গোটা রান্না!
সরস্বতী পুজো আসলেই এপার বাংলার মানুষের মনে গোটা রান্নার কথা ঘুরপাক খায়। এই বিশেষ রান্নাটি এপার বাংলার খাদ্যসংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। সরস্বতী পুজোর পরদিন শীতলষষ্ঠী পালনকারী অনেকেই গোটা রান্না খেতে ভালোবাসেন। তবে শুধু এপার বাংলায় নয়, ওপার বাংলাতেও এর কদর রয়েছে, যদিও সেখানে এই ঐতিহ্যটা ততটা প্রচলিত নয়। এপার বাংলার মানুষরা বিশেষ করে গোটা রান্নার সময় খুবই উৎসাহী হন এবং প্রতিবেশী কিংবা বন্ধুবান্ধবদের বাড়িতে গিয়ে এর স্বাদ নেওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকেন।
গোটা রান্না কিন্তু আসলে খুবই সহজ এবং ঐতিহ্যবাহী একটি পদ্ধতি, যেখানে একাধিক সবজি একসাথে রান্না করা হয়। ৯টি ছোট আলু, বেগুন, শিম, করাইশুঁটি, কাঁচা লঙ্কা, রাঙা আলু, গাজর, বিনস, শীষ পালং, লাউ শাক—এই সমস্ত সবজি একসাথে সেদ্ধ করে বা মশলা দিয়ে ভেজে একাকার হয়ে ওঠে। রান্নার মূল কথা হলো, সবকিছু একসাথে এবং গোটা রেখে রান্না করা। এটি শুধু খাবারের স্বাদ বাড়ায় না, বরং এতে থাকে এক ধরণের সংস্কৃতিরও পরিপূরকতা।
সরস্বতী পুজোর রাতে গোটা রান্নার ঐতিহ্যও রয়েছে। মূলত, পরের দিন শীতলষষ্ঠী হওয়ায় ঠান্ডা খাবার খাওয়ার চল থাকে, আর তাতে রান্না করার জন্য উনুন জ্বলবে না। সেজন্য আগের দিন রাতে প্রস্তুত করা হয় গোটা রান্না। এটি এক ধরনের পরিবারিক ঐতিহ্য, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসছে।
এপার বাংলার লোকেরা যেমন এই গোটা রান্নাকে ভালোবাসেন, তেমনি ওপার বাংলার মানুষেরা এই রেসিপির প্রতি একটু হিংসার চোখে দেখেন। কারণ, তাদের এখানে সরস্বতী পুজোর দিন গোটা রান্নার চল নেই। তবে, এই দিনে যখন এপার বাংলার মানুষ তাদের বন্ধু বা প্রতিবেশীদের গোটা রান্না খাওয়ায়, তখন তা সত্যিই এক বিশেষ অভিজ্ঞতা হয়ে দাঁড়ায়।
তবে গোটা রান্না শুধু সেদ্ধ করে সীমাবদ্ধ থাকে না। অনেকেই একে ভাজাও করে থাকেন, বিশেষ করে গোটা চচ্চড়ি রান্না। এই রান্নায় শষ্, মিষ্টি, মশলার স্বাদও পাওয়া যায়, যা ঝরঝরে শুকনো হয় এবং একবার খেলে তার স্বাদ ভুলতে পারা যায় না।
এবার চলো, জানি কীভাবে বানাতে হয় সেই গোটা চচ্চড়ি:
উপকরণ:
- ১০০ গ্রাম সবুজ মুগ (আগের রাতে ভিজিয়ে সেদ্ধ করা)
- ৯টি ছোট নতুন আলু
- ৯টি ছোট বেগুন
- ৯টি শিম
- ৯টি করাইশুঁটি
- ৯টি কাঁচা লঙ্কা
- ৯টি ছোট রাঙা আলু
- ৯টি গাজর
- ৯টি বিনস
- এক আঁটি শীষ পালং
- ২০০ গ্রাম লাউ শাক
- ৫-৬ টেবিল চামচ সর্ষের তেল
- ২ চা চামচ পাঁচ ফোড়ন
- দেড় চা চামচ জিরে
- ১ চা চামচ গোটা ধনে
- ৪-৫টি শুকনো লঙ্কা
- ২টি তেজ পাতা
- এক চা চামচ চিনি
- এক চা চামচ হলুদ
- আধ চা চামচ লঙ্কাগুঁড়ো
- ২ চা চামচ নুন (স্বাদ অনুযায়ী)
প্রণালী:
প্রথমে শুকনো কড়াইয়ে পাঁচফোড়ন, জিরে, ধনে, তেজপাতা, শুকনো লঙ্কা নিয়ে ভাজুন। তারপর, গুঁড়িয়ে পাত্রে রেখে দিন। গোটা সব্জিগুলি ভালো করে ধুয়ে নিন। শীষ পালং শিকড় বাদ দিয়ে বা কেটে নিতে পারেন, লাউ শাকের ডাঁটা কেটে পাতাগুলি আলাদা করুন।
একটা কড়াইতে সর্ষের তেল গরম করে তাতে তেজপাতা, শুকনো লঙ্কা, পাঁচফোড়ন, জিরে দিয়ে ফোড়ন দিন। তারপর গোটা সবজি দিয়ে মাঝারি আঁচে ভাজুন। একে একে সবজি সিদ্ধ হতে দিন, মাঝে মাঝে উল্টে পাল্টে ঢাকা দিয়ে রান্না করুন। সেদ্ধ হয়ে গেলে শীষ পালং ও লাউ শাক দিয়ে হলুদ, লঙ্কা, নুন দিয়ে নেড়ে চেড়ে রান্না হতে দিন।
সবজির জল শুকিয়ে গেলে চিনি দিয়ে নেড়ে চেড়ে রান্না শেষ করুন। শেষে ভাজা মশলা এবং সর্ষের তেল দিয়ে আরও একটু নেড়ে আঁচ থেকে নামিয়ে নিন। গোটা চচ্চড়ি প্রস্তুত!
এই রেসিপি শুধুমাত্র খাদ্য নয়, এটি একটি ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির রূপ।
মধ্যবিত্তের জন্য স্বস্তি, কিন্তু বড় শিল্পের জন্য নেই তেমন কিছু

