হাসিনার ‘সহিংস মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া’!
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ধানমন্ডির বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনাকে শেখ হাসিনার ‘সহিংস মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া’ বলেই উল্লেখ করেছে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী বাংলাদেশ সরকার। বৃহস্পতিবার, ঘটনার পরের দিন, তারা প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রকাশ করে। তারা ঘটনাটির নিন্দা করলেও, মূল দায় চাপিয়েছে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর।
হাসিনার বক্তব্যের প্রভাব
অন্তর্বর্তী সরকারের মতে, ভারত থেকে শেখ হাসিনা সম্প্রতি যে ‘প্ররোচনামূলক’ মন্তব্য করেছেন, তার ফলে ক্ষুব্ধ জনগণ ধানমন্ডির ঐতিহাসিক বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। তারা দাবি করেছে, হাসিনা জুলাই গণআন্দোলনের শহিদদের অপমান করেছেন এবং তাদের আত্মত্যাগকে অবজ্ঞা করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, “গত ছ’মাসে ৩২ নম্বর বাড়িতে কোনো ধরনের আক্রমণ হয়নি। কিন্তু বুধবার রাতে শেখ হাসিনার বক্তব্যের পরপরই এই ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হয়। তিনি শহিদদের আত্মত্যাগকে কটাক্ষ করেছেন, যা জনগণের আবেগে আঘাত হেনেছে। তার ফলে, বিক্ষুব্ধ জনতা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত বাড়িতে হামলা চালিয়েছে।”
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিক্রিয়া
সরকারের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, জুলাইয়ের গণহত্যা নিয়ে দেশের সাধারণ মানুষের মনে গভীর ক্ষত রয়েছে। শেখ হাসিনার বক্তব্য সেই ক্ষতে নুনের ছিটা দিয়েছে। তবে সরকার জনগণের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য সচেষ্ট রয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে।
বিবৃতিতে ভারত সরকারকেও বার্তা দেওয়া হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে, শেখ হাসিনাকে যেন ভারতে বসে কোনো বিবৃতি দেওয়ার সুযোগ না দেওয়া হয়। বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, “সরকার আশা করে, ভারত যেন তার ভূখণ্ডকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করার কাজে ব্যবহৃত হতে না দেয় এবং শেখ হাসিনাকে বিতর্কিত মন্তব্য করার সুযোগ না দেয়।”
ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা
বুধবার রাতে ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর বাড়িতে ব্যাপক তাণ্ডব চলে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনার ভাষণ প্রচার করার কিছুক্ষণ পরই বিক্ষুব্ধ জনতা রাস্তায় নেমে আসে। বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাত প্রায় ১১টার দিকে একটি ক্রেন ও এক্সক্যাভেটর এনে ভবনটির একাংশ ভাঙা শুরু হয়। রাত সাড়ে ১২টার দিকে ভবনের একটি অংশ পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় এবং পরে শেখ হাসিনার প্রয়াত স্বামীর বাসভবন সুধা সদনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
হাসিনার প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি থেকে জাতির পিতা স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এরপর পাকিস্তানি বাহিনী তাঁকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। তখনও বাড়িটি লুটপাট করা হয়েছিল, কিন্তু এভাবে ধ্বংস করা হয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের জনগণ এর সঠিক বিচার করবেন।”
পটভূমি ও সাম্প্রতিক পরিস্থিতি
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকেই মুজিবের ধানমন্ডির বাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল। সেই সময়ও ক্ষুব্ধ জনতা বাড়িটিতে হামলা চালিয়েছিল। এখন, হাসিনার সরকারের পতনের ছ’মাস পর আবারও সেই বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হলো।
অন্তর্বর্তী সরকারের এই বিবৃতি এবং সাম্প্রতিক সহিংসতা বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার নতুন দিক উন্মোচন করছে। দেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক মহল এই ঘটনাপ্রবাহের পরবর্তী দিক নির্দেশনার দিকে নজর রাখছে।
উদিত নারায়ণের চুমু বিতর্কে কটাক্ষ উরফির! বয়স টেনে এনে বললেন