সরস্বতী বন্দনা!
সরস্বতী পুজো বাঙালির জীবনে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে। এটা শুধু এক ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং প্রতিটি বাঙালি পরিবারের কাছে একটি বিশেষ দিন, যেখানে ভাসে প্রেম, স্নেহ, এবং স্মৃতির দোলা। ছোটবেলায় যে একুশে পুজোয় প্রথম শাড়ি পরার উত্তেজনা ছিল, সেই অনুভূতিই বড় হয়ে স্মৃতি হয়ে ফিরে আসে। অনেকেই কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন তাঁদের সেই ‘প্রথম’ যাত্রা, যেখানে শাড়ি ছিল আত্মবিশ্বাসের প্রতীক, আর পাঞ্জাবি পরা ছিল নতুন এক অভিজ্ঞতা। সারা বছর ধরে, এই একটি দিনেই যেন সবাই চেয়েছিল নিজের সেরা পোশাক পরতে।
এখন সময় অনেক বদলে গেছে। যুগের সঙ্গে উদযাপনও বদলেছে। পাঞ্জাবির তলা থেকে উঁকি দেওয়া পাজামা কিংবা মায়ের ঢিলেঢালা ব্লাউজ আর চোখে পড়ে না। এখনকার তরুণ প্রজন্ম সরস্বতী পুজোর দিন গাঁথছে নতুন স্মৃতি, যেখানে প্রেম এবং স্নেহের রং আলাদা হয়ে গেছে। তবে, যতই বদলাক সময়, বীণাপাণি, হলুদ শাড়ি, পাঞ্জাবির ভিড় আজও সেই পুরনো রূপে ফিরে আসে। আর এই পরিবর্তনের মধ্যে কিছু প্রতিভাবান শিল্পী, সঞ্চালক, অভিনেতা-অভিনেত্রীরা, যারা একসময় এই দিনটির বিশেষ স্মৃতি নিয়ে মুখর, আজও সেই পুরোনো স্মৃতি ধরে রেখেছেন।
সুদীপা চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম শাড়ি পরার স্মৃতি
সঞ্চালিকা সুদীপা চট্টোপাধ্যায়ের স্মৃতিতে, সরস্বতী পুজো মানে ছিল প্রথম শাড়ি পরার দিন। তিনি বলেন, “মায়ের ধারণা ছিল, শাড়ি পরলেই তা ছিঁড়ে ফেলব। কিন্তু পুজোতে সে সব নিয়ম তো মানা যেত না! সুতরাং শাড়ির খোঁজ লাগত কাকিমা, জেঠিমা বা দিদিদের কাছ থেকে।’’ তাঁর প্রথম শাড়ি পরিয়েছিলেন অভিনেত্রী বিদীপ্তা চক্রবর্তী। সুদীপা জানান, “সরস্বতী পুজো মানে শুধু প্রথম শাড়ি পরা নয়, প্রথম প্রেম, প্রথম ভালো লাগার উদ্যাপন।”
সৌমিতৃষা কুন্ডুর প্রেমের খোঁজ
অভিনেত্রী সৌমিতৃষা কুন্ডু ছোটবেলার সরস্বতী পুজো স্মৃতিতে ভাসছেন। তিনি বলেন, “মায়ের শাড়ি পরলে আর কিছুই করতে হবে না, শাড়ির সঙ্গে সব ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু এক আফসোস রয়ে গেছে, সরস্বতী পুজোর দিনে কাউকে প্রেমের প্রস্তাব পাইনি!” তবে, তাঁর মনোযোগ ছিল সাজগোজে এবং সার্বিক প্রস্তুতিতে, যা তাঁকে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।
মীর আফসার আলির কন্যার প্রথম শাড়ি পরা
সঞ্চালক মীর আফসার আলি তাঁর কন্যা মুস্কানের সরস্বতী পুজোর স্মৃতির কথা শেয়ার করেন। তিনি বলেন, “মুস্কান প্রথম শাড়ি পরার পর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। তার মুখে যে আনন্দের ঝলক ছিল, তা আজও আমি ভুলতে পারি না। পুজো মানে তো এটাই, প্রথম সাজার আনন্দ।”
সন্দীপ্তা সেনের শাহিদ কপূর নিয়ে বসন্ত বিলাস
অভিনেত্রী সন্দীপ্তা সেন ছোটবেলায় সরস্বতী পুজোতে সাদা-লাল পাড় শাড়ি পরতেন এবং মাঝে মাঝে প্রেমের প্রস্তাবও পেতেন। তবে তাঁর কাছে সবসময় শাহিদ কপূরের প্রেমই ছিল বড়। তিনি বলেন, “এত প্রেম প্রস্তাব আসার পরও আমি শাহিদকেই ভাবতাম, আর তাঁর ছবি ডায়েরিতে রাখতাম।”
কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্যা কিয়ার উৎসাহ
অভিনেত্রী কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি এখন এক পরিচিত মুখ, বলেন, “আমার প্রথম হিল জুতো পরার স্মৃতি সরস্বতী পুজোতেই। তবে আজকাল আমার মেয়ে কিয়া উৎসাহ নিয়ে পুজোর প্রস্তুতি নেয়। সে শাড়ি পরবে, গয়না পরবে, সাজবে, সব কিছু ঠিক করে রাখে।” তবে কনীনিকা জানালেন, তাঁর মেয়ে স্কুলে পুজো উপভোগ করতে পারছে না, যা তিনি খুবই মিস করেন।
এইভাবে, সরস্বতী পুজোর দিনগুলো আজও বাঙালির জীবনে এক বিশেষ জায়গা ধরে রেখেছে, যেখানে নতুন স্মৃতি তৈরি হয়, পুরনো স্মৃতি ফিরে আসে। এটি শুধু পুজো নয়, এটি এক অবিরাম উৎসব, যেখানে বসন্তের হাসি, প্রেমের প্রস্তাব, এবং প্রথম প্রেমের উন্মোচন, সব কিছু মিশে একাকার হয়ে যায়।
গোটা রান্না: সরস্বতী পুজোয় পূর্ব বাংলার ঐতিহ্য, চচ্চড়ির স্বাদে নতুনত্ব