Saturday, February 8, 2025

মানুষের জীবন কি এতই সস্তা? কলকাতায় নিকাশি নালায় তলিয়ে গেলেন তিন সাফাইকর্মী

Share

কলকাতায় : মানুষের জীবন কি এতই সস্তা?

কলকাতা শহরের বুকে আরেকটি হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনা। লেদার কমপ্লেক্স থানা এলাকার একটি ট্যানারির নিকাশি নালা পরিষ্কার করতে গিয়ে প্রাণ হারানোর আশঙ্কায় তিন সাফাইকর্মী। মাত্র তিন দিন আগে সুপ্রিম কোর্ট ম্যানহোলে বা নিকাশি নালায় সরাসরি মানুষ নামানোর ওপর কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা যেন শুধুই কাগজে-কলমে থেকে গেল।

কীভাবে ঘটল দুর্ঘটনা?

রবিবার সকালে, কলকাতা লেদার কমপ্লেক্সের সেক্টর ৬ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট অথরিটির অধীনে চলছিল নিকাশি নালা পরিষ্কারের কাজ। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ফরজ়েম শেখ, হাসি শেখ এবং সুমন সর্দার নামের তিন সাফাইকর্মী সেখানে নেমেছিলেন। কাজ করার সময় আচমকা পাইপলাইন ফেটে যায়, এবং প্রবল স্রোতে তারা নালার গভীরে তলিয়ে যান। প্রাথমিক অনুমান, বিষাক্ত বর্জ্যের গন্ধে দমবন্ধ হয়েই তাদের মৃত্যু হয়েছে।

উদ্ধারকাজে ধীরগতি, দায় কার?

পুলিশ ও দমকল বিভাগের উদ্ধারকাজ শুরু হলেও এখনো পর্যন্ত তাঁদের মৃতদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। দড়ি বেঁধে টেনে তোলার চেষ্টা চলছে। একজন উদ্ধারকারী জানান, “অনেকদিন ধরেই এই নিকাশি নালা পরিষ্কার করা হয়নি। তাই পুরসভা থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সঠিক সরঞ্জাম ছাড়াই মানুষ নামিয়ে দেওয়া হয়।”

অন্য সাফাইকর্মীরা বলছেন, এ ধরনের কাজ করতে গেলে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা থাকা দরকার। কিন্তু বাস্তবে, এই নিয়ম মানা হয় না। সাধারণত একসঙ্গে একাধিক কর্মী নিচে নামেন না। কিন্তু প্রথমজন ওঠেননি দেখে বাকি দু’জনও নিচে নেমে যান এবং তিনজনই আটকে পড়েন।

নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও কেন মানুষ নামানো হচ্ছে?

২০১৩ সালে দেশে আইন করে ম্যানহোল ও নিকাশি নালা সাফাইয়ে সরাসরি মানুষের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, প্রয়োজন হলে সম্পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই নামাতে হবে। সুপ্রিম কোর্টও সম্প্রতি নির্দেশ দিয়েছে—

  • আগে নিশ্চিত করতে হবে, নিকাশি নালায় বিষাক্ত গ্যাস রয়েছে কি না।
  • কর্মীদের জন্য হেলমেট, গামবুট, দস্তানা ও বিশেষ প্রতিরক্ষামূলক অ্যাপ্রনের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
  • অক্সিজেন মাস্ক ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিশ্চিত করতে হবে।

কিন্তু বাস্তবে, এসবের কিছুই করা হয়নি। শুধুমাত্র সরকারি নির্দেশ দিয়েই দায়িত্ব শেষ করে দেওয়া হয়, বাস্তবায়ন নিয়ে কেউ ভাবে না। আর তার মাসুল দিতে হয় শ্রমিকদের, নিজের জীবনের বিনিময়ে।

কবে বন্ধ হবে এই মৃত্যু?

এটি নতুন ঘটনা নয়। ভারতে প্রতি বছর বহু সাফাইকর্মী এভাবেই অকালে প্রাণ হারান। অথচ, আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে এই কাজ করা সম্ভব, কিন্তু তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। এর জন্য শুধু প্রশাসন নয়, সমাজেরও এগিয়ে আসা প্রয়োজন।

এই মৃত্যুগুলো কি শুধুই পরিসংখ্যান হয়ে থাকবে, নাকি সত্যিই এর কোনো সমাধান হবে? প্রশাসন কি এবার সত্যিই কঠোর হবে, নাকি আরেকটি নির্দেশ দিয়েই দায় সেরে নেবে? উত্তর অজানা, কিন্তু নিশ্চিত যে এই তিনজনের জীবন আর কখনও ফিরে আসবে না।

মধ্যবিত্তের জন্য স্বস্তি, কিন্তু বড় শিল্পের জন্য নেই তেমন কিছু

Read more

Local News