শরীর ও মন ভাল রাখতে ‘পাসেজ্জিয়াতা’-র কার্যকারিতা
বর্তমানে, শরীরচর্চার নানা পদ্ধতি আমাদের চারপাশে প্রচলিত। ঘড়ি ধরে দৌড়ানো বা হাঁটাহাঁটি করা, সকালের বা সন্ধ্যার সময়ের নির্দিষ্ট শিডিউল অনুসরণ করা অনেকের কাছে একঘেয়ে হয়ে উঠতে পারে। এই ধরনের রুটিন থেকে কিছুটা মুক্তি পেতে, আপনি হয়তো জানেন না যে, একটি নতুন পদ্ধতি আপনাকে সাহায্য করতে পারে—‘পাসেজ্জিয়াতা’। কিন্তু এটা কী এবং কীভাবে এটি আমাদের শরীর ও মন ভাল রাখতে সাহায্য করে? চলুন, জানি।
‘পাসেজ্জিয়াতা’—কী এবং কেন?
ইতালির একটি দীর্ঘদিনের রীতি হলো ‘পাসেজ্জিয়াতা’, যা আসলে বিকেল বেলা অলসভাবে হাঁটা এবং হালকা আড্ডা দেওয়া। যদি আপনি একঘেয়ে, গতানুগতিক হাঁটার রুটিনে ক্লান্ত হয়ে যান, তবে ইটালিয়ানদের এই সহজ ও স্বাভাবিক অভ্যাস আপনার জন্য হতে পারে এক নতুন রেহাই। তবে এটিকে ভাববেন না যে, আপনি শুধুমাত্র হাঁটছেন—এটি এক ধরনের সান্ধ্যভ্রমণ যেখানে আপনি অল্প হাঁটার সঙ্গে কথা বলতেও পারবেন। আপনার পাড়া কিংবা এলাকার লোকজনের সঙ্গেও মিলে যেতে পারে এই সময়টিতে।
এখনো আমাদের দেশে অনেকে বিকেলের সময়ে এই ধরনের হাঁটার অভ্যাসে ফিরে আসতে পারেন, যা একসময় একটি পরিচিত দৃশ্য ছিল। নানা কারণে এই অভ্যাস হারিয়ে গেলেও, এখনো বয়স্কদের মধ্যে দেখা যায় এই রীতি চালু রাখতে। কিন্তু, কেন আমরা ‘পাসেজ্জিয়াতা’ অনুসরণ করব? এর বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে, যা আপনাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ রাখবে।
‘পাসেজ্জিয়াতা’ এর উপকারিতা
১. শরীরচর্চার সেরা বিকল্প
বেশিরভাগ সময়ে আমরা ‘হাঁটা’ শব্দটি শুনলে মনে করি যে, এটি শুধুমাত্র শারীরিক ফিটনেসের জন্য। কিন্তু, গবেষণায় দেখা গেছে, খাওয়ার পর কিছু সময় হাঁটলে শরীরের অনেক উপকার হয়। ধীরে ধীরে হাঁটার মাধ্যমে হজম প্রক্রিয়া উন্নত হয়, পেশি শক্তিশালী হয় এবং হার্টের স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। পাসেজ্জিয়াতার মাধ্যমে আপনি অতিরিক্ত চাপ ছাড়াই শরীরচর্চা করতে পারবেন। এর ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সঠিক রক্তপ্রবাহ ও স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
২. হজমে সাহায্য
বিকেলে হাঁটলে, বিশেষ করে দুপুরের খাবারের পর, হজম প্রক্রিয়া আরও স্বাভাবিক হতে সাহায্য করে। দুপুরের খাবারের পর যদি আপনি শুয়ে পড়েন বা বিশ্রাম নেন, তবে পেট ভার হয়ে যেতে পারে, যা পরে হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে। ‘পাসেজ্জিয়াতা’ মানে হলো, কিছুক্ষণ হাঁটলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়া, হাঁটার সময় একে অপরের সঙ্গে গল্পগুজব করলে মানসিক চাপও কমে, যা মন ও শরীরের জন্য ভালো।
৩. সামাজিক সম্পর্কের উন্নতি
বিকেল বেলার হাঁটাহাঁটি শুধু শারীরিক উপকারিতাই দেয় না, এটি সামাজিক সম্পর্কের উন্নতির ক্ষেত্রেও সাহায্য করে। পরিচিত মানুষদের সঙ্গে খোলামেলা আড্ডা, একে অপরের খোঁজ-খবর নেয়া মনকে প্রশান্তি দেয়। ঘরের ভেতরে একা বসে থাকা কিংবা ফোনে ব্যস্ত থাকা থেকে অনেক বেশি ফলপ্রসূ হতে পারে এটি।
৪. মেজাজ ভালো রাখে
হাঁটার ফলে শরীরে এন্ডরফিন নামক হরমোনের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। এটি মনের মেজাজকে উজ্জীবিত করে এবং অনুভূতি উন্নত করে, তাই এটিকে “হ্যাপি হরমোন” বলা হয়। পাসেজ্জিয়াতা মানে শুধু হাঁটা নয়, এটি আপনার মনকেও প্রশান্ত করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে যখন আপনি প্রকৃতির মধ্যে থাকেন এবং বন্ধুদের সঙ্গে মজার কথাবার্তা বলেন, তখন মানসিক অবস্থাও ভালো থাকে।
কীভাবে ‘পাসেজ্জিয়াতা’ শুরু করবেন?
এই অভ্যাসের শুরু খুবই সহজ। প্রতিদিনের ব্যস্ততা থেকে একটু সময় বের করে বিকেলে হাঁটতে বেরিয়ে যান। প্রথমে একা শুরু করতে পারেন, তারপর ধীরে ধীরে বন্ধু বা পরিবারের সদস্যদেরও যুক্ত করতে পারেন। চেষ্টা করুন হাঁটার সময় কিছুক্ষণ বন্ধুদের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে। মনে রাখবেন, এখানে গতির কোনো সমস্যা নেই, আপনি যত ধীরে হাঁটবেন, ততই শরীর ও মন ভাল থাকবে।
এতসব উপকারিতা মাথায় রেখে, ‘পাসেজ্জিয়াতা’ কার্যকরভাবে আপনার দৈনন্দিন জীবনে অন্তর্ভুক্ত করুন, আর দেখুন কীভাবে এটি আপনার শারীরিক ও মানসিক সুস্থতায় পরিবর্তন আনতে পারে!
মধ্যবিত্তের জন্য স্বস্তি, কিন্তু বড় শিল্পের জন্য নেই তেমন কিছু