Thursday, January 30, 2025

নারী কি ছোট পোশাক পরে বিপদ ডেকে আনেন? উদ্যোগপতির মন্তব্যে প্রতিবাদে সরব উরফি জাভেদ

Share

উদ্যোগপতির মন্তব্যে প্রতিবাদে সরব উরফি জাভেদ

নারীদের পোশাক নিয়ে বিতর্ক কোনো নতুন বিষয় নয়। বিশেষ করে যখন কোনো নারকীয় অপরাধ, যেমন ধর্ষণের ঘটনা সামনে আসে, তখন নারীর পোশাকের দিকেই আঙুল তোলা হয়। এমনই একটি বিতর্কিত মন্তব্য করে বিতর্কের কেন্দ্রে এসেছেন উদ্যোগপতি মান্নান দত্ত। তার বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন অভিনেত্রী ও মডেল উরফি জাভেদ।

উদ্যোগপতির বক্তব্য: নারীদের পোশাক আরও সচেতন হতে হবে

উদ্যোগপতি মান্নান দত্ত, যিনি একজন আত্মরক্ষা প্রশিক্ষক এবং একটি মার্শাল আর্ট অ্যাকাডেমির শাখার কর্ণধার, সম্প্রতি মন্তব্য করেন, “বিপজ্জনক রাস্তায় মেয়েরা যদি খোলামেলা পোশাক পরে হাঁটেন, তা হলে তাঁদের বিপদে পড়ার সম্ভাবনা বেশি।” তার মতে, নারীদের পরিবেশ ও পরিস্থিতি বুঝে পোশাক নির্বাচন করা উচিত।

তিনি আরও উদাহরণ দিয়ে বলেন, “যে রাস্তায় চুরি-ছিনতাই বেশি হয়, সেই রাস্তা দিয়ে কেউ যদি দামি ঘড়ি, মোবাইল বা ব্যাগভর্তি টাকা হাতে হাঁটেন, তাহলে বিপদ এড়ানো সম্ভব নয়।” একই নিয়ম নারীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য বলে তিনি দাবি করেন।

উরফি জাভেদের তীব্র প্রতিক্রিয়া

মান্নানের এই মন্তব্য চোখে পড়তেই সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদে ফেটে পড়েন উরফি জাভেদ। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “মেয়েরা কি ইচ্ছাকৃতভাবে ছোট পোশাক পরে ধর্ষণের শিকার হতে চান?” তার মতে, ধর্ষণের কারণ কখনোই পোশাক হতে পারে না। বরং সমাজের পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা এবং অপরাধীদের শাস্তি না দেওয়ার প্রবণতাই এর মূল কারণ।

উরফি আরও বলেন, “৯০ শতাংশ ধর্ষিতা তাদের ধর্ষকদের ব্যক্তিগতভাবে চিনতেন। এটি প্রমাণ করে, ধর্ষণের জন্য পোশাক নয়, বরং অপরাধীর মানসিকতাই দায়ী।”

পোশাক বনাম নিরাপত্তা: চলমান বিতর্ক

মান্নানের বক্তব্যের মতো অনেকেই মনে করেন, পরিবেশ-পরিস্থিতি বুঝে পোশাক নির্বাচন করলে বিপদ এড়ানো যায়। তবে এর বিপরীতে যুক্তি দিয়ে নারীরা বলেন, “গা ঢাকা পোশাক পরেও বোরখা পরা নারী বা চার বছরের শিশুরা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তাহলে পোশাক কখনোই মূল সমস্যা নয়।”

এই প্রসঙ্গে উরফি একটি গুরুত্বপূর্ণ তুলনা করেন। তিনি বলেন, “যদি কোনো ব্যাংকে কম নিরাপত্তারক্ষী থাকে, তাহলে কি সেটি ডাকাতদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছে? একইভাবে, পোশাক কখনোই অপরাধকে উসকে দেয় না।”

উরফির প্রশ্ন: স্বাধীনতা কি পোশাকের কারণে সীমাবদ্ধ হবে?

উরফি আরও একটি তাত্ত্বিক প্রশ্ন তোলেন, “রাস্তায় যদি খুনি ওত পেতে থাকে, তবে কি মানুষ স্বাধীনভাবে চলাফেরা করা বন্ধ করবেন?” তিনি বলেন, এমন মনোভাব নারীদের স্বাধীনতার পথে বাধা সৃষ্টি করে এবং পুরুষতান্ত্রিক সমাজের আধিপত্য বজায় রাখে।

নারীদের জন্য উরফির বার্তা

উরফি তার অনুরাগীদের, বিশেষ করে নারী অনুরাগীদের, উদ্যোগপতির মতো মানসিকতা থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, “২০২৫ সালে এসেও এমন পুরুষ প্রশিক্ষকের অস্তিত্ব থাকা সমাজের জন্য লজ্জার। নারীদের উচিত নিজেদের শক্তি এবং স্বাধীনতাকে প্রাধান্য দেওয়া, পোশাকের কারণে নিজেদের সীমাবদ্ধ না করা।”

নারী স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়ানো জরুরি

এই বিতর্ক থেকে স্পষ্ট, নারীর পোশাক নিয়ে সমাজের বিতর্কিত মন্তব্য থামানো প্রয়োজন। পোশাক নয়, বরং অপরাধীর মানসিকতা এবং শাস্তির অভাবই মূল সমস্যা। উরফি জাভেদের প্রতিবাদ সেই সামাজিক পরিবর্তনের প্রতিফলন, যেখানে নারীরা তাদের স্বাধীনতার পক্ষে সরব হচ্ছেন।

কালীঘাটের মাটি: কলকাতার বিপদ সংকেত, বহুতল হেলে পড়ছে।

Read more

Local News