গোলাপ দিবস!
প্রেমের সঙ্গে গোলাপের সম্পর্ক কত দিনের, তার নির্দিষ্ট হিসেব নেই। লাল গোলাপ যেন ভালোবাসার নিরব ভাষা, যা মনের অনুভূতিগুলো সহজে প্রকাশ করে দেয়। প্রেম নিবেদনের চিরন্তন প্রতীক হয়ে থাকা এই ফুল নিয়ে আজও মানুষের আবেগের শেষ নেই। কিন্তু প্রেমের প্রতীক হিসেবে কি গোলাপই সেরা? নাকি এমন ফুলই ভালো, যেখানে সৌন্দর্য আছে, কিন্তু নেই কাঁটার যন্ত্রণা? গোলাপ দিবসে এই নিয়ে নিজেদের ভাবনা ভাগ করে নিলেন টলিপাড়ার তারকারা।
দর্শনা বণিকের মতে, সম্পর্কের ওঠাপড়াই আসল সৌন্দর্য। গোলাপের সঙ্গে যেমন কাঁটাও থাকে, সম্পর্কেও থাকে উত্থান-পতন। বর্তমানে সৌরভ দাসের সঙ্গে সম্পর্কে থাকা এই অভিনেত্রী বলেন, “গোলাপই আমার পছন্দের ফুল। কারণ, এটা প্রতীকীভাবে সম্পর্কের ভারসাম্য বোঝায়। আমরা কেউই নিখুঁত নই। সম্পর্কেও সবসময় ভালো সময় থাকবে না। কিন্তু ভালো-মন্দ মিলিয়েই সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখতে হয়।” সৌরভ যখনই বাইরে যান, দর্শনা তার জন্য গোলাপ রেখে দেন, আর সৌরভও একইভাবে প্রতিদান দেন। গোলাপ দিবসেও তাই বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে তার।
তবে এই দিবস নিয়ে একদমই ভাবেন না শোভন গঙ্গোপাধ্যায়। বরং, তার পছন্দের তালিকায় আছে সুগন্ধি ফুল, যেমন জুঁই বা বেল। স্ত্রী সোহিনী সরকারের সঙ্গেও এই বিষয়ে মিল রয়েছে তার। শোভন বলেন, “গোলাপকে ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে ধরা হয় ঠিকই, কিন্তু আমি ও আমার স্ত্রী কেউই গোলাপ পছন্দ করি না। বরং এমন ফুল পছন্দ, যা সারা ঘর সুবাসে ভরিয়ে রাখে। গোলাপ দিবস নিয়ে তাই কোনো পরিকল্পনাই নেই আমাদের।”
গোলাপ দিবস সম্পর্কে তেমন ধারণাই নেই পিয়া চক্রবর্তীর। পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে এক বছর সংসার করা এই গায়িকা ও সমাজকর্মী সারা বছরই নানা ফুল দিয়ে ঘর সাজান। তবে গোলাপ তার কাছে শুধুই প্রেমের প্রতীক নয়। তিনি বলেন, “গোলাপ আমার খুব প্রিয় ফুল, তবে শুধুই ভালোবাসার জন্য নয়। আমি প্রায়ই গোলাপ দিয়ে ঘর সাজাই, আবার কারও বাড়িতে গেলে গোলাপের তোড়া নিয়ে যাই। তবে লাল গোলাপের চেয়ে হালকা গোলাপি বা সাদা গোলাপ আমার বেশি ভালো লাগে।” তার মার্জার ছানার কারণে গোলাপ দিয়ে ঘর সাজানো কঠিন, কারণ বাঘা নামে তার পোষা বিড়াল ফুল খেয়ে ফেলে! সম্পর্কের ক্ষেত্রেও তার মতামত স্পষ্ট, “ভালো মুহূর্ত যেমন থাকবে, তেমনই থাকবে কঠিন সময়। যদি কাঁটার দিকেই বেশি মনোযোগ দিই, তাহলে গোলাপটাই শুকিয়ে যাবে।”
গোলাপের রঙ নিয়েও ভিন্ন মত রণজয় বিষ্ণুর। তার মতে, লাল গোলাপ প্রেমের প্রতীক হলেও হলুদ গোলাপ বন্ধুত্বের প্রতীক। তবে এই ধারণা এসেছে সিনেমা থেকে। তিনি বলেন, “আমার ছোটবেলা থেকেই মনে করা হত, বন্ধুকে হলুদ গোলাপ দিতে হয়, লাল নয়। তবে আমি এখন আর সেটা মানি না। যদি আমার ভাইকে লাল গোলাপ দিতে ইচ্ছে হয়, তাহলে আমি তা-ই দেব। সম্পর্কের রঙ কেবল ফুলের রঙের ওপর নির্ভর করে না।” তার পছন্দ অবশ্য রজনীগন্ধার মতো সুগন্ধি ফুল।
গোলাপ দিবস মানেই অনেকের মনে প্রেমের পুরনো স্মৃতি উঁকি দেয়। দর্শনা বণিকের জীবনেও তেমনই একটি অধ্যায় রয়েছে। তিনি আজও তার প্রাক্তন প্রেমিকের দেওয়া প্রথম গোলাপটি যত্ন করে রেখে দিয়েছেন। “প্রাক্তন প্রেমিকের কাছ থেকে প্রেমপত্রের সঙ্গে গোলাপ পেয়েছিলাম। সেটা আজও রেখে দিয়েছি। আবার এমনও হয়েছে, গোলাপ-সহ প্রেমের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে হয়েছে, তবে সবসময়ই নম্রভাবে করেছি,” বললেন তিনি।
অন্যদিকে, সাহেব ভট্টাচার্যের অভিজ্ঞতা একটু ভিন্ন। একসময় বহু গোলাপ-সহ প্রেমপ্রস্তাব পেলেও এখন আর তেমন কিছু হয় না বলে মজা করলেন তিনি। তার মতে, “গোলাপের সঙ্গে কাঁটা থাকবেই। যেকোনো সুন্দর কিছুর সঙ্গেই কিছু না কিছু ঝুঁকি থাকে। তবে বিপদ পেরিয়ে গেলে সামনে অপেক্ষা করে আরও সুন্দর কিছু। প্রেম এবং জীবনের ক্ষেত্রে এটাই সত্যি।” তার পছন্দ গোলাপ ও লিলি ফুল, তবে গোলাপের অভিজ্ঞতা কেবল কলেজ জীবনে সীমাবদ্ধ ছিল।
গোলাপ দিবসকে ঘিরে এত মতবিরোধ থাকলেও একটি সত্য অস্বীকার করা যায় না—প্রেমে গোলাপের গুরুত্ব চিরন্তন। কবির কাব্যে, শিল্পীর তুলিতে, বা সিনেমার রোমান্টিক দৃশ্যে—গোলাপ বারবার ফিরে এসেছে ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে। বন্দুকের সামনে একটি গোলাপ যেমন শান্তির বার্তা দেয়, তেমনই প্রেমিকের হাতে থাকা গোলাপও ভালোবাসার অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। সম্পর্কের পথে কাঁটা থাকলেও, গোলাপের মতোই ভালোবাসা তার সৌন্দর্য হারায় না।
শিবলিঙ্গে দুগ্ধস্নান, মহাকুম্ভে কি এবার পুণ্যের পথে ভিকি কৌশল?