নায়িকার প্রেম, বিশ্বাসঘাতকতা!
ছোট পর্দার জনপ্রিয় মুখ, যাঁর ব্যক্তিগত জীবন বারবার উঠে এসেছে শিরোনামে। প্রেম, বিশ্বাসঘাতকতা, বিবাহবিচ্ছেদ— সব মিলিয়ে এক উত্থান-পতনের গল্প পবিত্রা পুনিয়ার, যিনি অভিনয় জগতে পরিচিত নেহা সিংহ নামে। একাধিক প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার জন্য বহুবার বিতর্কে জড়িয়েছেন তিনি। অবশেষে জীবন থেকে প্রেম মুছে ফেলে ‘সিঙ্গল’ থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এই নায়িকা।
কথিত ‘চরিত্রহীনা’ থেকে টেলিভিশন তারকা
১৯৮৬ সালের এপ্রিল মাসে উত্তরপ্রদেশের বাঘপতে জন্ম নেহার। পরে পরিবারের সঙ্গে দিল্লিতে চলে আসেন তিনি। বাবা পুলিশকর্মী ছিলেন, মা ছিলেন সাধারণ গৃহবধূ। শৈশবে তাঁর স্বপ্ন ছিল আইপিএস অফিসার হওয়ার, এমনকি ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য দেড় বছর পড়াশোনাও করেছিলেন। কিন্তু ভাগ্য তাঁকে ভিন্ন পথে নিয়ে যায়।
কলেজের পড়াশোনা শেষ করার পর মডেলিংয়ের প্রস্তাব আসে নেহার কাছে। ২০০৯ সালে জনপ্রিয় এক রিয়্যালিটি শোয়ে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিনোদন জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর একের পর এক টেলিভিশন সিরিয়ালে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। ‘গীত-হুয়ি সবসে পরায়ি’, ‘লভ ইউ জ়িন্দেগি’, ‘নাগিন ৩’, ‘বালবীর রিটার্নস’-এর মতো ধারাবাহিকে তাঁর অভিনয় দর্শকদের মন জয় করে নেয়। তবে পেশার চেয়ে ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়েই তাঁকে বেশি আলোচনায় দেখা গেছে।
গোপন বিয়ে, পরকীয়া ও বিতর্ক
বলিপাড়ার খবর অনুযায়ী, ২০১৫ সালে নেহা গোপনে বিয়ে করেন সুমিত মাহেশ্বরী নামে এক হোটেল ব্যবসায়ীকে। কিন্তু সেই খবর দীর্ঘদিন লুকিয়ে রেখেছিলেন তিনি। পরবর্তীতে সুমিত অভিযোগ তোলেন যে, নেহা একাধিকবার পরকীয়ায় জড়িয়েছিলেন। চারবার তাঁকে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন নেহা। তাঁর মতে, অভিনেতা পরশ ছাবড়া ও প্রতীক সহজপালের সঙ্গে বিবাহিত অবস্থায়ই সম্পর্কে জড়ান নেহা। শুধু তাই নয়, বিনোদন জগতের বাইরের ব্যক্তিদের সঙ্গেও তাঁর ঘনিষ্ঠতা ছিল বলে দাবি করেন সুমিত।
২০২০ সালে পরশ ছাবড়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি নেহাকে ভালোবেসে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন, কিন্তু পরে জানতে পারেন যে নেহা বিবাহিত। সেই সত্যি জানার পরই তিনি সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসেন। এই প্রসঙ্গে সুমিত একবার বলেছিলেন, ‘‘আমি পরশকে মেসেজ করেছিলাম, বলেছিলাম— আমি ওকে ডিভোর্স দেওয়ার পর তুমি ওকে বিয়ে করতে পার।’’ পরবর্তীতে নেহা ও সুমিতের আনুষ্ঠানিক বিবাহবিচ্ছেদ হয়।
বিগ বস ও নতুন প্রেম
২০২০ সালে জনপ্রিয় রিয়্যালিটি শো ‘বিগ বস ১৪’-তে প্রতিযোগী হিসেবে অংশ নেন নেহা। এই শো-তেই তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে অভিনেতা এজাজ খানের। দুজনের রসায়ন দেখে দর্শকেরাও বিস্মিত হন। শো শেষ হওয়ার পরও তাঁদের সম্পর্ক বহাল থাকে এবং ২০২২ সালে এজাজ নেহাকে হীরের আংটি দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেমের প্রস্তাব দেন।
কিন্তু এই সম্পর্কও দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ২০২৪ সালের শুরুতেই নেহা ও এজাজ তাঁদের বিচ্ছেদের ঘোষণা করেন। যদিও তাঁরা তাঁদের ব্রেকআপের কারণ নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলেননি, তবে গুঞ্জন ওঠে যে তাঁদের সম্পর্কের মধ্যে অদৃশ্য ফাটল অনেক আগে থেকেই ছিল।
নিজেকে খুঁজে পাওয়া ও নতুন সিদ্ধান্ত
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে নেহা বলেন, ‘‘আমি যে স্কুলে পড়তাম, সেখানকার শিক্ষকেরা আমায় চরিত্রহীনা বলে দাগিয়ে দিয়েছিলেন। তখন খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। কিন্তু এখন বুঝি, লোকে যেমন-তেমন মন্তব্য করবেই, এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই।’’
তিনি আরও জানান, ভবিষ্যতে বিয়ের পরিকল্পনা তাঁর নেই। ‘‘আমার বাবা মারা গিয়েছেন। আমার ভাই অসুস্থ। মাকে তাঁর স্বামী ও ছেলের জন্য কাঁদতে দেখেছি। তাই আমি বিয়ে করতে চাই না।’’ বলেছিলেন নেহা।
সামাজিক মাধ্যমে জনপ্রিয়তা
প্রেমের সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে এলেও নেহার জনপ্রিয়তায় কোনও প্রভাব পড়েনি। সামাজিক মাধ্যমে তাঁর বিশাল ভক্তসংখ্যা রয়েছে। ইনস্টাগ্রামে তাঁর অনুগামী সংখ্যা ২১ লক্ষের গণ্ডি পার করেছে। তাঁর অনুরাগীরা তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে যতই বিতর্ক করুন না কেন, তিনি নিজেকে গড়ে তুলেছেন একজন শক্তিশালী, আত্মনির্ভর নারী হিসেবে।
বিয়ের মাস দুয়েকের মধ্যে স্বামীর সঙ্গে মন কষাকষি শোভিতার, কোথায় ভুল করেছিলেন নাগা চৈতন্য?