জাতীয় গেমস খেলতে গিয়ে অব্যবস্থার শিকার বাংলা দল
জাতীয় গেমসে অংশ নিতে যাওয়া বাংলার মহিলা খো-খো দল এবং অন্যান্য খেলোয়াড়রা রীতিমতো দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন। ৩৬ জন খেলোয়াড়ের জন্য ট্রেনে আসন বরাদ্দ ছিল মাত্র ৬টি। একই ট্রেনে যাত্রা করছিলেন বাংলার মহিলা ফুটবল দল এবং সাঁতার দলও। কিন্তু তাঁদেরও একই রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। মেঝেতে শুয়ে এবং বসে যাত্রা করেই খেলোয়াড়দের পৌঁছতে হয়েছে প্রতিযোগিতার স্থানে।
৩৭ ঘণ্টার ক্লান্তিকর ট্রেন যাত্রা
বাংলা দল শনিবার রাতে হাওড়া থেকে বাঘ এক্সপ্রেসে যাত্রা শুরু করে। রাত ১০টায় ছেড়ে সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় কাঠগোদাম পৌঁছায় ট্রেনটি। প্রায় ৩৭ ঘণ্টার দীর্ঘ ট্রেন যাত্রায় খেলোয়াড়দের চরম অসুবিধার মুখোমুখি হতে হয়। বেশির ভাগ টিকিটই ছিল ওয়েটিং লিস্টে। ফলে সবাইকে রিজার্ভড আসন দেওয়া সম্ভব হয়নি। খেলোয়াড়রা ট্রেনের মেঝেতে কম্বল পেতে বা কোনও ভাবে বসে নিজেদের যাত্রা সম্পন্ন করেছেন।
রাজ্য সরকারের আগাম চাকরির প্রতিশ্রুতি
জাতীয় গেমসে অংশগ্রহণের আগে রাজ্য সরকার খেলোয়াড়দের জন্য পদক জিতলে সুনিশ্চিত চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এটি ছিল একটি বড় উদ্যোগ, যা রাজ্যের খেলোয়াড়দের উৎসাহিত করেছিল। কিন্তু এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে গিয়েও তাঁদের এই অব্যবস্থার শিকার হতে হয়েছে। এতে রাজ্যের ক্রীড়া দফতর এবং বেঙ্গল অলিম্পিক সংস্থার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কেন এত খেলোয়াড়ের জন্য ট্রেনের যথাযথ টিকিটের ব্যবস্থা করা যায়নি, তা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে।
খেলোয়াড়দের কষ্টের গল্প
বাংলার খো-খো দলের কোচ অঘর দাস যদিও এই পরিস্থিতিকে সহজভাবে দেখার চেষ্টা করছেন। তিনি জানিয়েছেন, “প্রথম রাতে কিছুটা সমস্যা হয়েছিল। কিছু খেলোয়াড়কে মেঝেতে শুয়ে থাকতে হয়েছিল। তবে পরবর্তীতে আসনের ব্যবস্থা করা গিয়েছিল। কর্তারা সব সময় আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন। তবে এক মাস আগে টিকিট কাটার পরও কেন রিজার্ভেশন পুরোপুরি নিশ্চিত করা যায়নি, সেটাই বড় প্রশ্ন।”
তিনি আরও বলেন, “যাত্রার কষ্ট ভুলে আমরা এখন ম্যাচের দিকেই মনোযোগ দিচ্ছি। মঙ্গলবার দুপুরে আমাদের প্রথম ম্যাচ রয়েছে।”
আরও পড়ুন:
- বাংলার মহিলা ফুটবল দলের একই অবস্থা:
মহিলা ফুটবল দলের সদস্যরাও ট্রেনের ভিড়ে সমস্যায় পড়েছেন। তাঁদেরও ট্রেনের আসন না থাকায় কষ্ট করতে হয়েছে। - অলিম্পিক সংস্থার ভূমিকা:
খেলোয়াড়দের দুর্ভোগ নিয়ে বেঙ্গল অলিম্পিক সংস্থার কর্তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতার জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি কেন নেওয়া হয়নি, তা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে।
জাতীয় গেমসের গুরুত্ব এবং অব্যবস্থার প্রভাব
জাতীয় গেমস হল ভারতের অন্যতম বড় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, যেখানে প্রতিটি রাজ্যের খেলোয়াড়রা তাঁদের প্রতিভার প্রদর্শন করেন। এরকম একটি মঞ্চে বাংলার মতো ক্রীড়া শক্তিধর রাজ্যের খেলোয়াড়দের এই ধরনের অভিজ্ঞতা অত্যন্ত হতাশাজনক। খেলোয়াড়দের শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতির জন্য আরামদায়ক যাত্রার ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ভবিষ্যতে এই সমস্যা রোধে কী করা উচিত?
- পরিকল্পনার অভাব দূর করা:
বড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য আরও ভালো পরিকল্পনা এবং অগ্রিম টিকিট বুকিং নিশ্চিত করতে হবে। - নির্ধারিত বাজেট বৃদ্ধি:
খেলোয়াড়দের আরামদায়ক যাত্রার জন্য নির্ধারিত বাজেট বাড়িয়ে পর্যাপ্ত আসনের ব্যবস্থা করতে হবে। - যোগাযোগের উন্নতি:
টিকিট সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যার সমাধানে দ্রুত যোগাযোগ এবং সমন্বয় বাড়াতে হবে।
উপসংহার
বাংলার খো-খো, মহিলা ফুটবল এবং সাঁতার দলের মতো দলগুলো জাতীয় গেমসে দেশের সম্মান রক্ষায় লড়াই করছে। কিন্তু এমন অব্যবস্থার শিকার হয়ে তাঁদের পারফরম্যান্স ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। খেলোয়াড়দের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা না করতে পারা শুধু তাঁদের প্রতি অবিচারই নয়, রাজ্যের ক্রীড়া ব্যবস্থাপনার দিকেও প্রশ্নচিহ্ন তুলে দেয়। আশা করা যায়, ভবিষ্যতে এই ধরনের সমস্যার পুনরাবৃত্তি হবে না।