Monday, December 1, 2025

জলগাঁওয়ে ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৩, আহতদের জন্য সরকারি আর্থিক সহায়তা ঘোষণা

Share

জলগাঁওয়ে ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৩

মহারাষ্ট্রের জলগাঁওয়ে ট্রেন দুর্ঘটনার ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৩। আহতদের মধ্যে কয়েক জনের অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক। দুর্ঘটনার শোকাবহ পরিবেশে মৃতদের পরিবার এবং আহতদের জন্য আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা করেছে কেন্দ্র ও মহারাষ্ট্র সরকার। এ ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ

বুধবার বিকেলে মুম্বই থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরে উত্তর মহারাষ্ট্রের জলগাঁও জেলার পরধাড়ে স্টেশনের কাছে ঘটে যায় এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। পুষ্পক এক্সপ্রেস ট্রেনটি তখন লখনউ থেকে মুম্বইয়ের দিকে যাচ্ছিল। বিপরীত দিক থেকে আসা কর্নাটক এক্সপ্রেসের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ হারান ১২ জন যাত্রী। গুরুতর আহত অবস্থায় আরও পাঁচ জনকে জলগাঁও সিভিল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজন মারা যান। বাকি চার জনের অবস্থাও এখনও গুরুতর।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, বিকেল ৫টা নাগাদ ট্রেনের মধ্যে আগুন লেগেছে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে ট্রেন থামানোর জন্য চেন টেনে দেন। ফলে ট্রেনটি থেমে যায়, এবং কিছু যাত্রী তৎক্ষণাৎ ট্রেন থেকে নেমে পড়েন। দুর্ভাগ্যবশত, সেই মুহূর্তে কর্নাটক এক্সপ্রেস দ্রুতগতিতে এসে পুষ্পক এক্সপ্রেসের যাত্রীদের উপর দিয়ে চলে যায়।

সরকারি সাহায্য এবং প্রতিক্রিয়া

এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার থেকে আর্থিক সহায়তার ঘোষণা করা হয়েছে।

  • কেন্দ্রীয় সরকারের সাহায্য: রেল মন্ত্রকের তরফে ঘোষণা করা হয়েছে, মৃতদের পরিবারের জন্য দেড় লক্ষ টাকা এবং গুরুতর আহতদের জন্য ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। যাঁরা সামান্য চোট পেয়েছেন, তাঁদের জন্য পাঁচ হাজার টাকা করে সাহায্য দেওয়া হবে।
  • মহারাষ্ট্র সরকারের সাহায্য: মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস ঘোষণা করেছেন, মৃতদের পরিবারকে পাঁচ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। আহতদের চিকিৎসার সমস্ত খরচ বহন করবে রাজ্য সরকার। ফডণবীস বর্তমানে দাভোসে ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম’-এর সম্মেলনে রয়েছেন, সেখান থেকেই এই ঘোষণা করেছেন।
  • প্রধানমন্ত্রীর শোকবার্তা: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন। তিনি লিখেছেন, “মহারাষ্ট্রের জলগাঁওয়ে ট্রেন দুর্ঘটনায় আমি গভীরভাবে মর্মাহত। মৃতদের পরিবারের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা। আহতরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন, এই কামনা করি। দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সব রকমের সাহায্য করবে সরকার।”

প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান

এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, যাঁরা ট্রেনের বাঁ দিকের দরজা দিয়ে লাফিয়েছিলেন, তাঁরা প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন। কিন্তু যাঁরা ট্রেন থেকে নামার সময় অন্য দিকে ছিলেন, তাঁদের ওপর দিয়ে কর্নাটক এক্সপ্রেস চলে যাওয়ায় মৃত্যু হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, দুর্ঘটনাটি এতটাই আকস্মিক ছিল যে যাত্রীরা কোনওভাবে আত্মরক্ষার সুযোগ পাননি। যাত্রীরা যখন নিচে নেমে ভয়ে এদিক-ওদিক ছুটছিলেন, তখনই বিপরীত দিক থেকে আসা কর্নাটক এক্সপ্রেস তাঁদের ধাক্কা মারে।

সরকারি প্রতিশ্রুতি এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার ট্রেন পরিষেবায় আরও নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। রেলমন্ত্রক জানিয়েছে, ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা রোধে রেলযাত্রীদের জন্য সচেতনতা কর্মসূচি নেওয়া হবে এবং রেল ব্যবস্থায় আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজন করা হবে।

শেষ কথা

জলগাঁওয়ের এই ট্রেন দুর্ঘটনা গোটা দেশের মানুষের হৃদয়কে ভেঙে দিয়েছে। যাত্রীদের নিরাপত্তার অভাব এবং অব্যবস্থাপনা আবারও সামনে এসেছে। সরকারের আর্থিক সাহায্য কিছুটা হলেও শোকাহত পরিবারগুলোর কষ্ট লাঘব করবে। তবে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি, যাতে ভবিষ্যতে এমন মর্মান্তিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।

এবার পাকিস্তান থেকে খুনের হুমকি কপিল শর্মাকে! আতঙ্কের ছায়া বলিউডে

Read more

Local News