Monday, December 1, 2025

শিশির বিন্দুর মতো হারিয়ে যাওয়া এক সুন্দরীর করুণ পরিণতি

Share

সুন্দরীর করুণ পরিণতি!

ফ্রান্সের ছোট্ট শহর পইতিয়েরসে জন্ম নেওয়া ব্লাশ মন্যিয়ের ছিলেন রূপে-গুণে অতুলনীয়। সম্ভ্রান্ত অভিজাত পরিবারের এই তরুণীকে বিয়ে করার জন্য অনেক যোগ্য পাত্রের আগ্রহ ছিল। কিন্তু ভাগ্য ছিল নিষ্ঠুর। এক মুহূর্তে তার জীবন বদলে যায়, আর সেই পরিবর্তন নিয়ে আসে তার নিজের মা!

প্রেমের শাস্তি—কারাগারে বন্দি জীবন

১৮৭৬ সালে ২৭ বছরের ব্লাশ মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবেসে ফেলেন এক আইনজীবীকে, যিনি বয়সে তার চেয়ে বেশ বড় এবং আর্থিক অবস্থাও ছিল তুলনামূলক দুর্বল। ব্লাশের মা এই সম্পর্ক মেনে নিতে পারলেন না। উচ্চবিত্ত পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে তিনি এক ভয়ংকর সিদ্ধান্ত নিলেন।

একদিন হঠাৎ করেই ব্লাশ নিখোঁজ হয়ে যান। কেউ তাকে খুঁজে পায়নি, যেন বাতাসে মিলিয়ে গেছেন। পরিবারের পক্ষ থেকে দেখানো হলো গভীর শোক, কিন্তু কিছুদিন পর সেই শোকও হারিয়ে গেল। স্থানীয় প্রশাসন, প্রতিবেশী—সকলেই ধীরে ধীরে ভুলে যেতে থাকল তার অস্তিত্ব।

২৫ বছরের অন্ধকার বন্দিত্ব

কেটে গেল ২৫ বছর। একদিন হঠাৎ ফ্রান্সের অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসে একটি বেনামি চিঠি এসে পৌঁছালো। তাতে লেখা ছিল— মন্যিয়ের পরিবারের চোরকুঠুরিতে এক তরুণীকে বছরের পর বছর বন্দি করে রাখা হয়েছে, সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায়, প্রায় অনাহারে।

প্রথমে এটি বিশ্বাস করতে পারেননি প্রশাসনের কর্মকর্তারা। ব্লাশের পরিবার ছিল শহরের অন্যতম অভিজাত পরিবার। তার মা ছিলেন সমাজের উচ্চপদস্থ নারী, যিনি বিভিন্ন জনহিতকর কাজ করতেন। কিন্তু সন্দেহ দূর করতে পুলিশ তদন্তে নামে।

যখন তারা মন্যিয়ের প্রাসাদে পৌঁছালো, প্রথমে বাধার সম্মুখীন হলো। কিন্তু পুলিশ জোর করেই ভেতরে ঢোকে। একসময় খুঁজতে খুঁজতে তারা পৌঁছায় বাড়ির উপরতলায় একটি তালাবদ্ধ ঘরের সামনে। দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করার পর যা দেখলেন, তাতে শিউরে উঠলেন সবাই!

ভয়ংকর দৃশ্য—কঙ্কালসার এক বন্দি

ঘরটি ছিল ঘুটঘুটে অন্ধকার, চারপাশে এক বিভৎস দুর্গন্ধ। জানালার পর্দাগুলো এতটাই ধুলো জমে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল যে সূর্যের আলো পর্যন্ত প্রবেশ করতে পারছিল না। জানালা খোলার পর যে দৃশ্য ধরা দিল, তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।

একটি জীর্ণশীর্ণ বিছানার এক কোণে পড়ে ছিলেন ব্লাশ মন্যিয়ের, সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায়। তার শরীর এতটাই কঙ্কালসার হয়ে গিয়েছিল যে তাকে দেখে চেনার উপায় ছিল না। চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল পচে যাওয়া খাবার, বিষ্ঠা আর পোকামাকড়। তার দীর্ঘ, অবিন্যস্ত চুল জট পাকিয়ে শরীর ঢেকে রেখেছিল। লোকজনের উপস্থিতিতে সে শুধু কাঁপছিল, মুখ দিয়ে কোনোক্রমে কিছু অস্পষ্ট শব্দ বেরোচ্ছিল।

মায়ের নির্মমতা, সমাজের নীরবতা

পুলিশের কাছে উঠে এল এক ভয়ংকর সত্য। ব্লাশের মা তাকে নিজের ঘরেই আটকে রেখেছিলেন, কারণ তিনি চেয়েছিলেন মেয়ের ‘ভুল’ সংশোধন করতে। ২৫ বছর ধরে সেই কিশোরী থেকে যুবতী, যুবতী থেকে মধ্যবয়স্ক নারীতে পরিণত হয়েছেন অন্ধকার কারাগারে। দিনের পর দিন তিনি পচা খাবার খেয়ে বেঁচে থেকেছেন, আলোর মুখ দেখেননি, স্বজনদের মুখ দেখেননি।

যখন পুলিশ তাকে উদ্ধার করল, তখন তার ওজন ছিল মাত্র ২৫ কেজি! দীর্ঘ বন্দিদশার কারণে ব্লাশ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে চিকিৎসা শুরু হলেও স্বাভাবিক জীবনে আর ফিরে আসতে পারেননি তিনি।

মায়ের পতন, সমাজের বিচার

ব্লাশের মা তখন ছিলেন বৃদ্ধা। পুলিশি হেফাজতে নেওয়ার ১৫ দিনের মাথায় তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মৃত্যুর আগে তিনি নিজের অন্যায়ের জন্য অনুশোচনা করেছিলেন বলে জানা যায়। কিন্তু তা কি সত্যিই অনুশোচনা ছিল, নাকি নিজের পরিণতির ভয়, তা কেউ জানে না।

ব্লাশের ভাই আদালতে বিচারের সম্মুখীন হন, তবে সরাসরি এই অপরাধে তিনি কতটা জড়িত ছিলেন, তা বিতর্কিত রয়ে যায়।

এক করুণ পরিণতি

১৯১৩ সালে, দীর্ঘ চিকিৎসার পরও, ব্লাশ স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। হাসপাতালের একটি কক্ষে একাকী, নীরবে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

তার গল্প একটি নিষ্ঠুর সত্যের প্রতিচ্ছবি— যেখানে সমাজের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরাও নৃশংস হতে পারেন, এবং ভালোবাসার জন্য কখনো কখনো মূল্য দিতে হয় অবর্ণনীয় যন্ত্রণা সহ্য করে। ব্লাশ মন্যিয়েরের জীবন আমাদের মনে করিয়ে দেয়, কেবল জন্মসূত্রে অভিজাত হওয়াই যথেষ্ট নয়, মানবিকতাই আসল পরিচয়।

গোটা রান্না: সরস্বতী পুজোয় পূর্ব বাংলার ঐতিহ্য, চচ্চড়ির স্বাদে নতুনত্ব

Read more

Local News