Wednesday, February 12, 2025

লিপস্টিক কি ঠোঁটের ক্যানসারের কারণ হতে পারে? সতর্ক হবেন যেভাবে

Share

লিপস্টিক কি ঠোঁটের ক্যানসারের কারণ হতে পারে?!

লিপস্টিক নারীদের সাজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। অনেকের কাছেই এটি শুধুমাত্র প্রসাধনী নয়, বরং আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর মাধ্যম। কিন্তু কখনও কি ভেবে দেখেছেন, এই সুন্দর রঙিন লিপস্টিক থেকে আপনার ঠোঁটের ক্ষতি হতে পারে? এমনকি ক্যানসারের মতো মারাত্মক রোগের ঝুঁকিও থাকতে পারে?

ঠোঁটেও ক্যানসার হয়?

ক্যানসার শরীরের যে কোনো অংশেই হতে পারে, ঠোঁটও তার ব্যতিক্রম নয়। যদিও ঠোঁটের ক্যানসার খুবই বিরল, তবু এটি সম্পূর্ণ অস্বাভাবিক নয়। আমেরিকায় প্রতি বছর মাত্র ১% মানুষ ঠোঁটের ক্যানসারে আক্রান্ত হন। ভারতে সংখ্যাটি আরও কম। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, মুখগহ্বরের ক্যানসার ঠোঁট পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ভারতে মুখগহ্বরের ক্যানসারের হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। মুখের ক্যানসারের কারণগুলোর মধ্যে ধূমপান, তামাকজাত দ্রব্য সেবন ও অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা মূল ভূমিকা রাখে। তবে, লিপস্টিক ব্যবহারে ক্যানসার হতে পারে কি না, তা নিয়ে এখনও স্পষ্ট কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।

লিপস্টিক কি সত্যিই ক্যানসারের কারণ হতে পারে?

অনেক লিপস্টিকে নানা ধরনের রাসায়নিক থাকে। সস্তা বা নিম্নমানের লিপস্টিকে লেড (lead), ক্যাডমিয়াম (cadmium), পারদ (mercury), আর্সেনিক (arsenic)-এর মতো ক্ষতিকর ধাতু থাকতে পারে, যা দীর্ঘদিন ব্যবহারে শরীরে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি এই রাসায়নিক উপাদানগুলো উচ্চমাত্রায় থাকে, তবে তা ক্যানসার সৃষ্টির আশঙ্কা বাড়াতে পারে।

তবে চিকিৎসকরা এটাও বলছেন যে, শুধু লিপস্টিক নয়, তামাকজাত দ্রব্য (গুটখা, খৈনি, ধূমপান), অতিরিক্ত রোদে থাকা এবং অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসও ঠোঁটের ক্যানসারের কারণ হতে পারে।

কী লক্ষণ দেখলে সতর্ক হবেন?

আপনার ঠোঁটে যদি নিম্নলিখিত কোনো পরিবর্তন দেখা দেয়, তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত—

🔹 ঠোঁটের উপর অস্বাভাবিক মাংসপিণ্ড বা আঁচিল গজিয়ে ওঠা
🔹 ছোট ব্রণ বা ফোলাভাব, যা দীর্ঘদিনেও সারে না
🔹 ঠোঁট অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে যাওয়া ও চামড়া উঠতে থাকা
🔹 ঠোঁটের রঙ হঠাৎ পরিবর্তন হওয়া (গাঢ় লাল বা সাদা দাগ পড়া)
🔹 ঠোঁটে ঘা বা ক্ষত, যা অনেকদিনেও শুকোয় না
🔹 ঠোঁটের কোনো অংশ শক্ত হয়ে যাওয়া বা চামড়া মোটা হয়ে যাওয়া

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই লক্ষণগুলো ঠোঁটের ক্যানসারের ইঙ্গিত হতে পারে, বিশেষ করে যদি এগুলো দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়।

লিপস্টিক ব্যবহার করলে কী সতর্কতা অবলম্বন করবেন?

সুস্থ ত্বকের জন্য ভালো মানের লিপস্টিক বেছে নিন।
কম দামের লিপস্টিকের পরিবর্তে প্রাকৃতিক উপাদানযুক্ত ব্র্যান্ড ব্যবহার করুন।
‘লেড-ফ্রি’ বা ‘অর্গানিক’ লিপস্টিক ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।
এসপিএফ (SPF) যুক্ত লিপস্টিক বা লিপ বাম ব্যবহার করুন, যাতে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব ঠোঁটের উপর না পড়ে।
একই লিপস্টিক অনেক বছর ধরে ব্যবহার করবেন না।
লিপস্টিক ব্যবহারের আগে ঠোঁট ভালোভাবে পরিষ্কার করুন এবং লিপ বাম লাগান।

ঠোঁটের ক্যানসারের চিকিৎসা কীভাবে হয়?

যদি চিকিৎসকের সন্দেহ হয় যে ঠোঁটে ক্যানসারের কোষ রয়েছে, তবে বায়োপসি (biopsy) বা এফএনএসি (FNAC) পরীক্ষা করা হয়। রোগের অবস্থার উপর ভিত্তি করে—

🔹 থেরাপি: কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি ব্যবহার করা হয়।
🔹 অস্ত্রোপচার: আক্রান্ত অংশ শল্যচিকিৎসার মাধ্যমে সরিয়ে ফেলা হতে পারে।
🔹 ঠোঁট পুনর্গঠন (Reconstruction): প্রয়োজনে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ঠোঁট পুনর্গঠন করা হয়।

লিপস্টিক নয়, তামাকজাত দ্রব্য বেশি ক্ষতিকর!

বিশেষজ্ঞদের মতে, লিপস্টিকের তুলনায় ধূমপান, গুটখা, তামাকজাত দ্রব্যের কারণে ঠোঁটের ক্যানসারের ঝুঁকি অনেক বেশি। ধোঁয়াযুক্ত এবং ধোঁয়াবিহীন তামাকের কারণে ঠোঁট ও মুখগহ্বরের ক্যানসারের আশঙ্কা বহুগুণ বেড়ে যায়। তাই তামাকজাত দ্রব্য এড়িয়ে চলাই সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত।

সতর্ক থাকুন, সুস্থ থাকুন!

লিপস্টিক ব্যবহারে সরাসরি ক্যানসারের ঝুঁকি কম, তবে নিম্নমানের প্রসাধনী এড়িয়ে চলা উচিত। পাশাপাশি সুস্থ জীবনযাত্রা মেনে চলুন, পর্যাপ্ত পানি পান করুন, স্বাস্থ্যকর খাবার খান এবং ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য এড়িয়ে চলুন। ঠোঁটে কোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

সৌন্দর্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই সুস্থ ত্বক ও শরীরের যত্ন নেওয়াও জরুরি!

বিয়ের মাস দুয়েকের মধ্যে স্বামীর সঙ্গে মন কষাকষি শোভিতার, কোথায় ভুল করেছিলেন নাগা চৈতন্য?

Read more

Local News