Monday, December 1, 2025

“রাস্তার নামে গোষ্ঠীবাজি নয়” – তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের কড়া বার্তা

Share

তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের কড়া বার্তা

তৃণমূল কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সাম্প্রতিক সময়ে শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে মতপার্থক্য এবং গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নতুন নয়। তবে এবার এই বিভাজন নিয়ে দলের শীর্ষ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কড়া বার্তা দিয়েছেন— কোনও গোষ্ঠী বা লবির দৌলতে দল চলবে না। দলের কর্মপদ্ধতি এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখতে একাধিক বৈঠকে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, দল চলবে কালীঘাটের নির্দেশেই। ক্যামাক স্ট্রিট বা অন্য কোনও ঠিকানা থেকে দলের পথচলা নির্ধারিত হবে না।

‘রাস্তার নামে লবি’ – কী বলতে চাইলেন মমতা?

সম্প্রতি পূর্ব মেদিনীপুর এবং মালদহের মতো জেলাগুলিতে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে ওঠে। এই প্রেক্ষিতে মমতা এবং রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী নিজে হস্তক্ষেপ করেন। বৈঠকে মমতার বার্তা ছিল, “রাস্তার নামে লবিবাজি আর চলবে না।”

প্রথমে অনেক নেতাই এই বাক্যবন্ধের অর্থ বুঝতে পারেননি। তবে পরে জানা যায়, ‘রাস্তা’ বলতে ইঙ্গিত করা হয়েছে দলের দুই প্রধান ঠিকানার মধ্যে একটি— ক্যামাক স্ট্রিট, যেখানে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতর অবস্থিত।

দলীয় স্তরে ক্যামাক স্ট্রিটের গুরুত্ব অনেক। অভিষেকের ঘনিষ্ঠদের ‘ক্যামাক স্ট্রিটের লোক’ বলে পরিচিত করা হয়। এমনকি ২০১৯ সালে দলের কাজকর্মে পেশাদারিত্ব আনার উদ্যোগকেও ‘ক্যামাক স্ট্রিট ঘরানা’ বলে উল্লেখ করা হয়। তবে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা শীর্ষ নেতৃত্বের অসন্তোষের ইঙ্গিত বহন করছে।

‘ক্যালেন্ডার-কাণ্ড’ এবং নেতৃত্বের সমীকরণ

ক্যামাক স্ট্রিটের সঙ্গে কালীঘাটের দূরত্বের আরও একটি উদাহরণ হল ‘ক্যালেন্ডার-কাণ্ড’। অভিষেকের দফতর থেকে একটি ক্যালেন্ডার পাঠানো হয়েছিল, যেখানে মমতা এবং অভিষেকের ছবি ছিল। তবে অভিষেকের ছবি তুলনায় বড় হওয়ায় রাজ্য নেতৃত্ব বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে। দ্রুত সেই ক্যালেন্ডার প্রত্যাহার করা হয় এবং নতুন নকশায় মমতার ছবি বড় করে পাঠানো হয়।

এই ঘটনা দলের অভ্যন্তরে শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে মতবিরোধের একটি বড় প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বন্ধে কঠোর বার্তা

মমতা বুঝিয়ে দিয়েছেন, দলের গঠন ও সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়া শীর্ষ নেতৃত্বের তত্ত্বাবধানে হবে এবং কোনও গোষ্ঠী বা ব্যক্তিগত প্রভাব সেখানে স্থান পাবে না। সম্প্রতি ক্যামাক স্ট্রিট ঘনিষ্ঠ কয়েকজন নেতাকে মুখপাত্রের পদ থেকে সরানো এবং প্রশাসনিক স্তরেও কিছু পরিবর্তন এরই ইঙ্গিত দেয়।

দলের ভবিষ্যৎ পথচলা

তৃণমূল কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং শীর্ষ নেতৃত্বের সমীকরণ যে এক নতুন মোড় নিচ্ছে, তা স্পষ্ট। মমতার এই বার্তা দলের শৃঙ্খলা বজায় রাখার প্রয়াস হলেও ক্যামাক স্ট্রিট এবং কালীঘাটের ‘দূরত্ব’ ভবিষ্যতে কতটা মিটবে বা বাড়বে, তা সময়ই বলে দেবে।

তবে এক বিষয় নিশ্চিত— তৃণমূলের ধরণী কালীঘাটের নির্দেশ মেনেই আবর্তিত হবে। “রাস্তা আর রাস্তা দেখাবে না।”

আদানি-পুত্রের বিয়ে: জাঁকজমক না কি সাদামাটা আয়োজন?

Read more

Local News