Monday, December 1, 2025

মুর্শিদাবাদে সুভাষচন্দ্র বসু: স্বাধীনতা সংগ্রামের অনুপ্রেরণার এক স্মরণীয় অধ্যায়মুর্শিদাবাদ ও সুভাষচন্দ্র

Share

মুর্শিদাবাদে সুভাষচন্দ্র বসু

মুর্শিদাবাদ ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ জেলা, যেখানে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের বহু উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত অঙ্কিত। সুভাষচন্দ্র বসু, যিনি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম প্রধান নেতা হিসেবে পরিচিত, তাঁর জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সময় কাটিয়েছেন মুর্শিদাবাদে। ১৯১৩-১৪ সাল নাগাদ প্রথম মুর্শিদাবাদে আসেন সুভাষচন্দ্র এবং লালবাগ ঘুরে দেখেন। এরপরেও তিনি একাধিকবার বিভিন্ন স্থানে পা রেখেছেন, আর মুর্শিদাবাদে তাঁর আগমন দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের অংশ হয়ে উঠেছে।

যতটা জানা যায়, ১৯২৯ সালের মার্চ মাসের পর থেকে ১৯৩০ সালের মধ্যে সুভাষচন্দ্র প্রথম জঙ্গিপুরে আসেন। সেই সময় তার উপস্থিতি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৩৭ সালে তিনি আবার জঙ্গিপুরে ফিরে আসেন। এখানকার রমণী মোহন স্মৃতি তোরণে মাল্যদান করেন, আর সেসময় তাকে টানা রিকশায় করে নিয়ে আসা হয়েছিল। এখানেই সরস্বতী লাইব্রেরির দক্ষিণ দিকের বারান্দায় একটি সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই সভাগুলোর মাধ্যমে সুভাষচন্দ্র তার রাজনৈতিক আদর্শ প্রচার করতেন এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামের প্রেরণা যোগাতেন।

১৯২৯ সালে সুভাষচন্দ্র প্রথম জিয়াগঞ্জে আসেন এবং তখন সেখানকার ভট্টপাড়ার অধিকারি পরিবারের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। সেখানকার সিংহ বাহিনীর মন্দিরের সামনে তাজ বাহাদুরের হলে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় হাজার হাজার মানুষ সমবেত হন এবং সুভাষচন্দ্রের বক্তৃতা শোনার জন্য জায়গায় জায়গায় ভিড় জমেছিল।

সুভাষচন্দ্রের মুর্শিদাবাদে আসার আরও এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল ১৯২৩ সালে কলকাতায় তাঁর বন্দি হওয়ার পর। পরবর্তীতে ১৯২৪ সালে তিনি বহরমপুর জেলে বন্দি হন, যেখানে রাজবন্দি হিসেবে তার অবস্থান ছিল। বহরমপুরে দেবেন্দ্রনাথ দত্তের বাড়িতে সুভাষচন্দ্র একাধিকবার রাত কাটিয়েছেন। মুর্শিদাবাদের সদর শহর বহরমপুরে তার এই যাত্রা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জন্য একটি অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছিল।

১৯৩২ সালে জেলা কংগ্রেসের সহ সম্পাদক ছত্রপতি রায় এবং শশাঙ্ক শেখর সান্যালকে সঙ্গে নিয়ে সুভাষচন্দ্র বেলডাঙায় যান। বেলডাঙার পুরাতন বাজারে হাজরাবাবুদের প্রাঙ্গণে এক মহতী সভার আয়োজন করা হয়। সুভাষচন্দ্র এই সভায় অংশগ্রহণ করে মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করেন। এছাড়াও ১৯৩৯ সালে সুভাষচন্দ্র আবার বেলডাঙায় আসেন এবং পুরাতন পুরসভার গলির কাছে রাধাপদ প্রামাণিকের বাড়িতে রাত্রিবাস করেন।

এছাড়া ১৯২৯ সালে সুভাষচন্দ্র কান্দি এলাকা সফর করেছিলেন। তখন নির্বাচনী প্রচারের জন্য তিনি কান্দিতে আসেন এবং কয়েক ঘণ্টা অবস্থান করেন। এই সময় তিনি কান্দির জনগণের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন, তাদেরকে স্বাধীনতার উদ্দেশ্যে উদ্বুদ্ধ করেন।

মুর্শিদাবাদে সুভাষচন্দ্র বসুর আগমন একটি রাজনৈতিক ঐতিহাসিক মুহূর্ত ছিল। তার রাজনৈতিক প্রচার ও আদর্শের মাধ্যমে তিনি এলাকার সাধারণ মানুষকে স্বাধীনতার সংগ্রামে যুক্ত করেছিলেন। তার যাত্রা শুধু রাজনৈতিকভাবে নয়, সাংস্কৃতিকভাবে ও ইতিহাসের দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুভাষচন্দ্র মুর্শিদাবাদে আসার সময় তার কর্মসূচি এবং জনগণের সঙ্গে তার সম্পর্ক আজও স্থানীয় ইতিহাসের অংশ হয়ে রয়েছে।

ইডেনে খেলেননি শামি, চেন্নাইয়ে কি খেলবেন? সতীর্থ আরশদীপের মন্তব্যে ধোঁয়াশা

Read more

Local News