Monday, December 1, 2025

ধ্বংসের পথে পুনর্গঠনের স্বপ্ন: গাজায় ইজ়রায়েলের নয়া পরিকল্পনা?

Share

গাজায় ইজ়রায়েলের নয়া পরিকল্পনা

পশ্চিম এশিয়ার দীর্ঘদিনের সংঘাত এবার কি অবসানের পথে? টানা ১৫ মাসের ভয়াবহ যুদ্ধ শেষে ইজ়রায়েল এবং হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা, গাজায় কিছুটা হলেও শান্তি ফিরিয়েছে। কিন্তু এই সমঝোতা কতটা স্থায়ী হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। এই যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে কি ইজ়রায়েল-হামাস শত্রুতা চিরতরে শেষ হবে, নাকি নতুন করে সংঘাতের বীজ বপন হবে?

‘ধ্বংস এবং পুনর্গঠন’ নীতি: শান্তির নতুন দিশা?

অনেক আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকের মতে, ইজ়রায়েলের উচিত গাজায় ‘ধ্বংস এবং পুনর্গঠন’ নীতির প্রয়োগ করা। অর্থাৎ, হামাসের অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন করার পাশাপাশি গাজা পুনর্গঠনে উদ্যোগী হওয়া। এই ধারণাটি অনেকটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার সঙ্গে তুলনীয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত জার্মানি ও জাপানের পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্র যে ভূমিকা নিয়েছিল, তা আজও প্রশংসিত। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, একই ধরনের পদক্ষেপ ইজ়রায়েল গ্রহণ করলে গাজায় শান্তি স্থায়ী হতে পারে।

ইলন মাস্কের পরামর্শ: শত্রুর বিনাশ ও সমৃদ্ধি

বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্ক এই প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন। তাঁর মতে, ইজ়রায়েলকে প্রথমে হামাসের শীর্ষ নেতৃত্বকে সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করতে হবে। এরপর, দ্বিতীয় ধাপে গাজার অর্থনৈতিক ও সামাজিক পুনর্গঠনে নেতৃত্ব দিতে হবে। মাস্কের মতে, গাজায় শিক্ষা ও কর্মসংস্থান বাড়িয়ে সেখানে ইজ়রায়েলের প্রতি বিদ্বেষ কমানো সম্ভব। তাঁর যুক্তি, যদি গাজার অর্থনীতি শক্তিশালী হয় এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়, তবে সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের জনপ্রিয়তা কমতে বাধ্য।

ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি: যুদ্ধ ও পুনর্গঠনের শিক্ষা

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর মিত্রশক্তিরা জার্মানির উপর ভার্সাই চুক্তির মাধ্যমে কঠিন শর্ত আরোপ করেছিল। ফলে দেশটির অর্থনীতি ভেঙে পড়ে এবং জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটে। এর ফলশ্রুতিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিন্ন পথ অবলম্বন করেছিল। তারা জার্মানি ও জাপান পুনর্গঠনে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে। এর ফলস্বরূপ, এই দেশগুলি পরবর্তীকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র হয়ে ওঠে।

অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, গাজায় ইজ়রায়েল একই নীতি গ্রহণ করলে, হামাসের প্রতি সমর্থন হ্রাস পেতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।

গাজার বর্তমান পরিস্থিতি: পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তা

যুদ্ধবিরতির পর গাজায় এখন ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ চলছে। ইজ়রায়েলি বোমা হামলায় প্রায় পুরো গাজা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। সাধারণ মানুষ প্রিয়জনের মৃতদেহ খুঁজে বের করছেন, ধ্বংসস্তূপের নিচে। এই পুনর্গঠনে কয়েক মাস লেগে যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

চুক্তির চ্যালেঞ্জ: রাজনৈতিক মতভেদ ও ভবিষ্যৎ

যদিও যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছে, তবে উভয় পক্ষের মধ্যেই রয়েছে অসন্তোষ। ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভায় এই চুক্তি নিয়ে মতভেদ রয়েছে। অনেক নেতার মতে, গাজা থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করলে আবারও হামাস শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে।

অন্যদিকে, গাজার অনেক মানুষ এই চুক্তিকে হামাসের বিজয় হিসেবে দেখছেন। এর ফলে হামাসের প্রতি সমর্থন আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

পুনর্গঠন নীতি: শান্তি নাকি নতুন সংঘাতের সূত্রপাত?

ইজ়রায়েলের জন্য গাজার পুনর্গঠন একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ। গাজার অর্থনীতি ও শিক্ষার উন্নতি হলে সেখানে বিদ্বেষের মাত্রা কমতে পারে। তবে একইসঙ্গে, এই অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা আনতে ইজ়রায়েলকে হামাসের পাশাপাশি অন্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রতিও সতর্ক থাকতে হবে।

শেষ কথা

ইজ়রায়েল-হামাস শত্রুতা মেটাতে যুদ্ধবিরতি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে এই শান্তি কতটা দীর্ঘস্থায়ী হবে, তা নির্ভর করবে ইজ়রায়েল ও আন্তর্জাতিক মহলের দায়িত্বশীল ভূমিকার উপর। ‘ধ্বংস এবং পুনর্গঠন’-এর মাধ্যমে নতুন এক অধ্যায় শুরু হতে পারে। কিন্তু এটি সম্ভব হবে শুধুমাত্র যদি উভয় পক্ষ নিজেদের স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করে। গাজায় শান্তি স্থাপনে ইজ়রায়েলের এই নীতি কি সত্যিই কার্যকর হবে, সেটাই এখন দেখার।

এবার পাকিস্তান থেকে খুনের হুমকি কপিল শর্মাকে! আতঙ্কের ছায়া বলিউডে

Read more

Local News