Thursday, January 30, 2025

এক দিনে ৫০ লক্ষ কোটির ক্ষতি! চিনের ডিপসিক রুখে দিতে আমেরিকার বাজারে কম্পন

Share

চিনের ডিপসিক রুখে দিতে আমেরিকার বাজারে কম্পন

বিশ্বের শেয়ার বাজারে একটি নতুন বিপ্লব ঘটিয়েছে চিন। কম দামে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ‘ডিপসিক-আর১’ বাজারে আসতেই এক দিনে বিশাল ধাক্কা খেয়েছে আমেরিকার শেয়ার বাজার। এই ঘটনায় প্রায় ৬০ হাজার কোটি ডলার বা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৫০ লক্ষ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে আমেরিকার এআই চিপ প্রস্তুতকারক কোম্পানি ‘এনভিডিয়া’-র। এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যেখানে বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, অদূর ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বাজারে চিন আমেরিকাকে টেক্কা দিতে পারে।

ডিপসিক-আর১ এর আত্মপ্রকাশ এবং তার প্রভাব

২০২৫ সালের জানুয়ারির ২০ তারিখে চিনের প্রযুক্তি সংস্থা ‘ডিপসিক’ তাদের নতুন ওপেন সোর্স কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেল ‘ডিপসিক-আর১’ চালু করে। আর এই মডেলটি এর আগে বাজারে থাকা একই ধরণের প্রযুক্তির তুলনায় অনেক সস্তা এবং বেশি কার্যকরী। এর মাধ্যমে চিন কম খরচে একটি শক্তিশালী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি তৈরি করেছে, যা গত বছরের মার্কিন প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই-এর ‘চ্যাটজিপিটি’ থেকে অনেক সস্তা। এই সাশ্রয়ী খরচে তৈরি হওয়া প্রযুক্তি অনেকেই মনে করছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রতিযোগিতায় চিন খুব দ্রুত আমেরিকাকে পেছনে ফেলে দিতে পারে।

এ দিন ‘ডিপসিক-আর১’-এর আগমনেই আমেরিকার শেয়ার বাজারে তীব্র পতন শুরু হয়। রিপোর্ট অনুযায়ী, কেবলমাত্র ‘এনভিডিয়া’ কোম্পানির শেয়ার একদিনেই প্রায় ১৭ শতাংশ পড়ে যায়। এর ফলে আমেরিকার শেয়ার বাজারে একদিনে ৬০ হাজার কোটি ডলারের ক্ষতি হয়। অন্যান্য প্রযুক্তি কোম্পানির শেয়ারও ব্যাপকভাবে কমে যায়। গুগল, মাইক্রোসফট, ব্রডকমের শেয়ার প্রায় ২ থেকে ৪ শতাংশ কমে যায়।

ডিপসিকের খরচ এবং প্রতিযোগিতা

‘ডিপসিক’ সংস্থার অদূর ভবিষ্যতে এআই বাজারে আমেরিকাকে চ্যালেঞ্জ জানানোর সম্ভাবনা আরও প্রবল হয়ে উঠেছে। চিনের দাবি, তাদের আগের প্রযুক্তি ‘ডিপসিক-ভি৩’-কে তৈরি করতে মাত্র ৫৬ লক্ষ ডলার খরচ হয়েছে, যা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় পাঁচ কোটি টাকার সমান। অন্যদিকে, ওপেনএআই-এর ‘জিপিটি-৪’ তৈরিতে প্রায় ১০ কোটি ডলার খরচ হয়েছে। অর্থাৎ, চিনের সাশ্রয়ী খরচে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি তৈরি করতে পারলে, তারা শীঘ্রই এআই প্রযুক্তির বাজারে আমেরিকার একচেটিয়া আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করতে সক্ষম হবে।

চিনের ‘ডিপসিক-আর১’ অনেক দ্রুত এবং কম খরচে প্রযুক্তি উন্নয়ন করতে সক্ষম, যা মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থাগুলিকে আরও চাপের মধ্যে ফেলতে পারে।

আমেরিকার প্রতিক্রিয়া এবং ট্রাম্পের সতর্কতা

এমন পরিস্থিতির মধ্যে, আমেরিকার সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও এক গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। ট্রাম্প বলেছেন, ‘ডিপসিক’ যে ঝড় তুলেছে, তা দেখে আমেরিকার সংস্থাগুলিকে নিজেদের গতি বাড়ানো উচিত। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, আগামী দিনে আমেরিকার সামনে কঠিন প্রতিযোগিতা আসতে চলেছে। আমেরিকা যদি এখনই সঠিক পদক্ষেপ না নেয়, তবে তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বাজারে চীনের সঙ্গে টেক্কা দিতে পারবে না।

এনভিডিয়ার সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক

অন্যদিকে, বর্তমান পরিস্থিতিতে ‘এনভিডিয়া’ কোম্পানি এআই চিপ রফতানি বন্ধ করে দেওয়ার পরও ‘ডিপসিক’ কোনও সমস্যা ছাড়াই নিজের পথ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পরেও, ‘ডিপসিক’ এআই প্রযুক্তি তৈরি করে এবং এর মাধ্যমে তারা কার্যত আমেরিকাকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দিয়েছে।

উপসংহার

‘ডিপসিক-আর১’ এবং এর কম খরচে তৈরি হওয়া প্রযুক্তি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দুনিয়ায় এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। আমেরিকার প্রযুক্তি সংস্থাগুলির শেয়ার বাজারে হঠাৎ পতন এবং ট্রাম্পের সতর্কবার্তা, এই সবই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, চিনের সামনে এবার শক্তিশালী প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হবে আমেরিকাকে।

আদানি-পুত্রের বিয়ে: জাঁকজমক না কি সাদামাটা আয়োজন?

Read more

Local News