হেলে পড়া বাড়ি!
কলকাতা পুরসভা ও সংলগ্ন অঞ্চলে একের পর এক বাড়ি হেলে পড়ার ঘটনাগুলি নিয়ে রাজনীতির ময়দানে উত্তেজনা চরমে। শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস ঘটনার দায় এড়ানোর কৌশল নিতে গিয়ে নাগরিকদের সচেতনতার দায়িত্বে জোর দিচ্ছে। অন্যদিকে, বিরোধীরা একযোগে শাসক দলকে আক্রমণ শানিয়ে দায়বদ্ধতার প্রশ্ন তুলেছে।
রাজনৈতিক তরজা ও বিরোধীদের অভিযোগ
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী কটাক্ষ করে বলেছেন, “আগে ঐতিহ্যশালী বাড়ির কথা শুনেছি, জীর্ণ বাড়ির কথাও শুনেছি। এখন হেলে পড়া বাড়ি নতুন সংযোজন। এর জন্য মেয়র ফিরহাদ ‘হেলে পড়া’ হাকিম সম্পূর্ণ দায়ী। ভবিষ্যতে কলকাতা পুরসভার সামনে আমরা এই বিষয়ে দাঁড়াব।”
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী আরও কঠোর ভাষায় বলেন, “এই সরকার ধার নিয়ে চলছে আর শহরের ভবিষ্যৎকে বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। জলাজমি বুজিয়ে, সঠিক নিয়ম না মেনে পাঁচ ফুট রাস্তায় পাঁচতলা বাড়ি তৈরি করলেই তো এমন হবে। তার উপরে রয়েছে ‘কাটমানি’র দৌরাত্ম্য।”
কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী সরাসরি মেয়রকে আক্রমণ করে বলেন, “মেয়রকে তার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া উচিত। নোট খেয়ে সব কাজ চলছে।”
শাসকদলের প্রতিক্রিয়া ও নিজস্ব যুক্তি
তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ অবশ্য বিরোধীদের অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, “সিপিএমের আমলে শিবালিক ভেঙে পড়েছিল। তখন কোথায় ছিলেন এনারা?”
কুণাল ঘোষ আরও বলেন, “আমরা সাধারণ মানুষকে অনুরোধ করছি, বাড়ি বা ফ্ল্যাট কেনার আগে দেখে নিন জায়গাটি জলাজমি কি না। তেমন হলে পুরসভা ও পুলিশের কাছে অভিযোগ জানান।”
হেলে পড়ার পেছনের কারণ ও প্রেক্ষাপট
কলকাতার বিভিন্ন অংশে বাড়ি হেলে পড়ার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা তুলে ধরছেন নির্মাণের সময় নিয়মভঙ্গ, মাটির স্বাভাবিক অবস্থার উপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি এবং অপরিকল্পিত নগরায়ণ। জলাজমি বুজিয়ে বা অপ্রতুল রাস্তার মধ্যে উচ্চ-তলা তৈরি করায় ভবনের ভারসাম্য হারাচ্ছে।
তাছাড়া, ‘কাটমানি’ বা অবৈধ আর্থিক লেনদেনের অভিযোগও নির্মাণ মানের অবনতির একটি বড় কারণ বলে বিরোধীরা দাবি করেছে।
ভবিষ্যৎ নিয়ে নাগরিকদের শঙ্কা
নাগরিকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ ও ভয় বিরাজ করছে। অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, এই ঘটনা কি শুধুই প্রশাসনিক ব্যর্থতা, নাকি আরও গভীর কোনো গাফিলতির ফল?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়ম মেনে নির্মাণ ও জলাজমি রক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রশাসনের আরও কঠোর হওয়া উচিত। একইসঙ্গে, ক্রেতাদের সচেতনতা এবং নির্মাণকর্তাদের জবাবদিহিতাও নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
উপসংহার
হেলে পড়া বাড়ি কেবল একটি নির্মাণ ত্রুটি নয়; এটি পরিকল্পনাহীন নগরায়ণ ও প্রশাসনিক গাফিলতির প্রতিচ্ছবি। শাসক ও বিরোধীদের তরজা যতই চলুক, এই সংকটের প্রকৃত সমাধান প্রয়োজন নাগরিক সুরক্ষা ও ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে। প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ এবং জনগণের সচেতনতা—দু’টি দিকই সমান গুরুত্বপূর্ণ।
পুর গর্জনই সার, ১২৭টি অবৈধ বাড়ির মধ্যে ভাঙা হয়েছে মাত্র ২৭টি!