শীতের ছোঁয়া নেই, তবু কুয়াশার চাদর!
বসন্তের আবহ তবু শীতের স্মৃতি! গত কয়েক দিনে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সকাল জুড়ে মোটা কুয়াশার আস্তরণ দেখা গিয়েছে। কলকাতা থেকে জেলার আনাচে-কানাচে, সর্বত্রই সকাল শুরু হয়েছে সাদাটে আবহে। অথচ, শীতের কামড় নেই বললেই চলে। তাহলে এই ঘন কুয়াশার কারণ কী?
হঠাৎ এই কুয়াশা কেন?
সাধারণত শীতকালে আকাশ থাকে পরিষ্কার, বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণও কম থাকে। কিন্তু এবার সেই নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটেছে। আবহাওয়া দফতরের তথ্য অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগরের ওপর ওড়িশা উপকূল সংলগ্ন এলাকায় একটি বিপরীত ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছিল। এর ফলে দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে আর্দ্র বাতাস রাজ্যে প্রবেশ করে। এই বাতাসের আর্দ্রতা ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি এসে জমাট বাঁধে, যার ফলে কুয়াশার সৃষ্টি হয়।
কুয়াশা তৈরি হওয়ার বৈজ্ঞানিক কারণ
কুয়াশা গঠনের জন্য মূলত তিনটি শর্তের প্রয়োজন হয়: ১. পরিষ্কার আকাশ: মেঘমুক্ত আকাশ থাকলে তাপ বিকিরণ হয় সহজে, যা কুয়াশা তৈরির সহায়ক। 2. বাতাসে আর্দ্রতা: বাতাসের জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে কুয়াশার সৃষ্টি করে। 3. হালকা বাতাস: বেশি গতির বাতাস থাকলে জলকণা স্থির থাকতে পারে না এবং কুয়াশা জমতে পারে না।
গত কয়েক দিনে এই তিনটি শর্তই বজায় ছিল, বিশেষ করে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল বেশি। পাশাপাশি, বাতাসের গতি খুবই কম ছিল, যার ফলে জলীয়বাষ্প এক জায়গায় স্থির থেকে কুয়াশার ঘনত্ব বাড়িয়েছে।
কুয়াশার প্রভাব
কুয়াশার কারণে দৃশ্যমানতা মারাত্মকভাবে কমে গিয়েছিল। ভোরের দিকে রাস্তায় চলাচল করা মানুষ এবং যানবাহনের চালকদের বেশ অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। কোথাও কোথাও ২০ ফুট দূরের কিছুই স্পষ্টভাবে দেখা যায়নি। কলকাতার পাশাপাশি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হুগলি, বর্ধমান, মেদিনীপুর এবং নদিয়া জেলাতেও এই প্রবল কুয়াশার প্রভাব পড়েছে।
তাপমাত্রার ওঠানামা
শীতের অনুভূতি প্রায় নেই বললেই চলে, কারণ তাপমাত্রার তেমন হেরফের হয়নি। রাতের তাপ বিকিরণ বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় ভোরের দিকে ঠান্ডা অনুভব করার কথা থাকলেও তা হয়নি। আবহাওয়াবিদদের মতে, মাটির কাছাকাছি থাকা আর্দ্র বাতাস তাপকে আটকে রেখেছে, যার ফলে শীতের কামড় পাওয়া যাচ্ছে না। তবে সোমবার থেকে বাতাসের আর্দ্রতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে, ফলে ধীরে ধীরে কুয়াশার পরিমাণ কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কতদিন চলবে এই পরিস্থিতি?
আবহাওয়া অফিসের অধিকর্তা এইচআর বিশ্বাস জানিয়েছেন, মঙ্গলবার থেকেই কুয়াশার ঘনত্ব কমতে শুরু করবে। তাপমাত্রাও কিছুটা কমতে পারে, তবে খুব বেশি শীতের আশা করা যাচ্ছে না। আগামী কয়েক দিনে সকালের আবহাওয়া ধীরে ধীরে স্পষ্ট হতে পারে। তবে বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকলে মাঝেমধ্যেই সকালবেলা সামান্য কুয়াশার দেখা মিলতে পারে।
উপসংহার
শীত প্রায় বিদায় নিতে বসেছে, তবু কুয়াশার মোড়কে ঢাকা পড়েছে ভোরের বাংলা। আবহাওয়ার সাময়িক পরিবর্তনের ফলে তৈরি হওয়া এই দৃশ্য আপাতত বিদায় নিতে চলেছে। কিন্তু প্রকৃতির খেয়াল যে কখন কী চমক দেবে, তা বলা কঠিন।
গোটা রান্না: সরস্বতী পুজোয় পূর্ব বাংলার ঐতিহ্য, চচ্চড়ির স্বাদে নতুনত্ব