহজ করে বললে, এটা যেন একধরনের “সময়ের টেলিভিশন”—যেখানে অতীতের দৃশ্য সরাসরি দেখা যেত!
আর্নেটি দাবি করেছিলেন, এই যন্ত্র ব্যবহার করে তিনি নিজে যিশুখ্রিস্টের ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার দৃশ্য চাক্ষুষ করেছেন। শুধু তাই নয়, তিনি নাকি প্লেটোর বক্তৃতা, নেপোলিয়নের যুদ্ধ, এমনকি যিশুর শেষ নৈশভোজের মুহূর্তও প্রত্যক্ষ করেছেন!
বিতর্ক ও নিষেধাজ্ঞা
১৯৭২ সালে প্রথমবারের মতো এক সংবাদপত্রে ক্রোনোভাইজ়র সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এটি নিয়ে বিশ্বজুড়ে হৈচৈ শুরু হয়। কেউ বিশ্বাস করতে পারেননি, আবার কেউ মনে করেছিলেন, এটি হয়তো সত্যিই সম্ভব।
কিন্তু অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বিষয়টি গোপন হয়ে যায়। ১৯৮৮ সালে, ভ্যাটিকান হঠাৎ করেই সময়যান বা সময়ভ্রমণ সংক্রান্ত সমস্ত গবেষণার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তারা ঘোষণা করে, যদি কেউ এ ধরনের যন্ত্র তৈরি বা ব্যবহার করেন, তাহলে তাকে কঠোর শাস্তির মুখে পড়তে হবে!
এতেই রহস্য আরও ঘনীভূত হয়। প্রশ্ন ওঠে—তাহলে কি সত্যিই এমন কিছু তৈরি হয়েছিল, যা লুকিয়ে রাখা হয়েছে? নাকি পুরো বিষয়টিই ছিল নিছক এক কল্পকাহিনি?
সত্য না কল্পনা?
বহু গবেষক মনে করেন, ক্রোনোভাইজ়র আদতে কোনো বাস্তব যন্ত্র নয়, বরং আর্নেটির একটি কাল্পনিক সৃষ্টি। তবে ভ্যাটিকানের আচরণ সন্দেহের জায়গা রেখে যায়। সময়যানের মতো বিষয় নিয়ে গবেষণার উপর হঠাৎ নিষেধাজ্ঞা জারি করাটা সহজে ব্যাখ্যা করা যায় না।
২০০২ সালে পিটার ক্রাসা নামে এক ইতিহাসবিদ “ফাদার আর্নেটি’জ ক্রোনোভাইজ়র: দ্য ক্রিয়েশন অ্যান্ড ডিজ়অ্যাপিয়ারেন্স অফ দ্য ওয়ার্ল্ডস ফার্স্ট টাইম মেশিন” নামে একটি বই লেখেন। সেখানে তিনি দাবি করেন, ভ্যাটিকান হয়তো সত্যিই কিছু গোপন করছে।
তবে আজ পর্যন্ত কোনো প্রমাণ মেলেনি যে, এই যন্ত্রটি বাস্তবে কখনও কাজ করেছে। অনেকেই বলেন, এটি নিছকই একটি কল্পবিজ্ঞানমূলক গল্প। আবার কেউ কেউ মনে করেন, এমন কিছু আবিষ্কার হয়েছিল যা সাধারণ মানুষের সামনে আনা হয়নি।
তাহলে সত্যটা কী? সময়ের গোপন দরজা কি আদৌ খোলা গিয়েছিল? নাকি ইতিহাসের পাতায় ক্রোনোভাইজ়র শুধুই এক রহস্যময় গল্প হয়ে রয়ে গেল?
শিবলিঙ্গে দুগ্ধস্নান, মহাকুম্ভে কি এবার পুণ্যের পথে ভিকি কৌশল?