বাংলাদেশে আইএসআই
বাংলাদেশে পাকিস্তানের সামরিক প্রতিনিধিদলের সফর এবং তাদের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। ভারতের গোয়েন্দারা আশঙ্কা করছেন, উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে সন্ত্রাস ও অশান্তি ছড়ানোর উদ্দেশ্যে এক নয়া ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা করছে আইএসআই।
আইএসআই-এর পরিকল্পনা এবং আলফা-র সঙ্গে সংযোগ
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের চট্টগ্রামে পাকিস্তানের সামরিক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ভারতের বিদ্রোহী সংগঠন আলফা (স্বাধীন)-এর কয়েকজন নেতার গোপন বৈঠকের খবর উঠে এসেছে। ভারতের গোয়েন্দারা মনে করছেন, এই বৈঠকের মাধ্যমে উত্তর-পূর্ব ভারতে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ পুনরায় সক্রিয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, আলফার নেতা পরেশ বরুয়া অতীতে উত্তর-পূর্বের জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির জন্য অস্ত্র ও প্রশিক্ষণের বন্দোবস্ত করেছিলেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব প্রশিক্ষণ বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম এলাকায় হত। কিন্তু শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় এসে সেসব জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ধ্বংস করে দেয়। এবার সম্ভবত সেই কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার পরিকল্পনা করছে আইএসআই।
পাকিস্তানের সামরিক প্রতিনিধিদলের সফর
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, পাকিস্তানের এই সামরিক প্রতিনিধিদল চট্টগ্রামের পর কক্সবাজারেও গিয়েছে। সেখানে রোহিঙ্গা জঙ্গি সংগঠন আরসা-র সঙ্গে তাদের যোগাযোগ স্থাপনের আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে, পাকিস্তানি সেনার প্রশিক্ষণে তৈরি রোহিঙ্গা জঙ্গিদের সংগঠিত করার সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে।
গোয়েন্দারা আরও জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সামরিক ও গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ের বোঝাপড়া ইতিমধ্যে প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে। এই সহযোগিতার ফলে পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের সীমান্ত সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাকিস্তানের হাতে চলে যেতে পারে। এমনকি, সমুদ্রসীমা সম্পর্কিত তথ্যও চীন এবং পাকিস্তানের মধ্যে ভাগাভাগি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে উত্তেজনা
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সীমান্ত এলাকায় নজরদারি আরও জোরদার করেছে। যে সমস্ত এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া নেই, সেসব জায়গায় অস্থায়ী বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। তবে এই পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়েছে।
জানা গেছে, সীমান্ত এলাকায় চোরাচালান রোধের নামে অনেক জায়গায় উত্তেজনা সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষত পশ্চিমবঙ্গ, অসম, মেঘালয় ও ত্রিপুরার সীমান্তে চোরাচালানের পথগুলোকে কেন্দ্র করেই অশান্তি বাড়তে পারে। ভারতের গোয়েন্দারা আশঙ্কা করছেন, আইএসআই-এর এই সফরের পরে নতুন করে জাল নোট পাচার এবং জেহাদি সংগঠনগুলিকে অর্থ জোগানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হতে পারে।
গোয়েন্দাদের উদ্বেগ
আইএসআই-এর এই ষড়যন্ত্রের নেতৃত্বে রয়েছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল আসিম মালিক। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন আইএসআই-এর ডিরেক্টর জেনারেল অ্যানালিসিস মেজর জেনারেল শহিদ আমির আফসার, যিনি চীনে সামরিক অ্যাটাশে ছিলেন এবং চীনা সেনাবাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে।
গোয়েন্দাদের মতে, এই সফর শুধুমাত্র সামরিক সহযোগিতার জন্য নয়। বরং ভারতের ‘চিকেনস নেক’ বলে পরিচিত অপরিসর জায়গাটিকে বিচ্ছিন্ন করার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা এর পেছনে কাজ করছে। এই এলাকা উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে ভারতের বাকি অংশের যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ পথ।
পাকিস্তান-বাংলাদেশ সম্পর্ক এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
পাকিস্তানের নৌবাহিনী দুই বছর অন্তর ‘আমন’ নামে সামরিক মহড়ার আয়োজন করে। এই বছর প্রথমবারের মতো এই মহড়ায় অংশ নিতে চলেছে বাংলাদেশের নৌবাহিনী। ধারণা করা হচ্ছে, পাকিস্তানের সামরিক প্রতিনিধিদলের সফরে এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে।
গোয়েন্দারা মনে করছেন, বাংলাদেশ সরকারের নীরবতা এবং পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক বোঝাপড়া ভারতের জন্য একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিশেষত, এই চুক্তির মাধ্যমে চীন ও পাকিস্তান উভয়েই ভারতের বিরুদ্ধে তাদের কৌশলগত অবস্থান আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে।
উপসংহার
পাকিস্তানের আইএসআই-এর বাংলাদেশ সফর শুধু কূটনৈতিক তৎপরতা নয়, বরং ভারতের বিরুদ্ধে একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। সীমান্ত এলাকায় চোরাচালান, জাল নোট পাচার এবং সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের পুনরুত্থান ভারত এবং বাংলাদেশের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে।
ভারতকে এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় কূটনৈতিক ও সামরিক পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি, সীমান্ত সুরক্ষা এবং গোয়েন্দা নজরদারিকে আরও জোরদার করার মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করা জরুরি।
ইডেনে খেলেননি শামি, চেন্নাইয়ে কি খেলবেন? সতীর্থ আরশদীপের মন্তব্যে ধোঁয়াশা