‘অমরসঙ্গী’তে সোহিনী-বিক্রমের রসায়ন?
সাম্প্রতিক সময়ে ‘হরর কমেডি’ ধারা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যেখানে ভূত আর প্রেম পাশাপাশি এগিয়ে চলে, তাও আবার মজার মোড়কে! ভয় নয়, বরং ভূতের উপস্থিতিতে গল্প হয়ে ওঠে রোমাঞ্চকর ও হাস্যরসপূর্ণ। ‘অমরসঙ্গী’ সেই ধারারই একটি ছবি, তবে এখানে প্রেম আরও বেশি রোমান্টিক, আধুনিক এবং বাস্তবসম্মত। হ্যাঁ, এ গল্পে ভূতের সঙ্গে প্রেমই মুখ্য! আর সেই প্রেম পুরনো দিনের ভৌতিক কাহিনির মতো নয়, বরং হালফ্যাশনের প্রেম, যেখানে আত্মা লিভ-ইন করতে দ্বিধা করে না, বা প্রেমিক অন্য কাউকে পছন্দ করলে ভূত-প্রেমিকাও হিংসুটে হয়ে ওঠে!
সোহিনী সরকার এবং বিক্রম চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয় এই ছবিকে আলাদা মাত্রা দিয়েছে। দু’জনেই দক্ষ অভিনেতা, আর তাঁদের রসায়ন এতটাই স্বাভাবিক যে ভূত-মানুষের প্রেমও বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়। ছবির চিত্রগ্রহণ এবং সম্পাদনা প্রশংসার দাবি রাখে। সিনেমার প্রতিটি ফ্রেমে রয়েছে এক ধরনের মোহ, যা দর্শকদের ধরে রাখে। অঙ্কুশ হাজরা, কিউ এবং মধুমিতা সরকারের ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রগুলি গল্পের গাঁথুনিকে আরও শক্তিশালী করেছে। তাই পরিচালক দিব্য চট্টোপাধ্যায় এবং চিত্রনাট্যকার অরিত্র সেনগুপ্ত নিশ্চয়ই প্রশংসা পাবেন।
তবে, কিছু জায়গায় ছবিটি দুর্বলও বটে। সাব-প্লটগুলোর পরিপূর্ণতা নেই। কন্যাসন্তান হারানোর শোক যেকোনো বাবা-মায়ের জন্য চরম কষ্টের বিষয়, অথচ এখানে তা প্রায় গুরুত্বই পায়নি। বরং তাঁদের স্বাভাবিকের চেয়েও বেশি স্বাভাবিক দেখানো হয়েছে, যা বাস্তবসম্মত মনে হয় না। আরেকটি দুর্বল দিক হলো, প্রেমিকের সদ্য ভেঙে যাওয়া সম্পর্কের পরবর্তী ঘটনাগুলি খুব তাড়াহুড়ো করে দেখানো হয়েছে। গভীর জীবনযাপনকে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় গল্পের বিশ্বাসযোগ্যতা কিছুটা কমে গেছে। শোক, একাকিত্ব, বা নতুন প্রেম— প্রতিটি স্তরই আলাদা অনুভূতির দাবি রাখে, অথচ এখানে সেগুলো সরলরেখায় গাঁথতে গিয়ে কিছুটা এলোমেলো লেগেছে।
প্রথমার্ধ যতটা শক্তিশালীভাবে গল্প সাজিয়েছিল, দ্বিতীয়ার্ধ ততটা জমাট বাঁধেনি। গল্পের প্রাথমিক সম্ভাবনা যতটা আকর্ষণীয় ছিল, শেষের অংশ ততটা প্রভাব ফেলতে পারেনি। তবে ছবির প্রাণ হল অভিনয়, যা এই ছোটখাটো ত্রুটিগুলো ঢেকে দিয়েছে। বিশেষ করে সোহিনী সরকারের অভিনয় একেবারে প্রাণবন্ত। তাঁর তাকানো, অভিমান, রাগ— সব কিছু এতটাই স্বতঃস্ফূর্ত যে মনে হয় তিনি চরিত্রটিকে পুরোপুরি নিজের করে নিয়েছেন। বিক্রমও প্রেমিক চরিত্রে দারুণ বিশ্বাসযোগ্য।
যদিও কিছু ছোটখাটো খামতি আছে, তবু ‘অমরসঙ্গী’ অবশ্যই দেখার মতো ছবি। এটি একটি পারিবারিক বিনোদনমূলক সিনেমা, যা সবার সঙ্গে বসে উপভোগ করা যায়। বিশেষ করে, বাংলায় ভূতুড়ে প্রেমের গল্পের এমন স্টাইলিশ উপস্থাপনা খুব বেশি হয়নি। ছবির ক্যামেরার কাজ ও সম্পাদনায় রয়েছে এক ধরনের মাদকতা, যা দর্শকদের টানতে বাধ্য। তাই যারা সরল, নিখুঁত প্রেমের গল্প পছন্দ করেন, তাদের জন্য ‘অমরসঙ্গী’ একদম উপযুক্ত ছবি।
গোটা রান্না: সরস্বতী পুজোয় পূর্ব বাংলার ঐতিহ্য, চচ্চড়ির স্বাদে নতুনত্ব